আম আঁটির ভেঁপু গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

আম আঁটির ভেঁপু গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

‘আম আঁটির ভেঁপু’ গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি অপু এবং তার দিদি দুর্গার ছোটবেলার গল্প, যেখানে গ্রামীণ বাংলার নিসর্গ, দারিদ্র্য, কৌতূহল আর শৈশবের সারল্য ফুটে উঠেছে। নিচে আম আঁটির ভেঁপু গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেয়া হল।

আম আঁটির ভেঁপু গল্পের মূলভাব

অপু আর দুর্গা দু’জনেই খুব দুষ্টু, বিশেষ করে দুর্গা। সে মাঝে মাঝেই পাশের বাগান থেকে কাঁচা আম কুড়িয়ে আনে। একদিন সকালবেলা অপু আপন মনে খেলছিল, হঠাৎ দুর্গা দৌড়ে এসে তাকে ডাকল। হাতে কয়েকটা কাঁচা আম। অপু কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় পেলি?” দুর্গা হাসতে হাসতে বলল, “পটলিদের বাগানে!” অপু একটু ভয় পেয়ে বলল, “মা যদি দেখে ফেলে?” দুর্গা বলল, “মা এখনো আসেনি, তুই তাড়াতাড়ি একটু নুন আর তেল এনে দে!” অপু সাবধানে ঘর থেকে নুন আর তেল এনে দিল। দুর্গা তাড়াতাড়ি আমগুলো মেখে নিল, তারপর দু’জনে গাছের আড়ালে বসে খেতে লাগল। এমন সময় মা সর্বজয়া বাইরে থেকে ডাক দিলেন, “দুগ্‌গা! ও দুগ্‌গা!” দুর্গা চুপ করে রইল, কিন্তু মা আবার ডাক দিলেন। এবার দুর্গা মুখ মুছে ভেতরে ঢুকল, যেন কিছুই হয়নি। মা সন্দেহ করে জিজ্ঞেস করলেন, “তোর মুখ এভাবে টক হয়ে আছে কেন?” দুর্গা মিচকে হেসে বলল, “এই তো, কাঁঠালতলায় ছিলাম!” অপুও তখন পাশে এসে দাঁড়াল। মা কিছু বলার আগেই অন্য একজন এসে পড়লেন, তাই কথা সেখানেই থেমে গেল। বিকেলের দিকে বাবা বাড়ি ফিরলেন। খেতে বসে বললেন, “আজ দশঘরায় এক মাতবর লোকের সঙ্গে দেখা হলো, তারা বলল, আমাদের কাছে গুরু ধরতে চায়!” মা অবাক হয়ে বললেন, “তাহলে মন্দ কী? দাও না মন্ত্র!” বাবা আস্তে করে বললেন, “ওরা সদ্‌গোপ!” মা চুপ করে রইলেন, যেন বুঝে গেলেন, ব্যাপারটা অত সহজ নয়। এদিকে অপু আর দুর্গা মনে মনে ঠিক করল, কাল আবার বাগানে যাবে!

আম আঁটির ভেঁপু গল্পের বিষয়বস্তু

সকালবেলা, রোদ একটু একটু করে উঠছে। ছোট্ট অপু উঠোনে বসে নিজের খেলার বাক্স খুলে বসেছে। তার এই বাক্সটাই যেন তার ছোট্ট রাজ্য! সেখানে কাঠের ঘোড়া, পুরনো একটা বাঁশি, কয়েকটা কড়ি, শুকনো ফল আর কিছু ভাঙা খাপরার টুকরো রয়েছে। সে আপন মনে সেগুলো সাজিয়ে-গুজিয়ে খেলা করছে।

এমন সময়, কাঁঠালগাছের নিচ থেকে তার দিদি, দুর্গা, ডাক দেয়, “অপু, ও অপু!” অপু তাড়াতাড়ি তার কড়িগুলো লুকিয়ে ফেলে। দিদির হাতে একটা নারকেলের মালা আর কয়েকটা কচি আম। দুর্গা চুপি চুপি জানতে চায়, “মা কি এখনো ঘাট থেকে ফিরেছে?” অপু মাথা নেড়ে জানায়, “না!”

দুর্গা তখন হাসি মুখে বলে, “তাহলে তুই একটু তেল আর নুন নিয়ে আয়, আম জারাবো!” অপু অবাক হয়ে জানতে চায়, “কোথায় পেলি রে?” দুর্গা চোখ টিপে বলে, “পটলদের বাগান থেকে পেয়েছি।” অপু প্রথমে ভয় পায়—মা যদি জানতে পারে, খুব বকবে! কিন্তু দিদির আনন্দ দেখে সে রাজি হয়ে যায়। সে ঘর থেকে চুপি চুপি তেল আর নুন নিয়ে আসে, আর দুজনে মিলে আম মেখে লুকিয়ে লুকিয়ে খেতে বসে।

ঠিক তখনই মা, সর্বজয়া, ঘর থেকে বাইরে এসে ডাক দেন, “দুগ্‌গা, ও দুগ্‌গা!” দুর্গা বুঝতে পারে, বিপদ আসন্ন! সে দ্রুত আম মুখে পুরে ফেলল আর চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। মা যদি টের পেয়ে যায়, তাহলে কিন্তু আজ খুব বকা খেতে হবে!

দুপুরে বাবা, হরিহর, কাজের খোঁজ নিয়ে বাড়ি ফেরে। সে গাঁয়ের এক বড়লোকের বাড়ি পুরোহিতের কাজ পাবে বলে আশা করছে। মা সর্বজয়া আশায় বুক বাঁধে, “তাহলে আমাদের দারিদ্র্য একটু কমবে!” কিন্তু বাবা ভাবে, তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। মা আর বাবার কথাবার্তা শুনতে শুনতে দুর্গা লুকিয়ে বাইরে এসে বসে। তার আঁচলে ছোট্ট কয়েকটা রড়াফলের বিচি বাঁধা আছে। সে একে একে বিচিগুলো হাতে নেয়, ভাবে—”এগুলো অপুকে দেবো, বাকিগুলো পুতুলের বাক্সে রেখে দেবো!”

এটাই অপু আর দুর্গার ছোট ছোট আনন্দ, লুকোচুরি আর সারল্যে ভরা শৈশব। দারিদ্র্যের মধ্যেও তারা নিজেদের মতো করে খুশি খুঁজে নেয়।

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top