কলিমদ্দি দফাদার গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

আবু জাফর শামসুদ্দীনের “কলিমদ্দি দফাদার” গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত। কলিমদ্দি দেখায় যে, ছোট মানুষও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাস্তবতা, মানুষের সংগ্রাম এবং দেশপ্রেমের চিত্র তুলে ধরে। নিচে কলিমদ্দি দফাদার গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

কলিমদ্দি দফাদার গল্পের মূলভাব

কলিমদ্দি দফাদার একজন সাধারণ গ্রামের মানুষ। যিনি ইউনিয়ন বোর্ডের দফাদার হিসেবে কাজ করেন। তিনি সহজ-সরল, রসিকতাপ্রিয় এবং গ্রামের সবাই তাকে সম্মান করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনারা (খান সেনা) তার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে। কলিমদ্দিকে তারা তাদের অভিযানে সঙ্গী করে, কারণ তিনি এলাকার রাস্তাঘাট চেনেন। একদিন খান সেনারা একটি গ্রামে অভিযান চালায় এবং নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর অত্যাচার করে। কলিমদ্দি দেখেন যে খান সেনারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করছে, কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত, তারা একটি ভাঙাচোরা কাঠের পুলের কাছে পৌঁছায়। কলিমদ্দি জানেন যে পুলটি বিপজ্জনক, কিন্তু খান সেনাদের তিনি বলেন যে পুলটি ঠিক আছে। খান সেনারা তাকে আগে পুল পার হতে বলে। কলিমদ্দি পুলের ওপর হাঁটতে শুরু করেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে পুল ভেঙে ফেলেন। পুল ভেঙে যাওয়ায় খান সেনারা পানিতে পড়ে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির শিকার হয়। কলিমদ্দিও পানিতে পড়েন, কিন্তু তিনি সাঁতার জানেন, তাই বেঁচে যান। এই ঘটনার পর তিনি আবার গ্রামে ফিরে আসেন এবং সাধারণ জীবনযাপন করতে থাকেন। গল্পটি একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ সাহস ও দেশপ্রেমের চিত্র তুলে ধরে।

কলিমদ্দি দফাদার গল্পের বিষয়বস্তু

“কলিমদ্দি দফাদার” আবু জাফর শামসুদ্দীনের একটি গল্প, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত। গল্পটি ঢাকা জেলার একটি বাৎসরিক প্লাবন অঞ্চলে সংঘটিত হয়, যেখানে শীতলক্ষ্যা নদীর দু-তীর ধরে গ্রামগুলো বর্ষায় ডুবে যায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে।

গল্পের মূল চরিত্র কলিমদ্দি দফাদার, যিনি ইউনিয়ন বোর্ডের দফাদার হিসেবে কাজ করেন। তিনি তার সহজ-সরল আচরণ এবং রসিকতা দিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে জনপ্রিয়। তার বয়স প্রায় ষাট, চুল-দাড়িতে পাক ধরেছে। সে খুবই সহজ-সরল মানুষ, রসিকতায় পটু। গ্রামের সবাই তাকে সম্মান করে। তার সংসার খুবই ছোট, স্ত্রী ও কয়েকটি সন্তান নিয়ে তার জীবন কাটে। আয় কম, তাই সংসার চালানো কঠিন, কিন্তু কলিমদ্দি কখনও কারো কাছে হাত পাতেন না।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। কলিমদ্দির এলাকায় পাকিস্তানি সেনারা (খান সেনা) আধিপত্য বিস্তার করে। তারা গ্রামের মানুষদের ওপর অত্যাচার শুরু করে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের লক্ষ্য করে। কলিমদ্দি দফাদার সরকারি চাকুরে হওয়ায় তাকে খান সেনাদের কাজে সাহায্য করতে হয়। তারা তাকে তাদের অভিযানে সঙ্গী করে নেয়, কারণ সে এলাকার রাস্তাঘাট চেনে।

একদিন খান সেনারা একটি গ্রামে অভিযান চালায়। তারা সন্দেহ করে যে সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা লুকিয়ে আছে। কলিমদ্দিকে তারা পথ দেখানোর জন্য নিয়ে যায়। গ্রামের লোকজন ভয়ে পালিয়ে যায়, বাড়িঘর ফাঁকা হয়ে পড়ে। খান সেনারা নিরীহ মানুষদের ওপর গুলি চালায় এবং অত্যাচার করে।

কলিমদ্দি দেখে যে খান সেনারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করছে, কিন্তু সে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারে না। শেষ পর্যন্ত, তারা একটি কাঠের পুলের কাছে পৌঁছায়। এই পুলটি খুবই ভাঙাচোরা, নড়বড়ে। কলিমদ্দি জানেন যে পুলটি বিপজ্জনক, কিন্তু খান সেনাদের সে বলে যে পুলটি ঠিক আছে। খান সেনারা তাকে আগে পুল পার হতে বলে।

কলিমদ্দি পুলের ওপর হাঁটতে শুরু করে। পুলটি নড়তে থাকে, এবং হঠাৎ কলিমদ্দি ইচ্ছাকৃতভাবে পুল ভেঙে ফেলে। পুল ভেঙে যাওয়ায় খান সেনারা পানিতে পড়ে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির শিকার হয়। কলিমদ্দিও পানিতে পড়েন, কিন্তু তিনি সাঁতার জানেন, তাই বেঁচে যান।

এই ঘটনার পর কলিমদ্দি আবার গ্রামে ফিরে আসেন। সবাই জানে না যে তিনি আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। তিনি আগের মতোই সাধারণ জীবনযাপন করতে থাকেন, কিন্তু তার মনে গর্ব থাকে যে তিনি দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছেন।

Related Posts

Leave a Comment