একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব ও সারসংক্ষেপ

জাহানারা ইমামের “একাত্তরের দিনগুলি” যা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংগ্রাম, ভয়, আশা এবং ত্যাগের গভীরতা ফুটে তুলেছে। নিচে একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব ও সারসংক্ষেপ দেওয়া হল।

একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব

জাহানারা ইমামের “একাত্তরের দিনগুলি” হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, যা যুদ্ধের ভয়াবহতা, ত্যাগ ও সংগ্রামের গল্প বলে। জাহানারা ইমাম ঢাকায় তার পরিবার নিয়ে থাকতেন, যেখানে তার ছেলে রুমী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতা, বাড়িঘর জ্বালানো, নিরীহ মানুষ হত্যা এবং নারীদের উপর অত্যাচারের কথা তিনি লিখেছেন। রুমীর নিরাপত্তা নিয়ে তিনি সারাক্ষণ চিন্তিত থাকতেন, কিন্তু তার সাহসিকতাকে সমর্থন করতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা, মানুষের মধ্যে ভয় ও আশার দ্বন্দ্ব, এবং যুদ্ধের সময়কার সামাজিক পরিস্থিতির বর্ণনা বইটিকে জীবন্ত করে তোলে। রুমীর শাহাদাত জাহানারা ইমামের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল, কিন্তু তিনি তার ত্যাগকে সম্মান জানিয়ে এগিয়ে যান। ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা তার ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

একাত্তরের দিনগুলি এর সারসংক্ষেপ

জাহানারা ইমাম একজন সাধারণ মা এবং গৃহিণী, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারকে নিয়ে সংগ্রাম করেছিলেন। তার ছেলে রুমী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, এবং জাহানারা ইমাম তার ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তিত থাকতেন। এই বইটি তার ডায়েরি, যেখানে তিনি যুদ্ধের সময়কার ভয়াবহতা, মানুষের দুঃখ-কষ্ট, এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার ভালোবাসা ও আশার কথা লিখেছেন।


যুদ্ধের শুরুর দিক:

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মানুষের উপর হামলা শুরু করে। জাহানারা ইমাম এবং তার পরিবার ঢাকায় থাকতেন। তারা দেখলেন কীভাবে পাকিস্তানি সেনারা নিরীহ মানুষদের হত্যা করছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে এবং নারীদের উপর অত্যাচার করছে।

জাহানারা ইমামের ছেলে রুমী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। রুমীর নিরাপত্তা নিয়ে জাহানারা ইমাম খুব চিন্তিত ছিলেন, কিন্তু তিনি তার ছেলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন।


পরিবারের সংগ্রাম:

জাহানারা ইমামের পরিবার যুদ্ধের সময় অনেক কষ্ট সহ্য করেছিল। তাদের খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব ছিল। তারা প্রায়ই শুনতেন যে পাকিস্তানি সেনারা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে এবং মানুষদের হত্যা করছে।

জাহানারা ইমামের স্বামী শরীফ এবং ছেলে জামীও যুদ্ধের সময় পরিবারের পাশে ছিলেন। তারা সবাই মিলে এই কঠিন সময় পার করছিলেন।


মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা:

জাহানারা ইমাম মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা সম্পর্কে লিখেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালাতেন। তারা পাকিস্তানি সেনাদের উপর হামলা করতেন এবং তাদের পরিকল্পনা ব্যাহত করতেন।

জাহানারা ইমাম মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা এবং ত্যাগের কথা লিখে তাদের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন।


রুমীর শাহাদাত:

জাহানারা ইমামের ছেলে রুমী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। রুমীর মৃত্যু জাহানারা ইমাম এবং তার পরিবারের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। কিন্তু তারা রুমীর ত্যাগকে সম্মান জানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।


বিজয়ের আশা:

যুদ্ধের শেষের দিকে জাহানারা ইমাম এবং তার পরিবার বিজয়ের আশা করতে শুরু করেন। তারা শুনতে পেলেন যে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করছে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পথে।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। জাহানারা ইমাম এবং তার পরিবার এই বিজয়ে আনন্দিত হন, কিন্তু রুমীর মৃত্যুর বেদনা তাদের মনে রয়ে যায়।


Related Posts

Leave a Comment