ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধটি একটি গভীর চিন্তাভাবনার বিষয়, যেখানে তিনি ভাব এবং কাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, ভাব এবং কাজ দুটি আলাদা জিনিস, কিন্তু এদের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নিচে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেয়া হল।

ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলভাব

কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধটি সহজভাবে বলতে গেলে, তিনি বলেন যে ভাব এবং কাজ একে অপর থেকে অনেক আলাদা জিনিস। ভাব হল, যেমন ফুলের সুগন্ধ, কিন্তু ফুল নেই—তাহলে কোনো বাস্তবতা নেই। এটি শুধু অনুভূতি, যা মানুষের মনকে উত্তেজিত করে। কাজ, অন্যদিকে, বাস্তবে কিছু ঘটায়, কিছু তৈরি করে। ভাব খুবই দরকারি, কারণ মানুষের মনকে আন্দোলিত করার জন্য ভাবের শক্তি লাগে। তবে, শুধু ভাবের মধ্যে আটকে থাকলে কোনো কাজ হবে না। ভাব যদি কাজের সাহায্যে বাস্তবতা তৈরি না করে, তবে তা শেষ পর্যন্ত উড়ে যাবে এবং কোনো ফল আসবে না। নজরুল বলছেন, যখন ভাব এবং কাজ একসঙ্গে চলে, তখনই তা সার্থক হয়। তবে, সেই ভাব বা উত্তেজনা নিঃস্বার্থ উদ্দেশ্যে হতে হবে, শুধুমাত্র নিজের লাভের জন্য নয়। তিনি একে ‘স্পিরিট’ বা আত্মার শক্তি বলে বর্ণনা করেন। নিজের মনে, নিজের শক্তিতে বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে, এবং উদ্যমকে নিজের উদ্দেশ্য অনুযায়ী পরিচালিত করতে হবে। শেষে, তিনি বলেন, কাজ করার আগে ভাল করে বুঝে নিতে হবে, যেন কোনো কাজের জন্য যে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, তা পরে কোনো ক্ষতি না করে। সুতরাং, শুধু ভাব নয়, কাজের সাথে ভাবের সঠিক সমন্বয় দরকার, এবং সেই কাজ হবে সমাজের কল্যাণে।

ভাব ও কাজ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু

ভাব হলো মনের মধ্যে থাকা একটি অনুভূতি বা চিন্তা, যা বাস্তবে কোনো রূপ নেয় না। এটি ফুলের সুগন্ধের মতো, যা দেখা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায়। অন্যদিকে, কাজ হলো সেই ভাবকে বাস্তবে রূপ দেওয়া, যা আমরা দেখতে এবং স্পর্শ করতে পারি।

নজরুল বলেছেন যে, শুধু ভাব নিয়ে থাকলে কোনো লাভ নেই। ভাবকে কাজে পরিণত করতে না পারলে তা অর্থহীন। তিনি উদাহরণ দিয়েছেন যে, মানুষকে কোনো কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হলে প্রথমে তার ভাবনায় প্রভাব ফেলতে হয়, কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে মাতাল করে রাখলে কোনো কাজ হবে না। ভাবকে কাজের দাস করে নিতে হবে, অর্থাৎ ভাবকে কাজে রূপান্তর করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন যে, ভাব দিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে যদি সেই মুহূর্তে কাজে লাগানো না যায়, তাহলে সেই ভাবের আবেশ কাগজের মতো উড়ে যাবে।

নজরুল এই প্রবন্ধে আরও বলেছেন যে, ভাবের মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নিঃস্বার্থ হতে হবে। যিনি ভাবের বাঁশি বাজাবেন, তাকে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি সতর্ক করেছেন যে, ভাবের মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে যদি কাজের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে এবং ভবিষ্যতে আর সাড়া দেবে না। তিনি উদাহরণ দিয়েছেন যে, কিছু ছাত্র-ছাত্রী ভাবের বশে কিছু করার জন্য বেরিয়ে এসেছিল, কিন্তু কাজের অভাবে তারা হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছিল। এর ফলে তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে কাজ করার আগ্রহ কমে গিয়েছিল।

নজরুল শেষে বলেছেন যে, ভাবের আবেগে বিহ্বল হয়ে কাজে নামা উচিত নয়। আগে ভালোভাবে চিন্তা করে, পরিকল্পনা করে তারপর কাজে নামতে হবে। তিনি বলেছেন, ভাবের দাস হওয়া উচিত নয়, বরং ভাবকে কাজের দাস করে নিতে হবে। তিনি মানুষকে সতর্ক করেছেন যে, ভাবের মাধ্যমে আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে, কিন্তু কাজকে হারানো যাবে না। তিনি বলেছেন, নিজের বুদ্ধি এবং কর্মশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে, কারণ এটি দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে।

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top