কায়কোবাদ রচিত “প্রার্থনা” কবিতাটি একটি আধ্যাত্মিক ও ভক্তিমূলক কবিতা, যেখানে কবি স্রষ্টার কাছে নিজের হৃদয়ের আবেগ ও প্রার্থনা প্রকাশ করেছেন। নিচে প্রার্থনা কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা – কায়কোবাদ দেয়া হল।
প্রার্থনা কবিতার মূলভাব
কবি নিজেকে দরিদ্র ও নিঃসম্বল মনে করেন, স্রষ্টার কাছে গিয়ে দাঁড়ান। তাঁর হাতে কিছুই নেই, শুধু চোখের জল। তিনি বলেন, “হে প্রভু, আমি তোমার ভক্তি বা প্রশংসা করতে জানি না। আমার কাছে তোমার আরতি করার মতো কিছুই নেই। আমি শূন্য হাতে এসেছি, শুধু চোখের জল দিয়ে নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিতে চাই। আমাকে শক্তি দাও।” তিনি জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু কখনও স্রষ্টাকে ভোলেননি। তিনি বলেন, “জীবনের সব পরিস্থিতিতে তুমিই আমার ভরসা। আমাকে শক্তি দাও।” তিনি প্রকৃতির মধ্যে স্রষ্টার মহিমা দেখেন। পাখি, ফুল, ফল—সবই স্রষ্টার কৃপায় সুন্দর। তিনি বলেন, “হে প্রভু, তোমাকে ভুলতে পারি না। তোমার কৃপায় এই পৃথিবী এত সুন্দর। আমাকে শক্তি দাও।” শেষে কবি আবার প্রার্থনা করেন, “হে প্রভু, আমি শূন্য হাতে এসেছি। আমার দেহে ও হৃদয়ে শক্তি দাও, যেন আমি তোমার আরাধনায় নিজেকে নিবেদন করতে পারি।”
প্রার্থনা কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“বিভো, দেহ হৃদে বল!” | কবি স্রষ্টাকে সম্বোধন করে বলছেন, “হে প্রভু, আমার হৃদয়ে শক্তি দাও।” তিনি নিজেকে দুর্বল ও নিঃসম্বল মনে করেন এবং স্রষ্টার কাছে শক্তি চাইছেন। |
“না জানি ভকতি, নাহি জানি স্তুতি, কী দিয়া করিব, তোমার আরতি আমি নিঃসম্বল!” | কবি বলছেন, “হে প্রভু, আমি তোমার ভক্তি বা প্রশংসা করতে জানি না। আমার কাছে তোমার আরতি করার মতো কিছুই নেই। আমি সম্পূর্ণ নিঃসম্বল।” তিনি নিজেকে অক্ষম মনে করেন এবং স্রষ্টার কাছে সাহায্য চান। |
“তোমার দুয়ারে আজি রিক্ত করে দাঁড়ায়েছি প্রভো, সঁপিতে তোমারে শুধু আঁখি জল।” | “হে প্রভু, আজ আমি শূন্য হাতে তোমার দুয়ারে দাঁড়িয়েছি। আমার কাছে কিছুই নেই, শুধু চোখের জল। আমি এই চোখের জল দিয়ে নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিতে চাই।” |
“দারিদ্র্য পেষণে, বিপদের ক্রোড়ে, অথবা সম্পদে, সুখের সাগরে ভুলি নি তোমারে এক পল।” | “হে প্রভু, দারিদ্র্য ও বিপদে পিষ্ট হয়েছি, আবার সম্পদ ও সুখের সময়ও কাটিয়েছি। কিন্তু আমি এক মুহূর্তের জন্যও তোমাকে ভুলিনি।” তিনি স্রষ্টার প্রতি তাঁর অবিচল বিশ্বাস প্রকাশ করছেন। |
“জীবনে মরণে, শয়নে স্বপনে তুমি মোর পথের সম্বল।” | “হে প্রভু, জীবনে বা মরণে, ঘুমে বা জাগরণে—তুমিই আমার একমাত্র ভরসা।” তিনি স্রষ্টাকে জীবনের সব পরিস্থিতির সঙ্গী হিসেবে দেখেন। |
“কত জাতি পাখি, নিকুঞ্জ বিতানে সদা আত্মহারা তব গুণগানে, আনন্দে বিহ্বল!” | কবি প্রকৃতির উদাহরণ দিয়ে বলছেন, “হে প্রভু, কত রকম পাখি বাগানে তোমার গুণগান গেয়ে আত্মহারা হয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে।” তিনি প্রকৃতির মাধ্যমে স্রষ্টার মহিমা দেখছেন। |
“ভুলিতে তোমারে, প্রাণে অবসাদ, তরুলতা শিরে, তোমারি প্রসাদ চারু ফুল ফল!” | “হে প্রভু, তোমাকে ভুলে থাকতে পারি না। গাছপালা ও লতাগুল্ম তোমার কৃপায় সুন্দর ফুল ও ফল ধারণ করে।” তিনি স্রষ্টার কৃপায় প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছেন। |
“তোমারি নিঃশ্বাস বসন্তের বায়ু, তব স্নেহ কণা জগতের আয়ু, তব নামে অশেষ মঙ্গল!” | “হে প্রভু, তোমার নিঃশ্বাসই বসন্তের বাতাস, তোমার স্নেহই এই জগতের প্রাণ। তোমার নামেই অফুরন্ত মঙ্গল হয়।” তিনি স্রষ্টাকে জগতের সব কিছুর উৎস হিসেবে দেখেন। |
“গভীর বিষাদে, বিপদের ক্রোড়ে, একাগ্র হৃদয়ে স্মরিলে তোমারে নিভে শোকানল!” | “হে প্রভু, যখন গভীর দুঃখে বা বিপদে পড়ি, তখন একাগ্র মনে তোমাকে স্মরণ করলে আমার শোকের আগুন নিভে যায়।” তিনি স্রষ্টার স্মরণকে শান্তির উৎস হিসেবে দেখেন। |
“দেহ হৃদে বল!” | কবি আবার স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেন, “হে প্রভু, আমার হৃদয়ে শক্তি দাও।” তিনি স্রষ্টার কৃপা ও শক্তি কামনা করেন। |