?> কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা - Ena School

কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

মাইকেল মধুসূদন দত্তের “কপোতাক্ষ নদ” কবিতাটি মূলত তার শৈশবের স্মৃতি আর মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসার এক অনন্য প্রকাশ। নিচে কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেয়া হল।

কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব

এই কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা বলেছেন। কবি জন্মেছিলেন বাংলাদেশের যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে, যেখানে কপোতাক্ষ নদ বয়ে গেছে। শৈশবে তিনি এই নদের তীরে প্রকৃতির মাঝে বড় হয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রবাসে (ফ্রান্সে) থাকাকালীন সময়ে তার জন্মভূমি এবং কপোতাক্ষ নদের কথা ভাবেন। কবি বলেন, কপোতাক্ষ নদ সবসময় তার মনে জাগ্রত থাকে। তিনি একাকীত্বে বসে এই নদের কথা ভাবেন এবং তার কলকল ধ্বনি শুনতে পান, যা যেন মায়ামন্ত্রের মতো তার কানে বাজে। এই ধ্বনি তার হৃদয়কে শান্ত করে, যদিও তা এক ধরনের ভ্রান্তির ছলনা মাত্র। তিনি বহু দেশে বহু নদী দেখেছেন, কিন্তু কোথাও তার স্নেহের তৃষ্ণা মেটেনি। কপোতাক্ষ নদকে তিনি তার জন্মভূমির স্তন থেকে প্রবাহিত দুগ্ধস্রোতের মতো দেখেন, যা তার হৃদয়কে তৃপ্ত করে। কবি আরও প্রশ্ন করেন, তিনি আর কখনও এই নদকে দেখতে পাবেন কিনা। তিনি নদীকে অনুরোধ করেন যে, সে যেন সাগরে গিয়ে মিলিত হওয়ার আগে বঙ্গদেশের মানুষের কানে তার নাম পৌঁছে দেয়।

কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা

কবিতার লাইনব্যাখ্যা
“সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে।”কবি বলছেন, হে কপোতাক্ষ নদ, তুমি সবসময় আমার মনে জাগ্রত থাকো। তোমার কথা আমি সবসময় স্মরণ করি।
“সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;”কবি একাকীত্বে বসে সবসময় কপোতাক্ষ নদের কথা ভাবেন। তিনি নির্জনে বসে এই নদের স্মৃতি মনে করেন।
“সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে”কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি কবির কানে মায়ামন্ত্রের মতো শোনায়। এই ধ্বনি তার হৃদয়কে শান্ত করে।
“জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।”কবি বলছেন, এই ধ্বনি তার কানে মিষ্টি লাগে, যদিও তা এক ধরনের ভ্রান্তি বা মায়া মাত্র। এই ধ্বনি তাকে শান্তি দেয়।
“বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,”কবি বলছেন, তিনি অনেক দেশে অনেক নদী দেখেছেন। কিন্তু কোথাও তার স্নেহের তৃষ্ণা মেটেনি।
“কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?”কবি প্রশ্ন করছেন, কোন নদীর জলে তার স্নেহের তৃষ্ণা মিটবে? তার মনের তৃষ্ণা শুধু কপোতাক্ষ নদের জলে মিটে।
“দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।”কবি কপোতাক্ষ নদকে তার জন্মভূমির স্তন থেকে প্রবাহিত দুগ্ধস্রোতের মতো দেখেন। এই নদ তার হৃদয়কে তৃপ্ত করে।
“আর কি হে হবে দেখা? যত দিন যাবে,”কবি প্রশ্ন করছেন, তিনি আর কখনও এই নদকে দেখতে পাবেন কিনা। দিন যত যায়, তার এই আশঙ্কা বাড়ে।
“প্রজারূপে রাজারূপ সাগরেরে দিতে”কবি বলছেন, কপোতাক্ষ নদ সাগরে গিয়ে মিলিত হবে, যেমন প্রজা রাজাকে কর দেয়। নদীও সাগরকে জলরূপ কর দেবে।
“বারি-রূপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে”কবি নদীকে অনুরোধ করছেন, সে যেন সাগরে গিয়ে মিলিত হওয়ার আগে বঙ্গদেশের মানুষের কানে তার নাম পৌঁছে দেয়।
“বঙ্গজ জনের কানে, সখে, সখা-রীতে”কবি বলছেন, কপোতাক্ষ নদ যেন বঙ্গদেশের মানুষের কানে তার নাম পৌঁছে দেয়, বন্ধুর মতো স্নেহের সাথে।
“নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে”কবি প্রবাসে বসে কপোতাক্ষ নদের নাম স্মরণ করেন এবং প্রেমের আবেগে মগ্ন হন।
“লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে।”কবি আশা প্রকাশ করেন, কপোতাক্ষ নদের নাম বঙ্গদেশের সংগীতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুনঃ বন্দনা কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা – শাহ মুহাম্মদ সগীর

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top