আশা কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা – সিকানদার আবু জাফর

আশা কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা - সিকানদার আবু জাফর

সিকানদার আবু জাফরের “আশা” কবিতাটির মূল বিষয় হলো একটি আদর্শ জগতের স্বপ্ন, যেখানে মানুষ সহজ-সরল জীবনযাপন করে। নিচে আশা কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেয়া হল।

আশা কবিতার মূলভাব

কবি একটি স্বপ্নের জগতের কথা বলছেন, যেখানে তিনি হারিয়ে যেতে চান। এই জগতে মানুষ খুব সাধারণ জীবনযাপন করে। তাদের ঘরবাড়ি জীর্ণ, বেড়া ভাঙা, কিন্তু তারা নির্ভাবনায় ঘুমাতে পারে। তাদের মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই, তারা শান্তিতে থাকে। এই জগতে মানুষ সোনা-রূপা বা সম্পদের পেছনে ছোটে না। তারা টাকা-পয়সা জমিয়ে পাহাড় গড়ে না। বিত্ত-সুখের জন্য তারা তাদের জীবনকে জটিল করে না বা আয়ু কমায় না। তারা ছোট ছোট জিনিসে তুষ্ট থাকে এবং সহজ জীবনযাপন করে।

এই জগতে এমন মানুষও আছে যারা সারাদিন পরিশ্রম করে, কিন্তু তাদের একবেলার খাবারও জোটে না। তবুও তাদের মনে কোনো হতাশা বা দীনতা নেই। তারা দরিদ্র, কিন্তু তাদের মনে কোনো লোভ বা সংশয় নেই। তারা জীবনের ছোট ছোট আনন্দে খুশি থাকে। এই জগতে মানুষ একে অপরকে ভালোবাসে। তারা প্রতিবেশীর দুঃখে পাশে দাঁড়ায় এবং অন্ধকারে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করে। কবি এইরকম একটি জগতের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং মানবিকতা রয়েছে।

আশা কবিতার ব্যাখ্যা

কবিতার লাইনব্যাখ্যা
“আমি সেই জগতে হারিয়ে যেতে চাই,”কবি এমন একটি জগতের কথা বলছেন, যেখানে তিনি হারিয়ে যেতে চান। এই জগতটি তার স্বপ্নের জগত, যেখানে মানুষ শান্তি ও সুখে বসবাস করে।
“যেথায় গভীর-নিশুত রাতে”যেখানে রাত খুব গভীর ও শান্ত। এখানে কোনো হৈচৈ বা অশান্তি নেই।
“জীর্ণ বেড়ার ঘরে”যে জগতে মানুষের ঘরবাড়ি খুব সাধারণ, এমনকি জীর্ণ। কিন্তু তারা এতে খুশি, কারণ তাদের মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই।
“নির্ভাবনায় মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে ভাই।”যে জগতে মানুষ নির্ভাবনায় ঘুমাতে পারে। তাদের মনে কোনো চিন্তা বা দুশ্চিন্তা নেই, তারা শান্তিতে থাকে।
 “যেথায় লোকে সোনা-রূপায় পাহাড় জমায় না,”যেখানে মানুষ সোনা-রূপা বা সম্পদের পেছনে ছোটে না। তারা টাকা-পয়সা জমিয়ে পাহাড় গড়ে না।
“বিত্ত-সুখের দুর্ভাবনায় আয়ু কমায় না;”যেখানে মানুষ বিত্ত-সুখের জন্য তাদের জীবনকে জটিল করে না বা আয়ু কমায় না। তারা সম্পদের লোভে জীবন নষ্ট করে না।
“যেথায় লোকে তুচ্ছ নিয়ে তুষ্ট থাকে ভাই।”যে জগতে মানুষ ছোট ছোট জিনিসে তুষ্ট থাকে। তারা বড় বড় স্বপ্ন না দেখে, জীবনের ছোট ছোট আনন্দে খুশি থাকে।
“সারা দিনের পরিশ্রমেও পায় না যারা খুঁজে”যেখানে এমন মানুষও আছে যারা সারাদিন পরিশ্রম করে, কিন্তু তাদের একবেলার খাবারও জোটে না।
“একটি দিনের আহার্য-সঞ্চয়,”এই মানুষগুলো দিনের পর দিন খেটেও তাদের প্রয়োজনীয় খাবার জোগাড় করতে পারে না।
“তবু যাদের মনের কোণে নেই দুরাশা গ্লানি,”এই মানুষগুলো দরিদ্র, কিন্তু তাদের মনে কোনো হতাশা বা দুঃখ নেই। তারা জীবনের প্রতি আশাবাদী।
“নেই দীনতা, নেই কোনো সংশয়।”তাদের মনে কোনো দীনতা বা সংশয় নেই। তারা দরিদ্র হলেও মানসিকভাবে শক্তিশালী।
“যেথায় মানুষ মানুষেরে বাসতে পারে ভালো”যেখানে জগতে মানুষ একে অপরকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে সহমর্মিতা ও ভালোবাসা রয়েছে।
“প্রতিবেশীর আঁধার ঘরে জ্বালতে পারে আলো,”যে জগতে মানুষ প্রতিবেশীর দুঃখে পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের সাহায্য করে। তারা অন্ধকারে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করে।
“সেই জগতের কান্না-হাসির অন্তরালে ভাই”যেখানে মানুষের জীবন সহজ-সরল। তাদের জীবনে কান্না-হাসি আছে, কিন্তু তা গভীর ও অর্থপূর্ণ।
“আমি হারিয়ে যেতে চাই।”কবি এইরকম একটি জগতে হারিয়ে যেতে চান, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা রয়েছে।

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top