জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি বাংলার প্রকৃতি, জীবন এবং কবির মাটির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধকে প্রকাশ করে। নিচে আবার আসিব ফিরে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেয়া হল।
আবার আসিব ফিরে কবিতার মূলভাব
জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি বাংলার প্রকৃতি ও জীবনের প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করে। কবি বলছেন, তিনি মৃত্যুর পরেও বাংলায় ফিরে আসবেন, কিন্তু মানুষ হিসেবে নয়—হয়তো পাখি, কাক বা হাঁসের রূপে। তিনি বাংলার নদী, মাঠ, খেত, কুয়াশা, গাছপালা এবং মানুষের সহজ জীবনকে ভালোবেসে আবার ফিরে আসবেন। কবি কল্পনা করেন, তিনি হয়তো শঙ্খচিল, কাক বা হাঁস হয়ে বাংলার প্রকৃতির মাঝে মিশে যাবেন। সন্ধ্যায় পাখির ডাক, শিশুর খেলাধুলা বা নদীর ঢেউয়ের মাঝেও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে। সহজ কথায়, কবি বাংলার মাটি ও প্রকৃতির সঙ্গে চিরকাল বেঁচে থাকতে চান।
আবার আসিব ফিরে কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়” | কবি বলছেন, তিনি আবার ফিরে আসবেন তাঁর প্রিয় বাংলার ধানসিঁড়ি নদীর তীরে। ধানসিঁড়ি ঝালকাঠি জেলার একটি নদী। নদীটি এখন মরে গেছে। |
“হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;” | কবি মানুষ হিসেবে নয়, হয়তো শঙ্খচিল বা শালিক পাখির রূপে ফিরে আসবেন। শঙ্খচিল হলো সাদা রঙের এক ধরনের চিল, আর শালিক হলো ছোট কালো পাখি। কবি প্রকৃতির বিভিন্ন রূপে নিজেকে কল্পনা করেন। তিনি চান বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে। |
“হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে” | কবি হয়তো ভোরের কাক হয়ে কার্তিক মাসের নবান্ন উৎসবে মেতে থাকা বাংলায় ফিরে আসবেন। কার্তিক মাসে বাংলায় নতুন ধান কাটা হয়, এবং নবান্ন উৎসব পালিত হয়। এই উৎসব বাংলার কৃষিজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। |
“কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;” | কবি কুয়াশায় ভেসে কাঁঠাল গাছের ছায়ায় এসে বিশ্রাম নেবেন। কুয়াশা এবং কাঁঠাল গাছ বাংলার গ্রামীণ প্রকৃতির পরিচয়। কবি এই প্রকৃতির মাঝে শান্তি ও স্নিগ্ধতা খুঁজে পান। |
“হয়তো বা হাঁস হবো— কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,” | কবি হয়তো হাঁস হয়ে কিশোরীর পায়ের ঘুঙুরের শব্দ শুনবেন। ঘুঙুর হলো পায়ের একটি অলংকার, যা নূপুর নামেও পরিচিত। |
“সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে;” | কবি সারাদিন কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে বেড়াবেন। কলমি হলো এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ, যার গন্ধ বাংলার জলাভূমিকে মোহনীয় করে তোলে। |
“আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে” | কবি বাংলার নদী, মাঠ ও খেতকে ভালোবেসে আবার ফিরে আসবেন। বাংলার প্রকৃতি ও কৃষিজীবনের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা রয়েছে। |
“জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;” | কবি জলাঙ্গী নদীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার সবুজ মাটিতে ফিরে আসবেন। জলাঙ্গী হলো নদীর একটি রূপক নাম, যার অর্থ ‘জল যার অঙ্গে’। |
“হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;” | হয়তো সন্ধ্যায় সুদর্শন পোকা উড়তে দেখবে। সুদর্শন হলো এক ধরনের পোকা, যা সন্ধ্যায় উড়ে বেড়ায়। |
“হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;” | হয়তো শিমুল গাছের ডালে লক্ষ্মীপেঁচার ডাক শুনবে। লক্ষ্মীপেঁচা হলো এক ধরনের পেঁচা, যা বাংলার গ্রামীণ পরিবেশের একটি অংশ। |
“রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে” | রূপসা নদীর ঘোলা জলে একটি কিশোর সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙা নৌকা চালাতে দেখবে। রূপসা নদী বাংলার একটি বিখ্যাত নদী। |
“ডিঙা বায়;- রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে” | সন্ধ্যায় রাঙা মেঘের ভেলা ভেসে আসবে, আর পাখিরা অন্ধকারে তাদের নীড়ে ফিরে আসবে। বাংলার সন্ধ্যার সৌন্দর্য কবিকে মুগ্ধ করে। |
“দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে—” | সাদা বকের দলকে দেখবে, আর তাদের ভিড়ের মাঝেই কবিকে খুঁজে পাবে। অর্থাৎ, কবি বাংলার প্রকৃতি ও জীবনের সঙ্গে মিশে যাবেন। তিনি চান বাংলার মাটি, নদী, পাখি এবং মানুষের মাঝেই চিরকাল বেঁচে থাকতে। |