পড়ে পাওয়া গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

পড়ে পাওয়া গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পড়ে পাওয়া’ গল্পটি গ্রামের কিছু ছেলেদের নিয়ে, যারা একদিন কালবৈশাখী ঝড়ের সময় আম কুড়াতে গিয়ে একটি টিনের বাক্স পায়। এই বাক্সটি নিয়ে তাদের মধ্যে নানা রকম ভাবনা চিন্তা শুরু হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাক্সটি তার আসল মালিককে ফেরত দেয়। নিচে পড়ে পাওয়া গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেয়া হল।

পড়ে পাওয়া গল্পের মূলভাব

গল্পটি শুরু হয় কালবৈশাখীর ঝড়ের প্রেক্ষাপটে। গ্রামের কিছু ছেলে নদীতে স্নান করতে যায় এবং ঝড়ের আভাস পেয়ে আম কুড়ানোর জন্য আমবাগানে যায়। ঝড়ের পর তারা একটি টিনের বাক্স পায়, যাতে টাকা ও গহনা থাকার সম্ভাবনা দেখা দেয়। প্রথমে তারা বাক্সটি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার কথা ভাবে, কিন্তু পরে তাদের বিবেক জাগ্রত হয় এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে বাক্সটি তার প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে হবে।

গল্পের মূল চরিত্র বিধু, যাকে ছেলেরা তাদের নেতা হিসেবে মানে, তার বুদ্ধিমত্তা ও নৈতিকতার কারণে তারা বাক্সটি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা বিভিন্ন উপায়ে বাক্সের মালিক খুঁজে বের করার চেষ্টা করে, যেমন গাছে গাছে নোটিশ লাগানো। অবশেষে, একজন গরিব কাপালি লোক এসে বাক্সটি চিনতে পারে এবং তার হারানো সম্পদ ফিরে পায়।

পড়ে পাওয়া গল্পের বিষয়বস্তু

একটা গ্রামে বিধু, সিধু, নিধু, তিনু, বাদল এবং আরও অনেক ছেলে বন্ধু ছিল। তাদের মধ্যে বিধু ছিল সবচেয়ে বড় এবং বুদ্ধিমান। একদিন দুপুরের পর খুব গরম পড়েছিল। সবাই গরমে কাতর হয়ে নদীতে স্নান করতে গেল। তখন আকাশে কালবৈশাখী ঝড়ের আভাস দেখা গেল। বিধু বলল, “ঝড় আসছে, আম কুড়াতে যাওয়া যাক!” কারণ ঝড়ে আম বাগানের আমগুলো ঝরে পড়ে, তখন সেগুলো কুড়িয়ে নেওয়া যায়।

সবাই মিলে আম বাগানের দিকে রওনা দিল। ঝড় শুরু হওয়ার আগেই তারা আম বাগানে পৌঁছে গেল। ঝড় এল, বৃষ্টি এল, আম ঝরতে লাগল। সবাই আম কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ঝড় থেমে গেলে তারা আম নিয়ে বাড়ি ফিরতে লাগল।

হঠাৎ পথে বাদল নামের একটি ছেলে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। সে দেখল মাটিতে একটা টিনের বাক্স পড়ে আছে। বাক্সটা তুলে নিয়ে সবাই মিলে দেখল, সেটা একটা তালাবন্ধ টিনের বাক্স। এ ধরনের বাক্সে সাধারণত টাকা-পয়সা বা গহনা রাখা হয়। সবাই খুব উত্তেজিত হয়ে গেল। তারা ভাবল, বাক্সটার মধ্যে হয়তো অনেক টাকা বা সোনার গহনা আছে।

প্রথমে তারা ভাবল, বাক্সটা ভেঙে দেখে নেওয়া যাক। কিন্তু বিধু বলল, “না, এটা ভাঙা ঠিক হবে না। এটা কারো হারানো জিনিস। আমরা যদি এটা নিজেরা রাখি, তাহলে অন্যায় হবে। আমাদের এটা ফেরত দিতে হবে।”

সবাই বিধুর কথায় রাজি হল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, বাক্সটার মালিক খুঁজে বের করতে হবে। তারা কাগজে লিখল, “আমরা একটা বাক্স পেয়েছি। যার বাক্স, সে আমাদের খুঁজে নিক।” এই নোটিশ তারা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় গাছের গায়ে সেঁটে দিল।

কয়েক দিন পর একজন লোক এল। সে বলল, “আমার বাক্স হারিয়ে গেছে।” বিধু তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার বাক্সের রং কী?” লোকটা বলল, “সবুজ টিনের বাক্স।” বিধু দেখল, বাক্সটা সবুজ নয়। তাই সে বলল, “এটা তোমার বাক্স নয়।”

আরও কয়েক দিন পর আরেকজন লোক এল। সে বলল, “আমার বাক্স হারিয়ে গেছে।” বিধু আবার জিজ্ঞাসা করল, “তোমার বাক্সের রং কী?” লোকটা বলল, “কালো টিনের বাক্স।” এবারও বিধু দেখল, বাক্সটা কালো নয়। সে বলল, “এটা তোমার বাক্স নয়।”

অবশেষে একদিন একজন গরিব কাপালি লোক এল। সে বলল, “আমার বাক্স হারিয়ে গেছে। সেটা সবুজ টিনের বাক্স।” বিধু এবার দেখল, বাক্সটা সত্যিই সবুজ। সে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করল, “বাক্সের মধ্যে কী ছিল?” লোকটা বলল, “আমার ছোট মেয়ের বিয়ের গহনা এবং কিছু টাকা ছিল।”

বিধু এবার নিশ্চিত হল যে এই লোকটাই বাক্সের আসল মালিক। সে বাক্সটা লোকটাকে ফেরত দিল। লোকটা খুব খুশি হয়ে বলল, “তোমরা মানুষ না দেবতা? গরিবের ওপর এত দয়া!”

এই গল্প থেকে আমরা শিখতে পারি যে, অন্যায় করে কিছু পাওয়ার চেয়ে সততা এবং ন্যায়পরায়ণতা অনেক বড়। 

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top