শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয় এবং বিলাসীর চরিত্রের মাধ্যমে তিনি সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্প বলেছেন। গল্পে মৃত্যুঞ্জয় এবং বিলাসীর ট্র্যাজিক পরিণতি ঘটে। নিচে বিলাসী গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
বিলাসী গল্পের মূলভাব
গ্রামের ছেলেরা স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন দুই ক্রোশ পথ হেঁটে যায়, বর্ষায় কাদা এবং গ্রীষ্মে ধুলোর মধ্যে দিয়ে তাদের যাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে। মৃত্যুঞ্জয় নামের এক ছেলে, যার বয়স অন্যান্যদের চেয়ে বেশি, সে থার্ড ক্লাসে পড়ে কিন্তু কখনোই ক্লাস পরিবর্তন হয় না। তার পরিবারের কেউ নেই, শুধু একটি আম-কাঁঠালের বাগান এবং একটি পোড়ো বাড়ি। একদিন সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে, এবং গ্রামের লোকেরা ভাবে সে মারা যাবে। কিন্তু মালোপাড়ার এক বুড়ো সাপুড়ে এবং তার মেয়ে বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করে তাকে বাঁচিয়ে তোলে। বিলাসী দিনরাত তার পাশে থেকে যত্ন করে। গল্পের কথক একদিন মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতে যায় এবং দেখে সে এখনও দুর্বল, কিন্তু বেঁচে আছে। বিলাসীর কঠোর পরিশ্রম এবং সেবার কারণে মৃত্যুঞ্জয়ের জীবন বেঁচে যায়।
মৃত্যুঞ্জয় এবং বিলাসীর বিয়ে হয়, কিন্তু গ্রামের লোকেরা এই বিয়ে নিয়ে রাগান্বিত হয়। খুড়া এবং গ্রামের কিছু লোক মিলে বিলাসীকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা বিলাসীকে জোর করে ধরে ফেলে, কেউ তার চুল টানে, কেউ কান ধরে। মৃত্যুঞ্জয়, যিনি অসুস্থ এবং ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে আছে, সে পাগলের মতো মাথা কুটে এবং দরজায় লাথি মারে। গল্পের কথক এই দৃশ্য দেখে কান্না পায়, কিন্তু কিছু করতে পারে না। গ্রামের লোকেরা মনে করে, মৃত্যুঞ্জয়ের অন্নপাপ (বিলাসীর হাতের ভাত খাওয়া) এর কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন পরে কথক দেখেন, মৃত্যুঞ্জয় এখন সাপুড়ে হয়ে গেছে এবং বিলাসীর সাথে সুখে আছে। একদিন সাপ ধরার সময় মৃত্যুঞ্জয় একটি গোখরো সাপের কামড় খেয়ে মারা যায়। বিলাসী তার স্বামীর মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। গ্রামের লোকেরা এই ঘটনাকে অন্নপাপ বলে নিন্দা করে।
বিলাসী গল্পের মূল বিষয়বস্তু
গ্রামের কিছু ছেলে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন দুই ক্রোশ (প্রায় চার মাইল) পথ হেঁটে যায়। তাদের জীবন খুব কঠিন, কারণ স্কুলে যাওয়ার পথে তাদের বর্ষায় কাদা এবং গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম ও ধুলোর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই কষ্টের কারণে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। লেখক বলছেন, এই ছেলেরা বড় হয়ে হয় গ্রামেই থাকে, নয়তো জীবিকার তাগিদে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু তাদের এই কষ্টকর শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
এরপর আমরা মৃত্যুঞ্জয় নামের একটি চরিত্রের সাথে পরিচিত হই। সে গ্রামের একটি ছেলে, যার বয়স অন্যান্য ছেলেদের চেয়ে বেশি। সে থার্ড ক্লাসে পড়ে, কিন্তু কখনোই তার ক্লাস পরিবর্তন হয় না। মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের কেউ নেই, শুধু তার একটি বড় আম-কাঁঠালের বাগান এবং একটি পোড়ো বাড়ি আছে। তার এক খুড়া আছেন, যিনি মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পর্কে নানা রকম খারাপ কথা ছড়ান। মৃত্যুঞ্জয় নিজে রান্না করে খায় এবং আমের মৌসুমে বাগান থেকে আয় করে তার খরচ চালায়।
