জন্মভূমি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মভূমি কবিতার প্রতিটি লাইনে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার এক অকৃত্রিম অনুভূতি ফুটে ওঠে। বন, ফুলের গন্ধ, গগনের চাঁদ, এবং মাতৃভূমির আলো—এইসব প্রতীক ব্যবহার করে কবি আমাদের জানান, যে এই অনুভবই জীবনের সত্যিকারের সার্থকতা। নিচে জন্মভূমি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেওয়া হল।

জন্মভূমি কবিতার মূলভাব

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মভূমি’ কবিতায় জন্মভূমির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশিত হয়েছে। কবি মনে করেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা হলো এই দেশে জন্ম নেওয়া। তিনি জন্মভূমিকে মায়ের মতো ভালোবাসেন এবং এই ভালোবাসার জন্যই তাঁর জীবন পূর্ণ হয়েছে। কবি জানেন না তাঁর জন্মভূমি ধনরত্নে সমৃদ্ধ কি না, কারণ সেটি তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাঁর কাছে আসল বিষয় হলো, জন্মভূমির স্নেহময় ছায়ায় তিনি যে সুখ ও শান্তি পেয়েছেন, তা অতুলনীয়। জন্মভূমির প্রকৃতি, যেমন বাগানের ফুল, চাঁদের আলো, আর সূর্যের কিরণ, তাঁকে মুগ্ধ ও আকুল করে তোলে। কবির একান্ত ইচ্ছা হলো, এই মাটির আলোতেই তাঁর জীবন শেষ হোক এবং জন্মভূমির মাটিতে তিনি চিরদিনের জন্য শায়িত হতে পারেন। কবিতাটি আমাদের মনে জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার অনুভূতি জাগায়।

জন্মভূমি কবিতার ব্যাখ্যা

লাইনব্যাখ্যা
“সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।”কবি তার জন্মভূমিতে জন্মগ্রহণ করার জন্য নিজের জীবনকে সার্থক মনে করছেন। তিনি এই লাইনটিতে প্রকাশ করেছেন যে, জন্মভূমির সঙ্গে গভীর আত্মিক সম্পর্ক এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে জীবনসার্থকতা প্রদান করেছে। এখানে জন্মভূমির প্রতি কবির গর্ব ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটেছে।
“সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে।”এই লাইনে কবি তার মাতৃভূমিকে “মা” হিসেবে সম্বোধন করেছেন এবং তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, মায়ের মতোই জন্মভূমির স্নেহ ভালোবাসা তাকে জীবনের পরম সার্থকতা এনে দিয়েছে।
“জানি নে তোর ধন রতন আছে কি না রানির মতন,” কবি এখানে বলেছেন, তিনি জানেন না তার মাতৃভূমি ধনরত্নে ভরপুর কি না। দেশের আর্থিক সম্পদ বা ঐশ্বর্যের প্রতি তার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তিনি কেবলমাত্র দেশের প্রতি তার ভালোবাসার মূল্য বোঝাতে চেয়েছেন।
“শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।”এই লাইনটি মাতৃভূমির স্নেহময় ছায়ার মধ্যে কবির প্রশান্তি ও শান্তির অনুভূতি প্রকাশ করছে। তিনি জানেন, জন্মভূমির স্নেহ ও মমতায় তিনি শীতল প্রশান্তি পান।
“কোন্ বনেতে জানি নে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল,”কবি জন্মভূমির প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি জানেন না, কোথায় এমন মনোহর ফুলের গন্ধ পাওয়া যায় যা তার মনকে আকুল করে তোলে। প্রকৃতির প্রতি তার গভীর মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে এই লাইনে।
“আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,”জন্মভূমির আলোই প্রথমে কবির চোখকে উজ্জ্বল করেছে। এখানে কবি জীবনের প্রথম আলো হিসেবে মাতৃভূমির আলোকে উল্লেখ করেছেন যা তাকে জীবনের পথে আলোকিত করেছে।
“ওই আলোতে নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে।”কবির জীবনের শেষ মুহূর্তেও তিনি জন্মভূমির আলোকে স্মরণ করে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চান। তার এই ইচ্ছায় গভীর দেশপ্রেম এবং মাতৃভূমির প্রতি চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মভূমি’ কবিতায় কবি তার জন্মভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, মাতৃভূমির প্রতি এই ভালোবাসাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। জন্মভূমির প্রকৃতির সৌন্দর্য, স্নেহ, এবং আলোর প্রশান্তি কবির মনকে আপ্লুত করে। কবি শেষ পর্যন্ত তার জন্মভূমির আলোতে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চান, যা তার শেষ ইচ্ছা ও ভালোবাসার নিদর্শন।

Related Posts

Leave a Comment