?> বৃষ্টি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা - ফররুখ আহমদ - Ena School

বৃষ্টি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা – ফররুখ আহমদ

বৃষ্টি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা - ফররুখ আহমদ

ফররুখ আহমদের ‘বৃষ্টি’ কবিতাটিতে বৃষ্টির আগমনকে কেন্দ্র করে প্রকৃতি এবং মানুষের আবেগ, আনন্দ, এবং স্মৃতিগুলো ফুটে উঠেছে। নিচে বৃষ্টি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেওয়া হল।

বৃষ্টি কবিতার মূলভাব

ফররুখ আহমদের ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি প্রকৃতি এবং মানুষের আবেগের মেলবন্ধনকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে। কবিতায় বৃষ্টির আগমনকে কেন্দ্র করে প্রকৃতির পরিবর্তন এবং মানুষের মনে জাগ্রত অনুভূতিগুলো প্রকাশ পেয়েছে। বৃষ্টি শুধু মাঠ-ঘাট, নদী-নালাকে প্রাণবন্ত করে না, মানুষের মনকেও সজীব করে তোলে। বৃষ্টির ধারায় ধানক্ষেত, বন, এবং শুকনো মাঠ সবাই প্রাণ ফিরে পায়। কবিতায় বৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃতির রুক্ষতা দূর হয়ে যায়, এবং চারদিক স্নিগ্ধ ও প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে। মানুষের মনে বৃষ্টির শব্দ পুরনো স্মৃতি জাগিয়ে তোলে—কেউ সুখময় অতীতের কথা ভাবে, আবার কেউ একাকীত্ব বা বিরহের অনুভূতি অনুভব করে। 

বৃষ্টি কবিতার ব্যাখ্যা

কবিতার লাইনব্যাখ্যা
“বৃষ্টি এলো… বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি।”কবিতার শুরুতে কবি বলেছেন, বহুদিন অপেক্ষার পর অবশেষে বৃষ্টি এলো। এই বৃষ্টি শুধু পানির ফোঁটা নয়, এটি প্রকৃতি এবং মানুষের জন্য আশীর্বাদের মতো। দীর্ঘ সময় ধরে শুকনো মাঠ, নদী, এবং গাছপালা বৃষ্টির জন্য তৃষ্ণার্ত ছিল। বৃষ্টির আগমনে সবাই প্রাণ ফিরে পায়।
“পদ্মা মেঘনার দুপাশে আবাদি গ্রামে, বৃষ্টি এলো পূবের হাওয়ায়।”পদ্মা ও মেঘনা নদীর দুপাশের গ্রামগুলো কৃষিপ্রধান এলাকা। সেখানে বৃষ্টি এলো পূর্ব দিকের হাওয়ার সঙ্গে। এই বৃষ্টি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ, কারণ এটি ফসলের জমিকে সজীব করে তোলে।
“বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়।”আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে, আর মাঠে কাজল রঙের ছায়া পড়েছে। এখানে ‘বিদগ্ধ আকাশ’ বলতে মেঘে ঢাকা আকাশকে বোঝানো হয়েছে, যা বৃষ্টির আগমনকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
“বিদ্যুৎ-রূপসী পরী মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার।”বিদ্যুতের চমককে কবি একটি সুন্দরী পরীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই পরী যেন মেঘে মেঘে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
“দিকদিগন্তের পথে অপরূপ আভা দেখে তার।”বৃষ্টির সময় আকাশে মেঘের খেলা এবং বিদ্যুতের চমক চারদিকে এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে।
“বর্ষণ-মুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়।”বৃষ্টির দিনে অরণ্যের কেয়া ফুল (এক ধরনের সাদা ফুল) শিহরিত হয়। বৃষ্টির ফোঁটায় প্রকৃতি যেন প্রাণ পায়, এবং সবকিছু সজীব হয়ে ওঠে।
“রৌদ্র-দখ ধানক্ষেত আজ তার স্পর্শ পেতে চায়।”রোদে শুকনো ধানক্ষেত বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায়। বৃষ্টির পানিতে ধানক্ষেত প্রাণ ফিরে পায়, যা কৃষকদের জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে আনে।
“নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার।”বৃষ্টির পানিতে নদীর ফাটল ভরে যায়, এবং বন্যার জোয়ার আসে। 
“রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন।”দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠ-ঘাট শুকিয়ে গিয়েছিল, যেন রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির শুষ্ক হাতের মতো। বৃষ্টির আগমনে এই শুষ্কতা দূর হয়, এবং প্রকৃতি আবার প্রাণ ফিরে পায়।
“রুক্ষ মাঠ আসমান শোনে সেই বর্ষণের সুর”এই লাইনে কবি বলেছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে শুকনো এবং রুক্ষ মাঠ (যেন রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির শুষ্ক হাতের মতো) বৃষ্টির সুর শুনছে। বৃষ্টির আগমনে মাঠ-ঘাট, আকাশ, এবং প্রকৃতি সবাই যেন বৃষ্টির মিষ্টি সুরে মগ্ন হয়ে গেছে। 
“তৃষিত বনের সাথে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন।”বৃষ্টির আগমনে শুকনো বন যেমন প্রাণ ফিরে পায়, তেমনি মানুষের মনও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বৃষ্টি মানুষের মনে নতুন আশা এবং উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে।
“পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর।”বৃষ্টির দিনে মানুষের মনে নতুন উদ্যম আসে। তারা নতুন পথে যাত্রা করতে চায়, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়।
“যেখানে বিস্মৃত দিন পড়ে আছে নিঃসঙ্গ নির্জন।”বৃষ্টির দিনে মানুষের মনে পুরনো স্মৃতি জাগে। সেই স্মৃতিগুলো যেন নিঃসঙ্গ এবং বিস্মৃত দিনের মতো মনে পড়ে।
“সেখানে বর্ষার মেঘ জাগে আজ বিষণ্ণ মেদুর।”বৃষ্টির দিনে কখনো আনন্দ, আবার কখনো বিষণ্ণতা জাগে। বর্ষার মেঘ যেন মানুষের মনে একাকীত্ব এবং বিষণ্ণতার অনুভূতি নিয়ে আসে।

Related Posts

1 thought on “বৃষ্টি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা – ফররুখ আহমদ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top