শামসুজ্জামান খানের ‘বাংলা নববর্ষ’ লেখাটি বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য, ইতিহাস, এবং উৎসবের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। নিচে বাংলা নববর্ষ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
বাংলা নববর্ষ গল্পের মূলভাব
শামসুজ্জামান খানের ‘বাংলা নববর্ষ’ লেখাটি বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য, ইতিহাস, এবং উৎসবের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি, যা শুধু আনন্দের উৎসবই নয়, বরং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি সুখ, শান্তি, ও কল্যাণ কামনার দিন। বাংলা সনের শুরু মুগল সম্রাট আকবরের সময়ে, যিনি চান্দ্র হিজরি সন ও সৌর সনের সমন্বয় করে বাংলা সন চালু করেন। পাকিস্তান আমলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বাধা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাঙালিরা এই আঘাত সহ্য করেনি এবং নববর্ষ উদযাপনের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে। নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুণ্যাহ, হালখাতা, এবং বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রামে বলী খেলা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈসাবী উৎসবের মতো আঞ্চলিক উৎসবও নববর্ষের সাথে জড়িত। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপন আরও বড় আকারে হয়, বিশেষ করে ঢাকার রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে নববর্ষের উৎসব পালিত হয়। বাংলা নববর্ষ শুধু একটি উৎসবই নয়, বরং এটি বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির জন্য এর তাৎপর্য অপরিসীম।
বাংলা নববর্ষ গল্পের বিষয়বস্তু
১. বাংলা নববর্ষ কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। এটি শুধু আনন্দের উৎসবই নয়, বরং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি সুখ, শান্তি, ও কল্যাণ কামনার দিন।
- এই দিনে সবাই একে অপরকে “শুভ নববর্ষ” শুভেচ্ছা জানায় এবং নতুন বছরের শুভ কামনা করে।
২. বাংলা সনের ইতিহাস:
- বাংলা সনের শুরু মুগল সম্রাট আকবরের সময়ে। তিনি চান্দ্র হিজরি সন ও সৌর সনের সমন্বয় করে বাংলা সন চালু করেন।
- বাংলা সনকে ‘সন’ বা ‘সাল’ বলা হয়, যা আরবি ও ফারসি শব্দ। তবে অনেকেই একে ‘বঙ্গাব্দ’ নামেও ডাকে।
৩. পাকিস্তান আমলে নববর্ষের সংগ্রাম:
- পাকিস্তান আমলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বাধা দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানি সরকার বলেছিল, এই উৎসব তাদের আদর্শের বিরোধী।
- কিন্তু বাঙালিরা এই আঘাত সহ্য করেনি। তারা নববর্ষ উদযাপনের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করে, কিন্তু পরে পাকিস্তানি সরকার তা বাতিল করে দেয়।
- তবুও বাঙালিরা নববর্ষ উদযাপন চালিয়ে যায়, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে নববর্ষের উৎসব শুরু করে, যা এখনও চলছে।
৪. নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান:
- পুণ্যাহ: নবাব ও জমিদাররা পয়লা বৈশাখে প্রজাদের আমন্ত্রণ জানাতেন এবং খাজনা আদায়ের পাশাপাশি মিষ্টিমুখ করাতেন।
- হালখাতা: ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের হিসাব খুলতেন এবং গ্রাহকদের বাকি পরিশোধের মাধ্যমে নতুন বছরের সূচনা করতেন। দোকানগুলো সাজানো হতো, মিষ্টি বিতরণ করা হতো।
- বৈশাখী মেলা: গ্রামে-গঞ্জে বৈশাখী মেলা বসে, যেখানে নাচ, গান, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, এবং নানা ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি হতো। এই মেলাগুলো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হতো।
৫. আঞ্চলিক উৎসব:
- চট্টগ্রামে বলী খেলা (কুস্তি খেলা) এবং আমানি (কৃষক পরিবারের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান) এর মতো আঞ্চলিক উৎসবও নববর্ষের সাথে জড়িত।
- পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সম্প্রদায় বৈসাবী উৎসব পালন করে, যা বৈসুব, সাংগ্রাই, ও বিজু উৎসবের সমন্বয়ে গঠিত।
৬. স্বাধীন বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপন:
- স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপন আরও বড় আকারে হয়। ঢাকার রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে নববর্ষের উৎসব লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে পরিণত হয়।
- বাংলা একাডেমিতে বৈশাখী মেলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নববর্ষের উৎসব আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করে। সবাই নতুন পোশাক পরে, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলের গান, ও লোকসংগীতের মাধ্যমে উৎসব পালন করে।
৭. নববর্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য:
- বাংলা নববর্ষ শুধু একটি উৎসবই নয়, বরং এটি বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি বাঙালির জাতীয় চেতনা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথেও জড়িত।
- নববর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে বাঙালি তার সংস্কৃতিকে লালন ও বিকশিত করে।
৮. উপসংহার:
- বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে একটি আনন্দদায়ক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু একটি উৎসবই নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।