বাঁচতে দাও কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

শামসুর রাহমানের “বাঁচতে দাও” কবিতায় প্রকৃতি, পরিবেশ এবং প্রাণিজগতের স্বাভাবিক বিকাশের প্রতি যে আবেদন রয়েছে, তা আমাদের সচেতন করে তোলে। নিচে বাঁচতে দাও কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেয়া হল।

বাঁচতে দাও কবিতার মূলভাব

শামসুর রাহমানের “বাঁচতে দাও” কবিতাটিতে কবি আমাদের চারপাশের ছোট ছোট সুন্দর জিনিসগুলোর কথা বলছেন—যেগুলো আমরা অনেক সময় অবহেলা করি বা গুরুত্ব দিই না। যেমন: ফুল ফোটে, পাখি উড়ে, শিশুরা খেলে, নদীতে নৌকা ভাসে—এগুলো আমাদের জীবনের সাধারণ কিন্তু সুন্দর দৃশ্য। কবি বলছেন, এই সুন্দর জিনিসগুলোকে মুক্তভাবে থাকতে দাও, তাদের বাঁচতে দাও। প্রকৃতি, মানুষ এবং প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার দিতে হবে। আমরা যদি প্রকৃতিকে ধ্বংস করি, সবুজ গাছপালা কেটে ফেলি, নদী-নালা দূষিত করি, তাহলে শুধু প্রকৃতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, মানুষ এবং প্রাণীরাও বিপদে পড়বে। কবি বলছেন, শিশুদের খেলাধুলা, পাখির উড়াল, ফুলের সৌন্দর্য—এগুলো সবই জীবনের অংশ। এগুলোকে বাঁচতে দিলে আমাদের জীবনও সুন্দর হবে।

বাঁচতে দাও কবিতার ব্যাখ্যা

লাইনব্যাখ্যা
“এই তো দ্যাখো ফুলবাগানে গোলাপ ফোটে, ফুটতে দাও।”কবি বলছেন, ফুলবাগানে গোলাপ ফুটছে। এটি প্রকৃতির একটি সাধারণ কিন্তু সুন্দর দৃশ্য। কবি চান, এই গোলাপ যেন অবাধে ফুটতে পারে, কেউ যেন তাকে বাধা না দেয়। এটি শুধু গোলাপের কথাই নয়, বরং প্রকৃতির সব সৌন্দর্যকে মুক্তভাবে বিকশিত হতে দেওয়ার আহ্বান।
“রঙিন কাটা ঘুড়ির পিছে বালক ছোটে, ছুটতে দাও।”শিশুরা রঙিন ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দে ছুটছে। কবি বলছেন, শিশুদের এই আনন্দময় মুহূর্তগুলোকে যেন কেউ নষ্ট না করে। তাদের স্বাধীনভাবে খেলতে দাও, কারণ শিশুদের এই খেলাধুলা তাদের বিকাশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
“নীল আকাশের সোনালি চিল মেলছে পাখা, মেলতে দাও।”আকাশে সোনালি রঙের চিল পাখি ডানা মেলে উড়ছে। কবি বলছেন, এই পাখিটাকে মুক্তভাবে উড়তে দাও। এটি শুধু একটি পাখির কথা নয়, বরং সব প্রাণীর স্বাধীনতার প্রতীক।
“জোনাক পোকা আলোর খেলা খেলছে রোজই, খেলতে দাও।”রাতে জোনাকি পোকা আলো জ্বালিয়ে খেলছে। এটি প্রকৃতির একটি মায়াময় দৃশ্য। কবি বলছেন, এই জোনাকিদের আলোর খেলাকে যেন কেউ বাধা না দেয়। তাদেরও বাঁচতে দাও।
“মধ্য দিনে নরম ছায়ায় ডাকছে ঘুঘু, ডাকতে দাও।”দুপুরের নরম ছায়ায় ঘুঘু পাখি ডাকছে। কবি বলছেন, এই পাখিটাকে তার স্বাভাবিকভাবে ডাকতে দাও। এটি প্রকৃতির শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক।
“বালির ওপর কত্ত কিছু আঁকছে শিশু, আঁকতে দাও।”শিশুরা বালির ওপর নানা রকম ছবি আঁকছে। কবি বলছেন, শিশুদের এই সৃজনশীলতাকে যেন কেউ থামিয়ে না দেয়। তাদের মুক্তভাবে আঁকতে দাও, কারণ এটি তাদের মানসিক বিকাশের জন্য জরুরি।
“কাজল বিলে পানকৌড়ি নাইছে সুখে, নাইতে দাও।”কাজল বিলে পানকৌড়ি পাখি সুখে সাঁতার কাটছে। কবি বলছেন, এই পাখিটাকে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দাও। প্রকৃতির এই সুখময় দৃশ্যকে যেন কেউ নষ্ট না করে।
“গহিন গাঙে সুজন মাঝি বাইছে নাও, বাইতে দাও।”গভীর নদীতে একজন মাঝি নৌকা বাইছে। কবি বলছেন, এই মাঝিকে তার কাজ করতে দাও। এটি মানুষের শ্রম ও সংগ্রামের প্রতীক, যা প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত।
“নরম রোদে শ্যামা পাখি নাচ জুড়েছে, নাচতে দাও।”নরম রোদে শ্যামা পাখি নাচছে। কবি বলছেন, এই পাখিটাকে তার নাচতে দাও। এটি প্রকৃতির আনন্দ ও সৌন্দর্যের প্রতীক।
“শিশু, পাখি, ফুলের কুঁড়ি—সবাইকে আজ বাঁচতে দাও।”কবি শেষ লাইনে একটি সবার জন্য আবেদন রাখেন। তিনি বলছেন, শিশু, পাখি, ফুলের কুঁড়ি—সবাইকে বাঁচতে দাও। এটি শুধু প্রকৃতির জন্যই নয়, বরং সব জীবের জন্য স্বাধীনতা ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলে।

Related Posts

Leave a Comment