কামিনী রায়ের ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটি সমাজের ভীতি, লজ্জা এবং মানুষের কাজকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে। নিচে পাছে লোকে কিছু বলে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা- কামিনী রায় দেয়া হল।
পাছে লোকে কিছু বলে কবিতার মূলভাব
অনেক মানুষ আছে, যারা সবসময় ভয়ে থাকে, লজ্জা পায় এবং দ্বিধাগ্রস্ত হয়। তারা কোনো কাজ করতে গেলেই ভাবে, “লোকে কী বলবে?” তারা সমাজের চোখের ভয়ে আড়ালে লুকিয়ে থাকে, নিজেকে গোপন রাখে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায় না, কারণ তাদের মনে হয়, “পাছে লোকে কিছু বলে।” তাদের মনে নানা চিন্তা আসে, কিন্তু তারা সেগুলোকে চেপে রাখে। তাদের হৃদয়ে অনেক সুন্দর ও পরিষ্কার চিন্তা উঠে, কিন্তু সমাজের ভয়ে সেগুলো হারিয়ে যায়।
যখন সবাই মিলে কোনো মহৎ কাজ করে, তখনও তারা সেই দলে যোগ দিতে পারে না। কারণ তাদের মনে সবসময় ভয় কাজ করে, “লোকে কী বলবে?” এইভাবে, তারা জীবনকে ভয় এবং সমাজের চোখের ভীতিতে বন্দী করে রাখে। তাদের মধ্যে যে শক্তি আছে, তা সমাজের ভয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না।
পাছে লোকে কিছু বলে কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“করিতে পারি না কাজ, সদা ভয়, সদা লাজ” | সমাজে অনেক মানুষ আছে, যারা কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারেন না, কারণ সবসময় তাদের মনে ভয় এবং লজ্জা কাজ করে। তারা ভাবেন, “লোকে কী বলবে?” |
“সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।” | তাদের মনে সবসময় সন্দেহ থাকে, এবং তাদের দৃঢ় সিদ্ধান্তও টলে যায়। কারণ তারা ভাবেন, “পাছে লোকে কিছু বলে।” |
“আড়ালে আড়ালে থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি” | তারা সবসময় লুকিয়ে থাকেন, নিজেকে গোপন রাখেন। সমাজের চোখ থেকে দূরে থাকতে চান। |
“সম্মুখে চরণ নাহি চলে, পাছে লোকে কিছু বলে।” | তারা সামনে এগোতে পারেন না, কারণ মনে সবসময় এই ভয় থাকে যে, “লোকে কী বলবে?” |
“হৃদয়ে বুদবুদ মতো উঠে শুভ্র চিন্তা কত” | তাদের মনে অনেক সুন্দর এবং পরিষ্কার চিন্তা আসে, যেমন পানিতে বুদবুদ ওঠে। |
“মিশে যায় হৃদয়ের তলে, পাছে লোকে কিছু বলে।” | কিন্তু সেই চিন্তাগুলো হারিয়ে যায়, কারণ তারা ভাবেন, “লোকে কী বলবে?” |
“কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি সযতনে শুষ্ক রাখি” | যখন তাদের মন কাঁদে, তখনও তারা চোখের জল ফেলেন না, কারণ ভাবেন, “লোকে কী বলবে?” |
“নির্মল নয়নের জলে, পাছে লোকে কিছু বলে।” | তাদের চোখে জল আসলেও তা শুকিয়ে ফেলেন, কারণ ভাবেন, “লোকে কী বলবে?” |
“একটি স্নেহের কথা প্রশমিতে পারে ব্যথা” | একটি স্নেহের কথা বললে মানুষের ব্যথা কমতে পারে। |
“চলে যাই উপেক্ষার ছলে, পাছে লোকে কিছু বলে।” | কিন্তু তারা সেই কথা বলতে পারেন না। তারা উপেক্ষা বা অবহেলার ভান করে চলে যান, কারণ ভাবেন, “লোকে কী বলবে?” |
“মহৎ উদ্দেশ্যে যবে এক সাথে মিলে সবে” | যখন সবাই মিলে কোনো মহৎ কাজ করে। |
“পারি না মিলিতে সেই দলে, পাছে লোকে কিছু বলে।” | তখনও তারা সেই দলে যোগ দিতে পারেন না, কারণ ভাবেন, “লোকে কী বলবে?” |
“বিধাতা দিছেন প্রাণ থাকি সদা ম্রিয়মাণ” | ঈশ্বর তাদের জীবন দিয়েছেন, কিন্তু তারা সবসময় বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকেন। |
“শক্তি মরে ভীতির কবলে, পাছে লোকে কিছু বলে।” | তাদের শক্তি ভয়ের মধ্যে হারিয়ে যায়, কারণ তারা সবসময় ভাবেন, “লোকে কী বলবে?” |