নবনীতা দেবসেনের ‘পৃথিবী বাড়ুক রোজ’ কবিতাটিতে কবি পৃথিবীর অসীম বিস্তার এবং মানুষের ক্ষুদ্রতা নিয়ে আলোচনা করেছেন, পাশাপাশি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও ফুটিয়ে তুলেছেন। নিচে পৃথিবী বাড়ুক রোজ কবিতার বিষয়বস্তু ও ব্যাখ্যা দেওয়া হল।
পৃথিবী বাড়ুক রোজ কবিতার বিষয়বস্তু
কবি নবনীতা দেবসেন বলছেন, তিনি চান না পৃথিবী ছোট হয়ে যাক, যেন হাতের মুঠোয় ধরা আমলকীর মতো হয়ে যায়। তিনি চান পৃথিবী বড় হোক, ছড়িয়ে পড়ুক, অনন্ত বিস্তার নিয়ে থাকুক। তিনি নিজে ছোট হতে চান, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে চান, যেন তিনি পৃথিবীর বিশালতাকে আরও গভীরভাবে বুঝতে পারেন। তিনি চান পৃথিবী তার বিশালতা বজায় রাখুক, আর তিনি নিজে নরম ও নিরাকার হয়ে যান, যেন কোনো ইশারায় নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন, যেন রেশমের মতো কোমল হয়ে যান।
কবি বলছেন, পৃথিবীকে ছোট হতে দেওয়া উচিত নয়। পৃথিবী বিশাল, এবং তা এমনই থাকা উচিত। পশুপাখি ও গাছপালা ইতিমধ্যেই জেনে গেছে যে মানুষের সময় সীমিত, কিন্তু মানুষ এখনও তা পুরোপুরি বুঝতে পারেনি। এই কবিতায় কবি প্রকৃতির বিশালতা এবং মানুষের ক্ষুদ্রতার মধ্যে একটা সুন্দর ভারসাম্য তৈরি করেছেন। তিনি বলছেন, পৃথিবীটা যেন বড় হয়, আর আমরা মানুষ হিসেবে ছোট হতে শিখি, যেন প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সংযোগ আরও গভীর হয়।
পৃথিবী বাড়ুক রোজ কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“বিশ্ব ছোটো হয়ে যাক হস্তধৃত আমলকীর মতো, এ আমার প্রার্থনীয় নয়।” | কবি বলছেন, তিনি চান না পৃথিবীটা ছোট হয়ে যাক, যেন হাতের মুঠোয় ধরা আমলকীর মতো হয়ে যায়। আমলকী একটা ছোট ফল, যেটা হাতের মুঠোয় ধরা যায়। কিন্তু কবি চাইছেন না পৃথিবীটা এত ছোট হয়ে যাক যে সেটা আমাদের হাতের মুঠোয় আটকে যায়। তিনি চাইছেন পৃথিবীটা বড় হোক, তার বিশালতা বজায় রাখুক। |
“আমি চাই পৃথিবী ছড়াক, আমার পৃথিবী আমি পরিশ্রম করে খুঁজে নেব।” | কবি চাইছেন পৃথিবীটা ছড়িয়ে পড়ুক, তার বিশালতা বাড়ুক। তিনি নিজে পরিশ্রম করে এই পৃথিবীকে খুঁজে নিতে চান। মানে, তিনি চাইছেন পৃথিবীটা যেন তার অনন্ত বিস্তার নিয়ে থাকে, আর তিনি নিজে সেই পৃথিবীকে বুঝতে চান, জানতে চান। |
“পৃথিবী, বিস্তীর্ণা হও, ব্যাপ্ত হও ব্রহ্মচরাচর, আকীর্ণ ছড়িয়ে পড়ো, আরও, আরও নিঃসীম সময়।” | কবি পৃথিবীকে বলছেন, “তুমি বিস্তীর্ণ হও, ছড়িয়ে পড়ো, তোমার বিশালতা বাড়ুক। তুমি ব্রহ্মাণ্ডের মতো ব্যাপ্ত হও, অনন্ত সময় নিয়ে ছড়িয়ে পড়ো।” কবি চাইছেন পৃথিবীটা যেন তার বিশালতা বজায় রাখে, আরও বড় হয়। |
“আমার পৃথিবী হোক অফুরান, অনন্ত বিস্তার।” | কবি চাইছেন তার পৃথিবীটা অফুরান হোক, যেন তার কোনো শেষ না থাকে। পৃথিবীটা যেন অনন্ত বিস্তার নিয়ে থাকে, ছোট না হয়। |
“পৃথিবী, বর্ধিষ্ণু হও, আমি ছোটো, আরো ছোটো হই।” | কবি পৃথিবীকে বলছেন, “তুমি বড় হও, বাড়তে থাকো। আর আমি নিজে ছোট হতে চাইছি, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে চাইছি।” কবি চাইছেন পৃথিবীটা যেন তার বিশালতা বজায় রাখে, আর তিনি নিজে ছোট হয়ে প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করেন। |
“আমি ছোটো হতে হতে একগুচ্ছ রেশমের মতো নরম ও নিরাকার, যৎসামান্য ইশারা পেলেই“ | কবি বলছেন, তিনি ছোট হতে হতে রেশমের মতো নরম ও নিরাকার হয়ে যেতে চান। রেশম খুব নরম এবং কোমল। কবি চাইছেন তিনি যেন রেশমের মতো কোমল হয়ে যান, |
“নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে রাজপুতানি মখমলের শাড়ি আংটির ফোকর দিয়ে সবিনয়ে গলে চলে যাব।” | যাতে কোনো ছোট ইশারায় তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন। তিনি চাইছেন রাজপুতানি মখমলের শাড়ির মতো আংটির ফোকর দিয়ে গলে যেতে, মানে তিনি চাইছেন খুব সহজে, খুব নরমভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে। |
“পৃথিবী অনেক বড়ো, পৃথিবীকে ছোটো হতে নেই।” | কবি বলছেন, পৃথিবীটা অনেক বড়, এবং এটাকে ছোট হতে দেওয়া উচিত নয়। পৃথিবীটা যেন তার বিশালতা বজায় রাখে, ছোট না হয়। |
“পশুপাখি উদ্ভিদেরা কিছুমাত্র বিস্মিত হবে না, ওরা সব জেনে গেছে, মানুষের বেশি দেরি নেই।” | কবি বলছেন, পশুপাখি এবং গাছপালা ইতিমধ্যেই জেনে গেছে যে মানুষের সময় সীমিত। মানে, প্রকৃতি জানে যে মানুষের অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু মানুষ এখনও তা পুরোপুরি বুঝতে পারেনি। এই লাইনে কবি প্রকৃতির স্থায়ীত্ব এবং মানুষের ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের কথা বলছেন। |