দীক্ষা গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু – মোহাম্মদ নাসির আলী

মোহাম্মদ নাসির আলীর ‘দীক্ষা’ গল্পের একটি অংশ, যা স্কুলের পরিবেশে একটি শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যকার সম্পর্ক এবং ছাত্রের পরিবর্তন নিয়ে গড়ে উঠেছে। নিচে দীক্ষা গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেয়া হল।

দীক্ষা গল্পের মূলভাব

স্কুলে বাংলা পড়ানোর জন্য নিয়মিত শিক্ষক সতুবাবু অনুপস্থিত থাকায় হেডমাস্টার মৌলবি সাহেবকে ফোর্থ ক্লাসে বাংলা পড়ানোর দায়িত্ব দেন। মৌলবি সাহেব ছাত্রদের একটি রচনা লেখার কাজ দেন, যেখানে লেবু লিখে, “পাঁচশো টাকা পেলে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকব।” এতে মৌলবি সাহেব রেগে যান। পরে, লেবু পাঠশালার ছাত্রদের নিয়ে ঠাট্টা করার অভিযোগ স্বীকার করে। হেডমাস্টার তাকে সাবধান করে দেন এবং মৌলবি সাহেবকে লেবুর দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। পরীক্ষার সময় লেবু নকল করার চেষ্টা করলে মৌলবি সাহেব তার পকেট থেকে আরশোলা ভরা সিগারেটের প্যাকেট বের করেন এবং বিব্রত হন। পরে, লেবু কাঠবিড়ালি শিকার করতে গিয়ে কুমোরদের হাঁড়ি ভেঙে ফেলে, যার দায় মৌলবি সাহেবের উপর পড়ে। শেষে লেবু অনুতপ্ত হয়ে মৌলবি সাহেবের কাছে ক্ষমা চায় এবং আর দুষ্টুমি না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

দীক্ষা গল্পের বিষয়বস্তু

স্কুলে বাংলা পড়ানোর জন্য নিয়মিত শিক্ষক সতুবাবু (সতীনাথ বোস) সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন। তাই হেডমাস্টার মৌলবি সাহেবকে অনুরোধ করেন ফোর্থ ক্লাসে বাংলা পড়ানোর জন্য। মৌলবি সাহেব সাধারণত ফারসি পড়ান, কিন্তু হেডমাস্টারের অনুরোধে তিনি রাজি হন। তবে তিনি মনে মনে ভয় পান, কারণ ফোর্থ ক্লাসের ছাত্ররা খুব দুষ্টু, বিশেষ করে লেবু নামের একটি ছেলে, যে প্রায়ই তাকে উৎপাত করে।

মৌলবি সাহেব ক্লাসে ঢুকে ছাত্রদের একটি রচনা লেখার কাজ দেন। তিনি বলেন, “মনে করো, আমি তোমাদের প্রত্যেককে পাঁচশো টাকা দিলাম। সেই টাকা দিয়ে তোমরা কী করবে, তা লিখো।” সবাই রচনা লিখতে শুরু করে। লেবু প্রথমে মৌলবি সাহেবকে প্রশ্ন করে, “পাঁচশো টাকা প্রত্যেককে দিলে তো অনেক টাকা লাগবে, স্যার!” মৌলবি সাহেব তাকে ধমক দিয়ে বলেন, “এটা মনে করে নাও।”

লেবু খুব দ্রুত রচনা লিখে ফেলে। মৌলবি সাহেব যখন সবাইর রচনা পড়েন, তখন দেখেন লেবু লিখেছে, “পাঁচশো টাকা পেলে আমি নিশ্চিন্তে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকব।” এতে মৌলবি সাহেব রেগে যান এবং লেবুর কান মলতে যান। কিন্তু ঠিক তখনই হেডমাস্টারের ডাকে তিনি থামেন।