একদিন মৃত্যুঞ্জয় খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। গ্রামের লোকেরা ভাবে সে মারা যাবে। কিন্তু মালোপাড়ার এক বুড়ো সাপুড়ে এবং তার মেয়ে বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করে তাকে বাঁচিয়ে তোলে। বিলাসী দিনরাত মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে থেকে তার যত্ন করে। একদিন গল্পের কথক (যিনি গল্পটি বলছেন) মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতে যায়। সেখানে সে দেখে, মৃত্যুঞ্জয় এখনও দুর্বল, কিন্তু বেঁচে আছে। বিলাসী তার শিয়রে বসে পাখা নাড়ছে। কথক বুঝতে পারে, বিলাসীর কঠোর পরিশ্রম এবং সেবার কারণেই মৃত্যুঞ্জয় বেঁচে আছে।
মৃত্যুঞ্জয় এবং বিলাসীর বিয়ে হয়। মৃত্যুঞ্জয় এবং বিলাসীর বিয়ে নিয়ে গ্রামের লোকেরা খুব রাগান্বিত। খুড়া এবং গ্রামের কিছু লোক মিলে বিলাসীকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা বিলাসীকে জোর করে ধরে ফেলে। কেউ তার চুল টানে, কেউ কান ধরে, কেউ হাত ধরে। বিলাসী প্রথমে চিৎকার করে, কিন্তু পরে চুপ হয়ে যায়। সে অনুরোধ করে যে, তাকে একটু সময় দেয়া হোক, যাতে সে রুটি গুলো ঘরে রেখে আসতে পারে, নইলে মৃত্যুঞ্জয় সারারাত খেতে পাবে না। কিন্তু কেউ তার কথা শোনে না।
মৃত্যুঞ্জয়, যিনি তখনও অসুস্থ এবং ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে আছে, সে পাগলের মতো মাথা কুটে এবং দরজায় লাথি মারে। সে গালিগালাজ করে, কিন্তু কেউ তার কথায় কান দেয় না। গ্রামের লোকেরা বিলাসীকে জোর করে টেনে নিয়ে যায়। গল্পের কথক (যিনি গল্পটি বলছেন) এই দৃশ্য দেখে কান্না পায়, কিন্তু সে কিছু করতে পারে না।
গ্রামের লোকেরা মনে করে যে, মৃত্যুঞ্জয়ের অন্নপাপ (অর্থাৎ, বিলাসীর হাতের ভাত খাওয়া) এর কারণে এই সব ঘটনা ঘটেছে। তারা মনে করে, বিলাসীকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়াই ঠিক কাজ। তারা মনে করে, মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে বিলাসীর বিয়ে এবং তার হাতের ভাত খাওয়া অমার্জনীয় অপরাধ।
গল্পের কথক একদিন তিনি মালোপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ দেখেন মৃত্যুঞ্জয় একটি কুটিরের দরজায় বসে আছে। মৃত্যুঞ্জয় এখন পুরোপুরি সাপুড়ে হয়ে গেছে। তার মাথায় গেরুয়া পাগড়ি, বড় দাড়ি-চুল, গলায় রুদ্রাক্ষ ও পুঁতির মালা। কথক আশ্চর্য হন যে, মৃত্যুঞ্জয়, যিনি কায়স্থ পরিবারের ছেলে ছিলেন, তিনি কীভাবে এত দ্রুত তার পূর্বপুরুষের জাত ত্যাগ করে সাপুড়ে হয়ে গেলেন।
কথক মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে দেখা করেন এবং মৃত্যুঞ্জয় তাকে সম্মান দেখায়। বিলাসী পুকুর থেকে জল আনতে গিয়েছিল, সে ফিরে এসে কথককে দেখে খুব খুশি হয়। বিলাসী বলে, “তুমি না থাকলে সেই রাতে তারা আমাকে মেরে ফেলত। আমার জন্য তুমি কত মার খেয়েছ।” কথক জানতে পারেন যে, মৃত্যুঞ্জয় এবং বিলাসী এখন সুখে আছে এবং সাপ ধরার কাজ করে।
কথকের ছেলেবেলা থেকে দুটি শখ ছিল: গোখরা সাপ ধরে পোষা এবং মন্ত্র সিদ্ধ হওয়া। তিনি মৃত্যুঞ্জয়কে তার গুরু হিসেবে পেয়ে আনন্দিত হন। মৃত্যুঞ্জয় তাকে সাপ ধরার মন্ত্র এবং হিসাব শেখায় এবং কবজিতে ওষুধ সমেত মাদুলি বেঁধে দেয়। কথক সাপ ধরার কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং চারিদিকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। সবাই তাকে গুণী লোক বলে মনে করে।
একদিন মৃত্যুঞ্জয়, বিলাসী এবং কথক (গল্পের বর্ণনাকারী) এক গোয়ালার বাড়িতে সাপ ধরতে যায়। সেখানে তারা একটি গর্ত খুঁড়ে সাপের চিহ্ন পায়। বিলাসী সতর্ক করে যে, সাপ একটি নয়, একজোড়া হতে পারে। মৃত্যুঞ্জয় একটি বড় গোখরো সাপ ধরে ফেলে, কিন্তু সাপটি তাকে কামড়ায়। মৃত্যুঞ্জয়ের হাত থেকে রক্ত পড়তে থাকে। বিলাসী তাড়াতাড়ি তার হাত বেঁধে দেয় এবং বিভিন্ন ওষুধ ও মন্ত্র ব্যবহার করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুই কাজ করে না। মৃত্যুঞ্জয় মারা যায়।
বিলাসী তার স্বামীর মৃত্যু সহ্য করতে পারে না এবং আত্মহত্যা করে। গ্রামের লোকেরা এই ঘটনাকে অন্নপাপ (অর্থাৎ, মৃত্যুঞ্জয়ের অন্যায় কাজের ফল) বলে মনে করে এবং বিলাসীর আত্মহত্যাকে নিন্দা করে।