মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে সমাজের আসল কাজ ও মানুষের বিকাশের কথা বলা হয়েছে। সমাজের দায়িত্ব শুধু বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া নয়, বরং মানুষকে বড় করে তোলা। একাদশ-দ্বাদশ বাংলা বিষয়ের জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর “জীবন ও বৃক্ষ” প্রবন্ধে তিনি মানুষের জীবনকে একটি বৃক্ষের মতো দেখেছেন। তাঁর মতে, সমাজের কাজ শুধু মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা নয়, বরং তাকে বড় করে তোলা, তার মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং জীবনের সার্থকতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করা। আমাদের মধ্যে অনেক সময় স্বার্থপরতা, অহংকার আর ক্ষুদ্রতা থাকে, যা মানুষের জীবনে বাধা সৃষ্টি করে। যারা নিজেদের জীবনে সার্থক হতে চায় না, তারা অন্যদের সার্থকতার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
লেখক বলেন, আমাদের জীবন যেন সজীব বৃক্ষের মতো হয়—যা শুধু বড় হয় না, তার মধ্যে গতি, বৃদ্ধি এবং বিকাশ থাকে। বৃক্ষ যেমন নিজের পরিপূর্ণতা অর্জন করে, তেমনই মানুষের জীবনও পরিপূর্ণ হতে পারে, যদি সে নিজের আত্মিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও জীবনকে নদীর গতির সঙ্গে তুলনা করেছেন, তবে লেখক মনে করেন, বৃক্ষের জীবন অনেক বেশি উপযুক্ত উদাহরণ, কারণ বৃক্ষের বৃদ্ধির ছবি আমরা প্রতিদিন দেখতে পাই। বৃক্ষ যেমন ধীরে ধীরে ফুল ফোটায়, তেমনই মানুষের জীবনও ধীরস্থিরভাবে বিকশিত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, মানুষের জীবনের সার্থকতা কেবল শারীরিক বৃদ্ধি নয়, আত্মিক পরিপক্বতা অর্জনে নিহিত। আত্মা তৈরি করতে হয়, সেটি পাওয়া যায় না। জীবনের সঠিক শিক্ষা পাওয়া যায় সাহিত্য, শিল্পকলার মাধ্যমে, কারণ সেগুলো মানুষের অন্তরকে পরিপূর্ণ করে।
জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম কবে?
উত্তর: ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে।
২. মোতাহের হোসেন চৌধুরী কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুরে।
৩. মোতাহের হোসেন চৌধুরী কোন আন্দোলনের সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন?
উত্তর: ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’।
৪. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর কোন গ্রন্থটি তাঁর রচনা হিসেবে প্রবন্ধ-সাহিত্যে বিশিষ্ট সংযোজন?
উত্তর: ‘সংস্কৃতি কথা’।
৫. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর অনূদিত গ্রন্থগুলোর নাম কী?
উত্তর: ‘সভ্যতা’ এবং ‘সুখ’।
৬. ‘সভ্যতা’ গ্রন্থটি কোন বই থেকে অনুপ্রাণিত?
উত্তর: ক্লাইভ বেল-এর ‘Civilization’।
৭. ‘সুখ’ গ্রন্থটি কার রচনা থেকে অনূদিত?
উত্তর: বারট্রান্ড রাসেলের ‘Conquest of Happiness’।
৮. মোতাহের হোসেন চৌধুরী কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করতেন?
উত্তর: চট্টগ্রাম কলেজ।
৯. মোতাহের হোসেন চৌধুরী কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই সেপ্টেম্বর।
১০. ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি কে রচনা করেছেন?
উত্তর: মোতাহের হোসেন চৌধুরী।
১১. সমাজের প্রধান কাজ কী বলে উল্লেখ করেছেন লেখক?
উত্তর: মানুষকে বড় করে তোলা এবং বিকশিত জীবনের জন্য আগ্রহ জাগানো।
১২. লেখকের মতে সংসারে কী ধরনের মানুষ বেশি?
উত্তর: স্বল্পপ্রাণ, স্থূলবুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষ।
১৩. কোন দেবতার চরণে এই মানুষরা নিবেদিতপ্রাণ?
উত্তর: অহংকার।
১৪. বৃক্ষকে কীসের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে?
উত্তর: সার্থকতা ও সৃষ্টির প্রতীক।
১৫. নদী ও বৃক্ষের মধ্যে লেখক কোনটিকে মানুষের সাধনার প্রতীক হিসেবে দেখিয়েছেন?
