মিনু গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

মিনু গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

“মিনু” গল্পটি বনফুলের রচনা, যা একটি অনাথ ও বোবা মেয়ের জীবন এবং তার কল্পনার জগৎকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। নিচে মিনু গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দিলাম।

মিনু গল্পের মূলভাব

মিনু একটি অনাথ ও বোবা মেয়ে, যাকে তার দূরসম্পর্কের পিসিমা ও পিসেমশাই আশ্রয় দিয়েছেন। মিনুর জীবন খুব কঠিন, কারণ তাকে সব কাজ করতে হয়। কিন্তু মিনু তার কল্পনা দিয়ে এই কঠিন জীবনকে সুন্দর করে তোলে। সে শুকতারাকে তার বন্ধু মনে করে, কয়লাকে শত্রু ভাবে, আর রান্নাঘরের বাসনগুলোর সাথে বন্ধুত্ব করে। মিনু প্রতিদিন ছাদে গিয়ে একটি কাঁঠাল গাছের সরু ডালের দিকে তাকায়, কারণ সে বিশ্বাস করে যে সেখানে হলদে পাখি বসলে তার বাবা বিদেশ থেকে ফিরে আসবে। একদিন মিনুর খুব জ্বর আসে, কিন্তু সে কাউকে কিছু না বলে ছাদে যায়। সেখানে সে দেখে যে হলদে পাখি বসেছে। মিনু খুব খুশি হয় এবং মনে করে তার বাবা এখনই ফিরে আসবে। সে ছাদ থেকে নেমে বাইরে ছুটে যায়, যদিও তার শরীর খুব দুর্বল ছিল। গল্পটি মিনুর সহজ-সরল কিন্তু গভীর আবেগ, আশা ও কল্পনাশক্তির কথা বলে, যা তাকে কঠিন জীবনেও আনন্দ দেয়।

মিনু গল্পের বিষয়বস্তু

মিনু একটি ছোট মেয়ে, যার বাবা জন্মের আগেই মারা গেছেন, আর মাও মারা গেছেন। সে এখন তার দূরসম্পর্কের পিসিমা ও পিসেমশাইয়ের বাড়িতে থাকে। মিনুর বয়স মাত্র দশ বছর, কিন্তু সে ইতিমধ্যেই সব ধরনের কাজ করতে শিখে গেছে। তার পিসেমশাই যোগেন বসাককে সবাই মহৎ মানুষ বলে, কারণ তিনি এই অনাথ ও বোবা মেয়েটিকে আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু আসলে মিনুকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেওয়ায় যোগেন বসাকের খুব সুবিধা হয়েছে। মিনু শুধু বোবা নয়, সে একটু কালাও, এবং অনেক চেঁচালে তবেই শুনতে পায়। কিন্তু মিনুর একটি বিশেষ গুণ আছে—সে ঠোঁট নাড়া এবং মুখের ভাব দেখেই সব বুঝতে পারে। তার আরও একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে, যা দিয়ে সে এমন কিছু জিনিস বুঝতে পারে, যা সাধারণ মানুষের বুদ্ধিতে ধরা পড়ে না।

মিনুর জীবন খুব কঠিন। সে খুব ভোরে উঠে, রাত চারটার সময়। উঠেই সে পূর্ব আকাশে শুকতারা দেখে। শুকতারা তার কাছে একজন বন্ধুর মতো। মিনু মনে করে, শুকতারা তার মতোই ভোরে উঠে কয়লা ভাঙতে যায়। মিনু নিজেও কয়লা ভাঙে, আর কয়লাগুলোকে তার শত্রু মনে করে। সে হাতুড়ি দিয়ে কয়লা ভাঙে, আর মনে করে সে তার শত্রুদের শাস্তি দিচ্ছে। তারপর সে রান্নাঘরে যায়, যেখানে উনুনের নাম সে রাক্ষসী রেখেছে। উনুনে আগুন জ্বালিয়ে সে মনে করে, রাক্ষসী কয়লাগুলোকে খাচ্ছে।

মিনুর আরও একটি কাজ আছে। সে যখনই সময় পায়, ছাদে যায়। সেখানে থেকে সে একটি কাঁঠাল গাছের একটি সরু ডালের দিকে তাকায়। অনেকদিন আগে তার মাসিমা তাকে বলেছিল যে তার বাবা বিদেশে গেছে, এবং একদিন ফিরে আসবে। মিনু বিশ্বাস করে যে যখনই সেই সরু ডালে একটি হলদে পাখি বসবে, তার বাবা ফিরে আসবে। তাই সে প্রতিদিন ছাদে গিয়ে সেই ডালের দিকে তাকায়, কিন্তু পাখিটি আসে না।

একদিন মিনুর খুব জ্বর আসে। কিন্তু সে কাউকে কিছু বলে না। পরের দিন ভোরে সে আবার কয়লা ভাঙতে যায়, কিন্তু শরীর খুব খারাপ লাগায় সে বিছানায় শুয়ে পড়ে। জ্বরের ঘোরে তার মনে হয় যে সে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে ভুলে গেছে। সে আস্তে আস্তে উঠে ছাদে যায়। সেখানে সে দেখে যে পূর্ব আকাশ লাল হয়ে গেছে, এবং সেই সরু ডালে একটি হলদে পাখি বসেছে। মিনু খুব খুশি হয়, কারণ সে মনে করে তার বাবা এখনই ফিরে আসবে। সে ছাদ থেকে নেমে বাইরে ছুটে যায়, যদিও তার পা টলছিল।

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top