অভাগীর স্বর্গ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি একটি সামাজিক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরে, যেখানে নিম্নবর্ণের মানুষের জীবনের দুঃখ, বঞ্চনা এবং সামাজিক বৈষম্যকে গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নিচে অভাগীর স্বর্গ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

অভাগীর স্বর্গ গল্পের মূলভাব

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি একটি দরিদ্র মহিলা অভাগী এবং তার ছেলে কাঙালীর জীবন নিয়ে। অভাগীর স্বামী রসিক তাকে ছেড়ে চলে গেছে, এবং সে তার ছেলেকে নিয়ে সংগ্রাম করে জীবন কাটায়। একদিন গ্রামের ধনী ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রীর শবযাত্রা দেখে অভাগীর মনে হয়, কী সুখী সেই মহিলা! তাঁর ছেলের হাতের আগুনে দাহ করা হচ্ছে, সবাই তাঁকে সম্মান দেখাচ্ছে। অভাগীও চায় তার ছেলে কাঙালীর হাতের আগুনে তার দাহ করা হোক। কিন্তু অভাগী অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।

কাঙালী তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে চায়। সে জমিদারের কাছারিতে যায়, কিন্তু সেখানেও সাহায্য পায় না। জমিদারের দারোগা তাকে বাধা দেয় এবং গালি দেয়। কাঙালী ঠাকুরদাসের কাছে যায়, কিন্তু সেখানেও কোনো সাহায্য মেলে না। শেষে অভাগীর দেহ নদীর চরে সমাধিস্থ করা হয়। কাঙালী তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে না পেরে খুব কষ্ট পায়। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন তার মায়ের আত্মা স্বর্গে পৌঁছেছে কি না তা দেখতে চায়।

অভাগীর স্বর্গ গল্পের বিষয়বস্তু

গ্রামের একজন ধনী ব্যবসায়ী ঠাকুরদাস মুখুয্যের বয়স্ক স্ত্রী মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে বড় আয়োজনে শবযাত্রার আয়োজন করা হয়। সবাই সম্মান দেখাতে আসে, মেয়েরা মায়ের পায়ে আলতা ও মাথায় সিঁদুর দেয়, বধূরা শেষবারের মতো তাঁর পদধূলি নেয়। মনে হচ্ছিল যেন তিনি নতুন করে স্বামীর ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। ঠাকুরদাস শান্তভাবে স্ত্রীকে শেষ বিদায় দেন, কিন্তু তাঁর চোখে জল আসে।

এই ঘটনার পাশাপাশি গল্পের মূল চরিত্র কাঙালী এবং তার মা অভাগীর জীবন উঠে আসে। অভাগী একজন দরিদ্র মহিলা, যার স্বামী রসিক তাকে ছেড়ে চলে গেছে। অভাগী তার ছেলে কাঙালীকে নিয়ে সংগ্রাম করে জীবন কাটায়। কাঙালী এখন কিশোর, সে বেতের কাজ শিখছে এবং অভাগীর আশা যে একদিন তার ছেলে তাকে দুঃখ থেকে মুক্ত করবে।

এদিকে, ঠাকুরদাসের স্ত্রীর শবযাত্রা দেখতে গিয়ে অভাগীর মনে হয়, কী সুখী সেই মহিলা! তাঁর ছেলের হাতের আগুনে দাহ করা হচ্ছে, সবাই তাঁকে সম্মান দেখাচ্ছে। অভাগীর মনে হয়, সে যদি এমন সম্মান পেত! কিন্তু সে দরিদ্র, নিম্নবর্ণের। তার এমন সম্মান পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

অভাগী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার জ্বর হয়, এবং সে বুঝতে পারে যে তার সময় শেষ হয়ে আসছে। সে তার ছেলে কাঙালীকে বলে, সে যেন তার বাবা রসিককে ডেকে আনে, যাতে সে তার পায়ের ধুলো নিতে পারে। কাঙালী রসিককে ডেকে আনে, এবং অভাগী শেষবারের মতো তার স্বামীর পায়ের ধুলো নেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই অভাগী মারা যায়।

কাঙালী তার মাকে দাহ করার জন্য কাঠ চায়, কিন্তু জমিদারের দারোগা তাকে বাধা দেয়। কাঙালী জমিদারের কাছারিতে যায়, কিন্তু সেখানেও সে সাহায্য পায় না। শেষে অভাগীর দেহ নদীর চরে সমাধিস্থ করা হয়। কাঙালী তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে না পেরে খুব কষ্ট পায়। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন তার মায়ের আত্মা স্বর্গে পৌঁছেছে কি না তা দেখতে চায়।

গল্পটি শেষ হয় কাঙালীর অসহায়ত্ব এবং সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে তুলে ধরে। অভাগীর স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয় না, কিন্তু তার ছেলে কাঙালীর মাধ্যমে তার সংগ্রাম ও ভালোবাসা গল্পটিকে অমর করে তোলে।

Related Posts

Leave a Comment