একুশের গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু – জহির রায়হান

একুশের গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু - জহির রায়হান

জহির রায়হানের “একুশের গল্প” যা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা হয়েছে। তপু নামের একটি চরিত্রের মাধ্যমে লেখক ভাষা আন্দোলনের ত্যাগ ও সংগ্রামকে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিচে একুশের গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেয়া হল।

একুশের গল্পের মূলভাব

জহির রায়হানের “একুশের গল্প” বাংলা ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা একটি আবেগঘন গল্প। গল্পের মূল চরিত্র তপু, একজন তরুণ ছাত্র, যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। একদিন মিছিলের সময় পুলিশের গুলিতে তপু মারা যায়, যা তার বন্ধু, পরিবার এবং স্ত্রী রেণুর জীবনে গভীর শোকের ছাপ ফেলে। চার বছর পর, তপুর বন্ধুরা হঠাৎ তার কঙ্কাল আবিষ্কার করে এবং বুঝতে পারে যে এটি তপুর দেহ। এই আবিষ্কার তাদের মনে আবারও তপুর স্মৃতি জাগিয়ে তোলে এবং তারা ভাষা আন্দোলনের সময় তপুর ত্যাগ ও ভালোবাসাকে স্মরণ করে। গল্পটি বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির সংগ্রাম, ত্যাগ এবং আবেগকে গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলে।

একুশের গল্পের মূল বিষয়বস্তু

গল্পটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়কার। তখন পাকিস্তান সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল, কিন্তু বাংলা ভাষাভাষী মানুষরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল।

গল্পের মূল চরিত্র তপু। সে একজন তরুণ ছাত্র, যে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। তপু খুব হাসিখুশি, গল্প বলা এবং বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটানো তার পছন্দের কাজ। তার একটি ছোট্ট পরিবার আছে—তার মা এবং স্ত্রী রেণু। রেণু তপুকে খুব ভালোবাসে এবং তার নিরাপত্তা নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকে।

একদিন ভাষা আন্দোলনের একটি বড় মিছিলে তপু অংশ নেয়। রেণু তপুকে বাড়ি ফিরে আসতে বলে, কিন্তু তপু বলে, “আমি যেতে পারব না, এটা আমার দায়িত্ব।” মিছিলের সময় পুলিশ গুলি চালায় এবং তপু সেই গুলিতে মারা যায়। তার মাথায় গুলি লাগে এবং সে当场 মৃত্যুবরণ করে। তপুর মৃত্যু তার বন্ধু, পরিবার এবং স্ত্রী রেণুর জীবনে গভীর শোকের ছায়া ফেলে।

তপুর মৃত্যুর পর তার বন্ধুরা (গল্পের কথক এবং রাহাত) এবং পরিবার তার শোকে কাতর হয়ে পড়ে। রেণু তপুর জিনিসপত্র নিয়ে চলে যায় এবং আর কখনো তাদের সাথে কথা বলে না। তপুর স্মৃতি তাদের মন থেকে মুছে যায় না।

তপুর মৃত্যুর চার বছর পর, হঠাৎ করে তার বন্ধুরা তপুর কঙ্কাল আবিষ্কার করে। তারা দেখে যে কঙ্কালের কপালে গুলির চিহ্ন আছে এবং বাঁ পা একটু ছোট, যা তপুর শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। এই আবিষ্কার তাদের মনে আবারও তপুর স্মৃতি জাগিয়ে তোলে এবং তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারে যে এই কঙ্কাল তপুর।

তপুর মা এবং রেণুর খোঁজ করে তারা জানতে পারে যে তপুর মা মারা গেছেন এবং রেণু অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছে। এই খবর শুনে তারা আরও বেশি ভেঙে পড়ে।

গল্পের শেষে তপুর বন্ধুরা তার কঙ্কাল দেখে আবারও সেই দিনের কথা মনে করে, যখন তপু তাদের সাথে হাসি-খুশি সময় কাটাত। তারা তপুর ত্যাগ এবং ভাষা আন্দোলনের জন্য তার ভালোবাসাকে স্মরণ করে। গল্পটি শেষ হয় তপুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে।

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top