উত্তর: বৃক্ষকে।
১৬. বৃক্ষের জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: বৃদ্ধি, গতি ও বিকাশ।
১৭. রবীন্দ্রনাথ কোনটিকে মনুষ্যত্বের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন?
উত্তর: নদীর গতি।
১৮. লেখকের মতে বৃক্ষের জীবন কীভাবে মানুষকে সাহায্য করে?
উত্তর: জীবনের গূঢ় অর্থ উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
১৯. বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানো কী নির্দেশ করে?
উত্তর: জীবনের সার্থকতা ও পূর্ণতা।
২০. বৃক্ষের শান্ত ও সহিষ্ণু স্বভাব কী প্রকাশ করে?
উত্তর: জীবনের গুরুভার বহনের ইঙ্গিত।
২১. মানুষের আত্মার পরিপুষ্টি কীভাবে সম্ভব বলে লেখক মনে করেন?
উত্তর: বিচিত্র অভিজ্ঞতা, প্রচুর প্রেম ও গভীর অনুভূতির মাধ্যমে।
২২. বস্তুজিজ্ঞাসা বা বিজ্ঞান কেন শিক্ষার প্রধান বিষয় হতে পারে না?
উত্তর: এতে আত্মার উন্নতি হয় না।
২৩. লেখকের মতে বৃক্ষের জীবনের শেষ কাজ কী?
উত্তর: ফুল ফোটানো ও ফল ধরানো।
২৪. বৃক্ষের ফুল ও ফলের প্রাপ্তি কী বোঝায়?
উত্তর: সৃষ্টির সার্থকতা ও দান।
২৫. বৃক্ষের সাধনা কীসের নিদর্শন?
উত্তর: নীরব ও গোপন সাধনার।
২৬. লেখক কেন বৃক্ষকে নদীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রতীক হিসেবে দেখেছেন?
উত্তর: বৃক্ষের প্রাপ্তি ও দান সহজে চোখে ধরা পড়ে।
২৭. বৃক্ষের জীবন কীসের ইঙ্গিত দেয়?
উত্তর: প্রশান্তি ও সহিষ্ণুতার।
২৮. লেখক বৃক্ষের পানে তাকাতে কেন উৎসাহিত করেছেন?
উত্তর: জীবনের গূঢ় অর্থ উপলব্ধির জন্য।
২৯. ‘Ripeness is all’ – এর অর্থ কী?
উত্তর: পরিপক্বতাই জীবনের প্রধান লক্ষ্য।
৩০. বৃক্ষের বৃদ্ধি কিসের চমৎকার নিদর্শন?
উত্তর: জীবনের ধীরস্থির বৃদ্ধি ও বিকাশের।
৩১. মানুষের বৃদ্ধির ওপর কিসের প্রভাব রয়েছে?
উত্তর: তার নিজের চেষ্টার।
৩২. লেখকের মতে শিক্ষার মূল লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
উত্তর: আত্মার পরিপুষ্টি ও জীবনবোধের উন্নতি।
৩৩. বৃক্ষের অঙ্কুরিত হওয়া থেকে ফলবান হওয়া পর্যন্ত কী প্রকাশ পায়?
উত্তর: সার্থকতা ও বৃদ্ধির ইতিহাস।
৩৪. লেখক রবীন্দ্রনাথের কোন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন?
উত্তর: নদীর গতিকে মানুষের সাধনার প্রতীক করার বিষয়ে।
৩৫. লেখকের মতে বৃক্ষ কীভাবে নতি, শান্তি ও সেবার শিক্ষা দেয়?
উত্তর: দোরের কাছে দাঁড়িয়ে নীরবে এই বাণী প্রচার করে।
৩৬. বৃক্ষের সাধনাকে কেন সার্থক বলা হয়েছে?
উত্তর: কারণ তা ফুল-ফল দিয়ে সেবার জন্য প্রস্তুত হয়।
৩৭. বৃক্ষের পানে তাকালে কী উপলব্ধি হয়?
উত্তর: জীবনের মানে বৃদ্ধি ও বিকাশ।
৩৮. বৃক্ষের নীরব গান কী বোঝায়?
উত্তর: সার্থকতা ও জীবনের গভীর অর্থ।
৩৯. মানুষের মর্যাদা কোথায় নিহিত?
উত্তর: তার নিজের চেষ্টায় আত্মার উন্নতিতে।
আরও পড়ুনঃ গন্তব্য কাবুল বিষয়বস্তু ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর