জিদ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু – জসীমউদ্দীন

জিদ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু - জসীমউদ্দীন

জসীমউদ্দীনের ‘জিদ’ গল্পটি মানুষের জিদ, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং জীবনযুদ্ধের একটি সরস চিত্র তুলে ধরে। গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা ও হাস্যরসে গল্পটি পাঠককে হাসিতে ভাসিয়ে দেয়। নিচে জিদ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

জিদ গল্পের মূলভাব

জসীমউদ্দীনের ‘জিদ’ গল্পটি একটি দরিদ্র তাঁতি পরিবারকে নিয়ে, যেখানে তাঁতি এবং তার বউ খুবই গরিব জীবনযাপন করে। অতীতে তাঁতির হাতে বোনা শাড়ির চাহিদা ছিল, কিন্তু বিদেশি কাপড়ের আগমনে তাদের ব্যবসা ভেঙে পড়ে। একদিন বউ মাছ খাওয়ার জন্য জিদ ধরে, এবং তাঁতি শেষ পর্যন্ত তিনটি ছোট মাছ কিনে আনে। মাছ রান্না করার পর, কে কতটা মাছ খাবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক বেধে যায়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যে আগে কথা বলবে, সে শুধু একটা মাছ খাবে। তারা দুজনেই চুপ করে শুয়ে থাকে, দিনের পর দিন। পাড়ার লোকেরা তাদের মৃত ভেবে কবর দিতে আসে। কবরে মাটি পড়ার সময় তাঁতি হঠাৎ বলে ওঠে, “তুই দুইটা খা, আমি একটা খাব!” সবাই ভয়ে পালায়, এবং তাঁতি ও তাঁর বউ হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে মাছ ভাগ করে খায়।

জিদ গল্পের বিষয়বস্তু

জসীমউদ্দীনের ‘জিদ’ গল্পটি একটি দরিদ্র তাঁতি পরিবারকে নিয়ে, যেখানে তাঁতি এবং তার বউ খুবই গরিব জীবনযাপন করে। তাদের অতীত ছিল সমৃদ্ধ, যখন তাঁতির হাতে বোনা শাড়ির চাহিদা ছিল এবং রাজা-বাদশাহরাও তাদের শাড়ি কিনতে আসত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে বিদেশি কাপড়ের আগমন এবং কলের কাপড়ের প্রভাবে তাঁতির ব্যবসা ভেঙে পড়ে। এখন তারা খুবই দরিদ্র জীবনযাপন করে, কখনো খেতে পায়, কখনো না পায়।

গল্পের মূল ঘটনা শুরু হয় যখন তাঁতির বউ মাছ খাওয়ার জন্য জিদ ধরে। সে তাঁতিকে বলে, “তোমার হাতে পড়ে আমি কখনো ভালো খেতে পাইনি। আজ হাটে গিয়ে ভালো করে মাছ কিনে আনো।” তাঁতি প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে মাছ কিনে আনবে। কিন্তু এক হাটে যায়, দুই হাটে যায়, তবুও মাছ কিনে আনে না। শেষ পর্যন্ত একদিন তাঁর বউ খুব রাগ করে তাঁতিকে বলল, “আজ যদি মাছ না আনো, তাহলে আমি আর তোমার জন্য চরকা কাটব না, সুতা কাটব না। শুধু শাকভাত খেয়ে খেয়ে আমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।”

তাঁতি তখন তার শেষ সঞ্চয়—একটি ঘষা পয়সা—নিয়ে হাটে যায় এবং অনেক কষ্টে তিনটি ছোট মাছ কিনে আনে। মাছ দেখে তাঁর বউ খুব খুশি হয় এবং মাছ রান্না করে। কিন্তু এবার সমস্যা হলো, তিনটি মাছ নিয়ে কে কতটা খাবে? তাঁতি বলে, “আমি দুইটা মাছ খাব, তুমি একটা খাবে।” কিন্তু বউ বলে, “না, আমিই দুইটা খাব।” এই নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক বেধে যায়। তর্ক এতটাই বেড়ে যায় যে তারা শেষে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা চুপ করে শুয়ে থাকবে। যে আগে কথা বলবে, সে শুধু একটা মাছ খাবে।

তারা দুজনেই চুপ করে শুয়ে থাকে। দিন যায়, রাত যায়, কিন্তু কেউ কথা বলে না। পাড়ার লোকেরা তাদের না দেখে চিন্তিত হয় এবং তাদের বাড়িতে যায়। দরজা বন্ধ পেয়ে তারা ভেঙে ঘরে ঢোকে এবং দেখে তাঁতি ও তাঁর বউ শুয়ে আছে, নড়াচড়া করছে না। সবাই ভাবে তারা মারা গেছে। তখন গ্রামের লোকেরা তাদের গোসল করিয়ে, কাফন পরিয়ে কবর দিতে নিয়ে যায়।

কবরে যখন মাটি পড়তে শুরু করে, তখন হঠাৎ তাঁতি লাফিয়ে বলে ওঠে, “তুই দুইটা খা, আমি একটা খাব!” এই কথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে যায়, ভাবে তারা ভূত হয়ে গেছে। মোল্লা সাহেব এবং অন্যরা ভয়ে দৌড়ে পালায়। তাঁতি এবং তাঁর বউ তখন হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে যায় এবং শেষ পর্যন্ত মাছ ভাগ করে খায়।

আরও পড়ুনঃ তোতা কাহিনী গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top