বুধুয়ার পাখি কবিতার বিষয়বস্তু ও ব্যাখ্যা

“বুধুয়ার পাখি” অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের একটি সুন্দর কবিতা, যা গ্রামীণ ও শহুরে জীবনের বৈপরীত্য এবং বুধুয়ার কল্পনাপ্রবণ মনের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। নিচে বুধুয়ার পাখি কবিতার বিষয়বস্তু ও ব্যাখ্যা দেওয়া হল।

বুধুয়ার পাখি কবিতার বিষয়বস্তু

এই কবিতাটি বুধুয়া নামের এক ছোট্ট ছেলের কথা বলে। বুধুয়া গ্রামে থাকে, তার একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর আছে। তার বাড়ির উঠোনে নরম মাটি, সেখানে দলে দলে নীল পাখি এসে ধান খায়। বুধুয়া এই দৃশ্য দেখে খুব খুশি হয়।

একদিন বুধুয়া শহুরে এক বাড়ি দেখে। সেই বাড়িটা আগে খুব সুন্দর ছিল, কিন্তু এখন সেখানে শ্যাওলা জমেছে, দেয়ালে জানালায় সব ঢেকে গেছে। মনে হয় যেন বাড়িটার খুব দেনা হয়ে গেছে, তাই সেখানে কোনো পাখিও বসে না। বুধুয়া ভাবে, তার ছোট্ট কুঁড়েঘর এই বাড়ির চেয়ে ঢের ভালো, কারণ সেখানে পাখিরা আসে, আনন্দ করে।

তারপর বুধুয়া একদিন মাঠে ঘুরতে বেরোয়। সে গ্রামের পথ ভুলে যায়, আর হঠাৎ একটা পাহাড়ে উঠে যায়। সেখানে সে একটা বাড়ি দেখে, যেটা তার চেয়েও সুন্দর। সেই বাড়ির উঠোন খুব পরিষ্কার, আর সেখানে পাখিরা বসে। বুধুয়া ভাবে, “ওই বাড়িটা কার? সেখানে আমিও যেতে চাই!” বুধুয়া প্রতিদিন এই স্বপ্ন দেখে। তার ডাকে পাখিরা আসে, তার হাসি নিয়ে যায়। কবিতাটা এভাবেই বুধুয়ার কল্পনা আর প্রকৃতির সাথে তার মেলবন্ধনকে দেখায়।

এই কবিতায় বুধুয়ার সরল জীবন, তার কল্পনা আর প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। বুধুয়া শহুরে বাড়ির চেয়ে তার গ্রামের ছোট্ট কুঁড়েঘরকেই বেশি ভালোবাসে, কারণ সেখানে পাখিরা আসে, আনন্দ করে। তার মনের মধ্যে একটা স্বপ্ন থাকে, সে আরও সুন্দর জায়গায় যেতে চায়, যেখানে পাখিরা বসবে, সবাই মিলে খুশিতে থাকবে।

বুধুয়ার পাখি কবিতার ব্যাখ্যা

কবিতার লাইনব্যাখ্যা
“জানো এটা কার বাড়ি? শহুরে বাবুরা ছিল কাল,”বুধুয়া একটা বাড়ি দেখছে আর ভাবছে, “এটা কার বাড়ি?” এই বাড়িটা আগে শহুরে বাবুদের ছিল, মানে ধনী লোকেরা এখানে থাকত। কিন্তু এখন সেটা পরিত্যক্ত, কেউ নেই।
“ভীষণ শ্যাওলা এসে আজ তার জানালা দেয়াল ঢেকে গেছে,”এখন বাড়িটার দেয়ালে, জানালায় শ্যাওলা জমে গেছে। সবকিছু ঢেকে গেছে, বাড়িটা যেন অবহেলায় পড়ে আছে।
“যেন ওর ভয়ানক বেড়ে গেছে দেনা, তাই কোনো পাখিও বসে না।”বাড়িটার এমন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যেন বাড়িটার অনেক দেনা হয়ে গেছে (ঋণ), তাই এখানে কোনো পাখিও বসে না। পাখিরা পর্যন্ত এখানে আসতে চায় না।
“এর চেয়ে আমাদের কুঁড়েঘর ঢের ভালো, ঢের”বুধুয়া ভাবে, এই শহুরে বাড়ির চেয়ে তার গ্রামের ছোট্ট কুঁড়েঘর ঢের ভালো। তার বাড়িটা ছোট হলেও সেখানে সুখ আর শান্তি আছে।
“দলে-দলে নীল পাখি নিকোনো নরম উঠোনের ধান খায়, ধান খেয়ে যাবে…”বুধুয়ার বাড়ির উঠোন খুব পরিষ্কার আর নরম মাটিতে দলে দলে নীল পাখি এসে ধান খায়। পাখিরা ধান খেয়ে চলে যায়, কিন্তু বুধুয়ার মনে আনন্দ থাকে।
“বুধুয়া অবাক হয়ে ভাবে।”বুধুয়া এই সব দেখে অবাক হয়। তার মনে নানা প্রশ্ন জাগে, সে কল্পনার জগতে হারিয়ে যায়।
“এবার রিখিয়া ছেড়ে বাবুডির মাঠে বুধুয়া অবাক হয়ে হাঁটে,”এবার বুধুয়া গ্রামের পথ ছেড়ে শহুরে বাবুদের মাঠে হাঁটতে থাকে। সে এই নতুন জায়গা দেখে অবাক হয়।
“দেহাতি পথের নাম ভুলে হঠাৎ পাহাড়ে উঠে পাহাড়ের মতো মুখ তুলে ভাবে:”বুধুয়া গ্রামের পথ ভুলে যায় আর হঠাৎ একটা পাহাড়ে উঠে যায়। সে পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে দাঁড়ায় আর ভাবে।
“ওটা কার বাড়ি, কার অত নীল,”বুধুয়া দেখে, দূরে একটা বাড়ি আছে, যেটা খুব সুন্দর, খুব নীল। সে ভাবে, “ওটা কার বাড়ি? কার এত সুন্দর নীল বাড়ি?”
“আমার ঘরের চেয়ে আরো ভালো, আরো নিকোনো উঠোন তার, পাখিবসা বিরাট পাঁচিল।”বুধুয়া ভাবে, এই বাড়িটা তার বাড়ির চেয়েও ভালো। এখানে উঠোন খুব পরিষ্কার, আর পাখিরা বসে এমন একটা বড় পাঁচিল আছে।
“ওখানে আমিও যাব, কে আমায় নিয়ে যেতে পারো?”বুধুয়া ভাবে, “আমিও ওই বাড়িতে যেতে চাই। কে আমাকে নিয়ে যাবে?”
 “এইভাবে প্রতিদিন বুধুয়ার ডাকে কানায় কানায় আলো পথের কলশে ভরা থাকে,”বুধুয়া প্রতিদিন এই স্বপ্ন দেখে। তার ডাকে পথের কলসি আলোয় ভরে যায়, মানে তার কল্পনার জগৎ আলোয় ভরপুর।
“ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি আসে, কেউ তার দিদি, কেউ মাসি,”বুধুয়ার ডাকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে। বুধুয়া মনে করে, এই পাখিরা তার দিদি, মাসি, মানে তার পরিবারের মতো।
“রূপোলি ডানায় যারা নিয়ে যায় বুধুয়ার হাসি।”পাখিরা তাদের রূপোলি ডানায় বুধুয়ার হাসি নিয়ে যায়। মানে বুধুয়ার আনন্দ পাখিদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

Related Posts

Leave a Comment