প্রমথ চৌধুরীর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধটি আসলে বই পড়া, শিক্ষা এবং সাহিত্যচর্চার গুরুত্ব নিয়ে লেখা একটি চিন্তাভাবনা। এখানে লেখক বলতে চেয়েছেন যে বই পড়া মানুষের জন্য কতটা জরুরি, কিন্তু আমাদের সমাজে এই শখটাকে ঠিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নিচে বই পড়া প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
বই পড়া প্রবন্ধের মূলভাব
প্রমথ চৌধুরীর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে তিনি বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বই পড়া মানুষের জন্য খুবই জরুরি, কারণ এটি আমাদের মনকে সমৃদ্ধ করে এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। কিন্তু আমাদের সমাজে বই পড়াকে শখ হিসেবে দেখা হয় না, কারণ আমরা শুধু টাকা-পয়সা আর চাকরির পিছনে ছুটি। লেখক আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। স্কুল-কলেজে শুধু নোট মুখস্থ করানো হয়, কিন্তু ছাত্রদের মনের বিকাশ হয় না। এটাকে তিনি ‘গেলা-ওগলানো’ পদ্ধতি বলেছেন, যেখানে ছাত্ররা শুধু পরীক্ষায় পাশ করার জন্য পড়ে, কিন্তু সেই জ্ঞান তাদের জীবনে কাজে লাগে না। লেখক বলেছেন, সাহিত্যচর্চা বা বই পড়া মানুষের মনকে আনন্দ দেয় এবং জীবনের গভীর সত্য বোঝায়। লাইব্রেরি হলো মনের হাসপাতাল, যেখানে মানুষ নিজের ইচ্ছায় বই পড়ে এবং নিজেকে উন্নত করে। স্কুল-কলেজের চেয়ে লাইব্রেরি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে মানুষ স্বাধীনভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
বই পড়া প্রবন্ধের বিষয়বস্তু
লেখক বলেছেন, আমাদের দেশে মানুষ বই পড়াকে শখ হিসেবে নেয় না, কারণ আমরা জাতি হিসেবে শৌখিন নই। আমাদের জীবনযাত্রায় এত সমস্যা, এত দুঃখ-দারিদ্র্য আছে যে, বই পড়ার মতো আনন্দের জিনিসকে আমরা গুরুত্ব দিই না। আমরা মনে করি, শিক্ষা শুধু চাকরি পাওয়ার জন্য, টাকা-পয়সা কামানোর জন্য। কিন্তু লেখক বলেছেন, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো আমাদের মনকে বড় করা, আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে সমৃদ্ধ করা। আর এই কাজে সাহিত্যচর্চা বা বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক আরও বলেছেন, আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষা পদ্ধতিতে অনেক সমস্যা আছে। সেখানে ছাত্রদের শুধু নোট মুখস্থ করানো হয়, পরীক্ষায় পাশ করানোর জন্য। কিন্তু এই পদ্ধতিতে ছাত্রদের মনের বিকাশ হয় না। তারা শুধু তথ্য মুখস্থ করে, কিন্তু সেই তথ্য তাদের জীবনে কাজে লাগে না। লেখক এটাকে ‘গেলা-ওগলানো’ পদ্ধতি বলেছেন। যেমন কেউ যদি লোহার গোলা গিলে ফেলে আবার বের করে দেয়, তাতে তার কোনো লাভ হয় না। ঠিক তেমনই ছাত্ররা নোট মুখস্থ করে পরীক্ষায় লিখে দেয়, কিন্তু সেই জ্ঞান তাদের জীবনে কোনো কাজে আসে না।
লেখক বলেছেন, সাহিত্যচর্চা বা বই পড়া মানুষের মনকে জাগ্রত করে, আনন্দ দেয় এবং জীবনের অর্থ বোঝায়। সাহিত্য শুধু গল্প-কবিতা নয়, এটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে গভীর সত্যকে প্রকাশ করে। তিনি বলেছেন, লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার হলো মনের হাসপাতাল। যেখানে মানুষ নিজের ইচ্ছায় বই পড়ে, নিজের মনকে সমৃদ্ধ করে। স্কুল-কলেজের চেয়ে লাইব্রেরি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে মানুষ স্বাধীনভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
লেখকের মূল বার্তা হলো, আমাদের বই পড়া উচিত, কারণ বই পড়া ছাড়া আমাদের মন ও আত্মার উন্নতি সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন, সাহিত্যচর্চা ছাড়া কোনো জাতি প্রকৃতভাবে উন্নত হতে পারে না। তাই আমাদের উচিত বেশি করে লাইব্রেরি তৈরি করা এবং বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।