স্কুলে একটি ঘটনা ঘটে। চণ্ডীতলা ঘোষেদের বাড়ির পাঠশালার পণ্ডিতমশাই অভিযোগ করেন যে স্কুলের ছাত্ররা তার ছাত্রদের নিয়ে ঠাট্টা করছে। হেডমাস্টার সবাইকে জিজ্ঞাসা করেন, কে এই কাজ করেছে। লেবু তখন সত্য স্বীকার করে বলে, “আমিই করেছি, স্যার।” হেডমাস্টার তাকে শাস্তি না দিয়ে শুধু সাবধান করে দেন এবং পণ্ডিতমশাইয়ের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। লেবু তা মেনে নেয়।

এরপর থেকে হেডমাস্টার মৌলবি সাহেবকে লেবুর দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। লেবুকে স্কুলে আনা-নেওয়ার সময় মৌলবি সাহেবের সঙ্গে আসতে হবে। মৌলবি সাহেব এতে খুব অসন্তুষ্ট হন, কারণ লেবু তাকে প্রায়ই উৎপাত করে। তবে হেডমাস্টার বলেন, লেবু খুব বুদ্ধিমান ছেলে, তাকে সুপথে চালিত করতে পারলে সে ভালো মানুষ হবে।

স্কুলে হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষা চলছে। মৌলবি সাহেব ফোর্থ ক্লাসে গার্ড দিচ্ছেন। তিনি লক্ষ্য করেন, লেবু বারবার তার জামার পকেট থেকে কিছু দেখছে। মৌলবি সাহেব সন্দেহ করেন যে লেবু নকল করছে। তিনি লেবুর পকেট থেকে একটি সিগারেটের প্যাকেট বের করেন, কিন্তু ভেতরে দেখেন কয়েকটি আরশোলা (তেলাপোকা)। মৌলবি সাহেব ভয়ে লাফিয়ে উঠেন, এবং আরশোলাগুলো তার জামার ভেতর ঢুকে যায়। এতে তিনি খুব বিব্রত হন এবং লেবুকে ধমক দেন।

লেবুদের বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে একটি ছোট খাল পার হতে হয়। খাল পেরিয়ে কুমোরপাড়া। মৌলবি সাহেবের সঙ্গে লেবু সেই পথে স্কুলে যাচ্ছিল। পথে লেবুর চোখ পড়ল একটি কাঠবিড়ালির উপর। কাঠবিড়ালিটি মাটি থেকে কিছু খুঁটে খাচ্ছিল। লেবুর মনে হলো, এটা শিকার করার সুযোগ। সে তার পকেট থেকে রবারের গুলতি বের করে কাঠবিড়ালিটাকে শিকার করার চেষ্টা করল। কিন্তু কাঠবিড়ালিটি তিড়িং করে লাফিয়ে গাছের ডালে চলে গেল। লেবুর গুলতি লাগল কুমোরদের রাখা মাটির হাঁড়ির গায়ে। হাঁড়িটি ভেঙে গেল, এবং তার পাশের হাঁড়িগুলোও গড়িয়ে পড়ে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। এতে প্রচণ্ড শব্দ হলো, যেন একটা বোমা ফাটল।

কুমোরপাড়ার লোকজন ছুটে এল। তারা মৌলবি সাহেবকে দায়ী করল, কারণ তিনি লেবুকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মৌলবি সাহেব ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন না। কুমোররা তাকে জোর করে হাঁড়ির দাম চাইল। মৌলবি সাহেবের কাছে তখন টাকা ছিল না, তাই তিনি তার ছাতাটি বন্ধক রাখলেন এবং বললেন, দুদিন পর মাইনে পেলে ছাতাটি ছাড়িয়ে নেবেন।

এই ঘটনার পর লেবু খুব অনুতপ্ত হলো। সে বুঝতে পারল যে তার দুষ্টুমির কারণে মৌলবি সাহেবকে বিব্রত হতে হয়েছে। সে মৌলবি সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইল এবং বলল, “আমাকে মাফ করুন স্যার, আমি আর দুষ্টুমি করব না।”

আরও পড়ুনঃ খুদে গোয়েন্দার অভিযান মূলভাব ও বিষয়বস্তু

Related Posts

Leave a Comment