তোতা কাহিনী গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

তোতা কাহিনী গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তোতা কাহিনী’ একটি চমৎকার রূপকধর্মী গল্প, যা শিক্ষা, শাসনব্যবস্থা এবং স্বাধীনতার মূল্য নিয়ে গভীর বক্তব্য তুলে ধরে। নিচে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তোতা কাহিনী গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেয়া হল।

তোতা কাহিনী গল্পের মূলভাব

একটি পাখি বনে স্বাধীনভাবে বাস করত, গান গাইত এবং উড়ে বেড়াত। কিন্তু রাজা মনে করলেন, পাখিটা কোনো নিয়ম-কানুন জানে না, তাই তাকে শিক্ষা দিতে হবে। রাজার ভাগ্নেরা পাখিটাকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব নিল। পণ্ডিতরা বললেন, পাখিটাকে একটি দামি খাঁচায় রাখতে হবে এবং বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে। সোনার খাঁচা তৈরি করা হলো, এবং পাখিটাকে জোর করে বইয়ের পাতা খাওয়ানো হলো। পাখিটা আর গান গাইতে পারল না, উড়তেও পারল না। দিনে দিনে পাখিটা অসুস্থ হয়ে পড়ল এবং শেষ পর্যন্ত মারা গেল। গল্পটি শিক্ষা ও শাসনব্যবস্থার নামে স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করার একটি রূপক চিত্র। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃত শিক্ষা হলো স্বাধীনভাবে বাঁচা এবং নিজের মতো করে চিন্তা করা।

তোতা কাহিনী গল্পের বিষয়বস্তু

একটা পাখি ছিল। সে খুব স্বাধীনভাবে বনে বাস করত, গান গাইত, উড়ে বেড়াত। কিন্তু সে কোনো নিয়ম-কানুন মানত না, শাস্ত্র পড়ত না। রাজা দেখলেন, এই পাখি তো কোনো কাজের না! বনের ফল খেয়ে রাজ্যের ফলের বাজারে লোকসান ঘটাচ্ছে। রাজা ভাবলেন, পাখিটাকে শিক্ষা দিতে হবে।

রাজার ভাগ্নেদের দায়িত্ব পড়ল পাখিটাকে শিক্ষা দেওয়ার। পণ্ডিতরা বললেন, পাখিটা মূর্খ কারণ তার বাসা খড়কুটো দিয়ে তৈরি। ভালো শিক্ষার জন্য দরকার একটা দামি খাঁচা। সোনার খাঁচা তৈরি হলো, সেটা দেখতে এতই সুন্দর যে সবাই মুগ্ধ। কিন্তু পাখিটা তো খাঁচায় বন্দী!

তারপর পণ্ডিতরা পাখিটাকে শেখানোর জন্য রাশি রাশি বই জোগাড় করলেন। পাখির মুখে কলমের ডগা দিয়ে বইয়ের পাতা ঠেসে দেওয়া হলো। পাখিটা আর গান গাইতে পারল না, উড়তেও পারল না। সবাই বলল, “পাখিটা এখন শিক্ষিত হচ্ছে!”

কিন্তু আসলে পাখিটা দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ল। তার স্বাভাবিক জীবন নষ্ট হয়ে গেল। একদিন পাখিটা মারা গেল। তখন নিন্দুকরা বলল, “পাখিটা তো মরে গেছে!” রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “পাখিটা এখন লাফায় কি? উড়ে কি? গান গায় কি?” ভাগ্নে উত্তর দিল, “না মহারাজ, পাখিটার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে।”

রাজা পাখিটাকে দেখতে চাইলেন। পাখিটাকে আনা হলো। রাজা দেখলেন, পাখিটা নিথর, তার পেটে শুধু বইয়ের পাতা ভর্তি। পাখিটা আর জীবিত নেই।

এই গল্পটি আমাদের শিক্ষা ও শাসনব্যবস্থার একটি রূপক। পাখিটা মানুষের স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার প্রতীক। গল্পটি বলে, নিয়ম-কানুন আর বইয়ের বিদ্যার নামে আমরা যদি স্বাধীনতাকে হত্যা করি, তাহলে শিক্ষার কোনো মূল্য থাকে না। প্রকৃত শিক্ষা হলো স্বাধীনভাবে বাঁচা, চিন্তা করা এবং সৃজনশীল হওয়া।

আরও পড়ুনঃ জিদ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু – জসীমউদ্দীন

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top