আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার বিষয়বস্তু ও ব্যাখ্যা

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার বিষয়বস্তু ও ব্যাখ্যা

শঙ্খ ঘোষের “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতায় কবি যুদ্ধ, ধ্বংস এবং মানবিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাওয়া মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে চিত্রিত করেছেন। নিচে আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার বিষয়বস্তু ও ব্যাখ্যা দেওয়া হল।

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার বিষয়বস্তু

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতায় কবি এক ভয়ানক যুদ্ধ বা ধ্বংসের পরিস্থিতির কথা বলেছেন। চারদিকে শুধু বিপদ আর বিপদ—ডান দিকে মাটি ধসে পড়ছে, বাঁ দিকে গভীর গিরিখাদ, মাথার ওপর বোমারু বিমান উড়ছে, আর পায়ের নিচে বরফের মতো ঠাণ্ডা, শক্ত বাঁধ। মানুষের কোনো পথ খোলা নেই, ঘরবাড়ি সব উড়ে গেছে। শিশুরা মারা পড়েছে, তাদের লাশ চারদিকে ছড়িয়ে আছে। এই অবস্থায় কবি ভাবছেন, আমরা কি এভাবেই মরে যাব? আমাদের তো কোনো পথই আর খোলা নেই।

কবি আরও বলছেন, আমাদের কোনো ইতিহাস নেই, বা যদি থেকে থাকে, সেটাও বিকৃত ইতিহাস। আমরা সব সময় মুখ ঢেকে চলি, সারাবছর ভিখারির মতো জীবন কাটাই। পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে, কিংবা হয়তো মরে গেছে—কে জানে! আমরা তো শুধু দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াই, কেউ আমাদের কথা শোনে না।

কিন্তু কবি শেষ পর্যন্ত হতাশ হননি। তিনি বলছেন, কিছুই যদি না-ও থাকে, তবুও আমরা কয়েকজন তো আছি। তাই তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন—আসো, আমরা আরও কাছাকাছি আসি, হাত ধরে থাকি, একসাথে বেঁধে থাকি। তিনি বলতে চেয়েছেন, যতই কঠিন সময় হোক না কেন, আমরা যদি একসাথে থাকি, তাহলে কোনো বিপদই আমাদের হারাতে পারবে না।

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার ব্যাখ্যা

কবিতার লাইনব্যাখ্যা
“আমাদের ডান পাশে ধ্বস, আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ”কবি বলছেন, আমাদের ডান দিকে মাটি ধসে পড়ছে, আর বাঁ দিকে গভীর গিরিখাদ। মানে, আমরা এমন এক জায়গায় আটকে আছি, যেখান থেকে বেরোনোর কোনো পথ নেই। চারদিকেই শুধু বিপদ।
“আমাদের মাথায় বোমারু, পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ”আমাদের মাথার ওপর বোমারু বিমান উড়ছে, মানে আকাশ থেকেও বিপদ। আর পায়ের নিচে বরফের মতো ঠাণ্ডা, শক্ত বাঁধ। এখানে কবি বলছেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে বিপদে ঘেরা—উপরে, নিচে, ডানে, বাঁয়ে সব দিকেই শত্রু বা বিপদ।
“আমাদের পথ নেই কোনো, আমাদের ঘর গেছে উড়ে”আমাদের কোনো পথ খোলা নেই, যেদিকেই তাকাই, সব দিক বন্ধ। আমাদের ঘরবাড়ি সব ধ্বংস হয়ে গেছে, উড়ে গেছে। মানে, আমরা গৃহহারা, আশ্রয়হারা।
“আমাদের শিশুদের শব, ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে”আমাদের শিশুরা মারা গেছে, তাদের লাশ চারদিকে ছড়িয়ে আছে। এখানে কবি খুব মর্মান্তিক দৃশ্য এঁকেছেন—যুদ্ধ বা ধ্বংসের সময় শিশুরাও রেহাই পায় না।
“আমরাও তবে এইভাবে, এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?”কবি ভাবছেন, আমরা কি এভাবেই মরে যাব? এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে আমাদের কি কোনো আশা নেই? আমরা কি বাঁচার জন্য লড়াই করব না?
“আমাদের পথ নেই আর, আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”আমাদের কোনো পথ খোলা নেই, কিন্তু কবি বলছেন, আসো, আমরা একসাথে থাকি, একে অপরকে আঁকড়ে ধরি। সংঘবদ্ধ হয়ে থাকলেই আমরা এই বিপদ থেকে বেরোতে পারব।
“আমাদের ইতিহাস নেই, অথবা এমনই ইতিহাস”কবি বলছেন, আমাদের কোনো ইতিহাস নেই, বা যদি থেকে থাকে, সেটা বিকৃত ইতিহাস। মানে, আমাদের কথা, আমাদের সংগ্রামের কথা ইতিহাসে লেখা হয়নি।
“আমাদের চোখমুখ ঢাকা, আমরা ভিখারি বারোমাস”আমরা সব সময় মুখ ঢেকে চলি, লজ্জায় বা ভয়ে। আমরা সারাবছর ভিখারির মতো জীবন কাটাই, কোনো আশ্রয় বা সম্মান নেই আমাদের।
“পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে, পৃথিবী হয়তো গেছে মরে”কবি বলছেন, পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে, কিংবা হয়তো মরে গেছে। কেউ জানে না। আমরা তো শুধু দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াই, কেউ আমাদের কথা শোনে না।
“আমাদের কথা কে-বা জানে, আমরা ফিরেছি দোরে দোরে”আমাদের কথা কেউ জানে না, আমরা শুধু দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াই, কেউ আমাদের সাহায্য করে না। আমরা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত।
“কিছুই কোথাও যদি নেই, তবু তো কজন আছি বাকি”কবি বলছেন, কিছুই যদি না-ও থাকে, তবুও আমরা কয়েকজন তো আছি। মানে, আমাদের মধ্যে এখনও কিছু মানুষ বেঁচে আছে, যারা লড়াই করতে পারে।
 “আয় আরো হাতে হাত রেখে, আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”কবি শেষ পর্যন্ত আশার কথা বলছেন। তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন—আসো, আমরা একে অপরের হাত ধরি, একসাথে থাকি, সংঘবদ্ধ হই। একসাথে থাকলেই আমরা এই বিপদ থেকে বেরোতে পারব।

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top