প্রার্থী কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা -সুকান্ত ভট্টাচার্য

প্রার্থী কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা -সুকান্ত ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রার্থী’ কবিতাটি খুব সহজ এবং মর্মস্পর্শী ভাষায় লেখা। এখানে কবি শীতের কষ্টে থাকা গরিব মানুষের কথা বলেছেন, যারা শীত থেকে বাঁচতে সূর্যের উত্তাপের জন্য অপেক্ষা করে। নিচে প্রার্থী কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেয়া হল।

প্রার্থী কবিতার মূলভাব

এই কবিতায় কবি শীতের কষ্টে থাকা গরিব মানুষের কথা বলেছেন। শীতের রাত খুব লম্বা এবং ঠাণ্ডা। গরিব মানুষরা সারারাত ধরে শীতের কষ্ট সহ্য করে। তাদের গরম কাপড়ের অভাব, তাই তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে এবং এক টুকরো কাপড় দিয়ে কান ঢেকে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। তাদের কাছে সকালের একটু রোদ (সূর্যের আলো) সোনার চেয়েও দামি, কারণ সেই রোদই তাদের শীত থেকে মুক্তি দেয়।

কবি সূর্যকে বলছেন, “হে সূর্য, তুমি আমাদের ভিজে, স্যাঁতসেঁতে ঘরে আলো এবং উত্তাপ দাও। রাস্তার ধারে যে উলঙ্গ ছেলেটা কাঁপছে, তাকেও উত্তাপ দাও। আমরা শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত আগুনের গোলা। তোমার উত্তাপ পেয়ে আমরা একদিন শক্তিশালী হয়ে উঠব, আমাদের অলসতা এবং জড়তা দূর হবে। তখন আমরা নিজেরাও শক্তিশালী হয়ে রাস্তার উলঙ্গ ছেলেটাকে গরম কাপড় দিতে পারব। কিন্তু আজ আমরা তোমার কাছে শুধু একটু উত্তাপ চাই।”

প্রার্থী কবিতার ব্যাখ্যা

কবিতার লাইনব্যাখ্যা
“হে সূর্য! শীতের সূর্য!”কবি সূর্যকে ডাক দিয়েছেন। শীতের সময় সূর্যের আলো এবং উত্তাপ খুবই প্রয়োজনীয়, কারণ শীতে মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়।
“হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায় আমরা থাকি,”শীতের রাত খুব ঠাণ্ডা এবং লম্বা। গরিব মানুষরা সারারাত ধরে সূর্যের অপেক্ষায় থাকে, কারণ সূর্যের আলো এবং উত্তাপ তাদের শীত থেকে বাঁচাবে।
“যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।”যেমন একজন কৃষক ধান কাটার দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, তেমনি শীতার্ত মানুষও সূর্যের আলোর জন্য অপেক্ষা করে।
“হে সূর্য, তুমি তো জানো, আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!”কবি সূর্যকে বলছেন, তুমি জানো যে আমাদের গরম কাপড়ের অভাব আছে। শীত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত কাপড় নেই।
“সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে, এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে, কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!”গরিব মানুষরা সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন তৈরি করে এবং এক টুকরো কাপড় দিয়ে কান ঢেকে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। এটি খুবই কষ্টের জীবন।
“সকালের এক টুকরো রোদ্দুর- এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামি।”শীতার্ত মানুষের কাছে সকালের একটু রোদ (সূর্যের আলো) সোনার চেয়েও দামি, কারণ এটি তাদের শীত থেকে মুক্তি দেয়।
“ঘর ছেড়ে আমরা এদিক-ওদিকে যাই— এক টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায়।”শীত থেকে বাঁচতে মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে যায়, শুধু একটু রোদের জন্য। তাদের এই তৃষ্ণা খুবই বাস্তব এবং মর্মস্পর্শী।
“হে সূর্য! তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে উত্তাপ আর আলো দিও,”কবি সূর্যকে বলছেন, তুমি আমাদের ভিজে এবং স্যাঁতসেঁতে ঘরে আলো এবং উত্তাপ দাও, যাতে আমরা শীত থেকে বাঁচতে পারি।
“আর উত্তাপ দিও রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।”কবি শুধু নিজেদের নয়, রাস্তার ধারে উলঙ্গ এবং কাঁপতে থাকা গরিব শিশুটির জন্যও সূর্যের উত্তাপ চান।
“হে সূর্য! তুমি আমাদের উত্তাপ দিও— শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড,”কবি সূর্যকে বলছেন, তুমি আমাদের উত্তাপ দাও। আমরা শুনেছি তুমি এক জ্বলন্ত আগুনের গোলা, তোমার কাছে প্রচুর উত্তাপ আছে।
“তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হব!”কবির বিশ্বাস, সূর্যের উত্তাপ পেয়ে একদিন আমরা সবাই শক্তিশালী হয়ে উঠব। আমাদের মধ্যে এত শক্তি আসবে যে আমরা নিজেরাই জ্বলন্ত আগুনের মতো হয়ে যাব।
“তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা, তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারব রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।”কবির স্বপ্ন হলো, একদিন আমরা এত শক্তিশালী হব যে আমাদের অলসতা এবং জড়তা দূর হবে। তখন আমরা রাস্তার উলঙ্গ শিশুটিকে গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে পারব।
“আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী।”কবি শেষে বলছেন, আজ আমরা শুধু সূর্যের কাছে উত্তাপ চাই। এটি আমাদের একমাত্র প্রার্থনা।

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top