মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর ‘মানুষ মুহম্মদ (স)’ প্রবন্ধে হযরত মুহাম্মদ (সা.) শুধু একজন ধর্মীয় নেতা ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন এক আদর্শ মানুষ। তার জীবনে ত্যাগ, সহিষ্ণুতা, দয়া, বিনয়, ন্যায়পরায়ণতা সবকিছু একসঙ্গে বিরাজ করত। তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য নন, বরং গোটা মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। নিচে মানুষ মুহাম্মদ সাঃ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
মানুষ মুহাম্মদ সাঃ গল্পের মূলভাব
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর ঘটনা ছিল সবার জন্য অত্যন্ত কষ্টের। তার সাহাবিরা কখনোই কল্পনা করতে পারেননি যে, একদিন তিনি তাদের ছেড়ে চলে যাবেন। যখন তিনি মারা যান, তখন মদিনার মানুষ যেন বিশ্বাসই করতে পারছিল না। ওমর (রা.) এতটাই মর্মাহত হন যে, তিনি রাগে বলে ওঠেন— “নবীজি মারা যাননি! কেউ এমন কথা বললে আমি তাকে শাস্তি দেব!”
এমন সময় আবুবকর (রা.) শান্তভাবে কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন— “মুহাম্মদ (সা.) একজন রাসুল মাত্র, তার আগেও অনেক নবী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।” এই কথা শুনে সবাই ধীরে ধীরে বুঝতে পারল যে, নবীজি আর আমাদের মাঝে নেই। নবীজি ছিলেন সত্য, ন্যায় ও দয়ার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি কখনো অহংকার করেননি, সবার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতেন, এমনকি যারা তাকে কষ্ট দিত তাদেরও ক্ষমা করতেন। তিনি চেয়েছিলেন, মানুষ যেন একে অপরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে এবং সঠিক পথে চলে। জীবনের শেষ সময়ে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আয়েশা (রা.)-এর কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর পর সবাই ভীষণ শোকে পড়ে যায়। কিন্তু তিনি যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তা আজও মানুষের জন্য পথনির্দেশক হয়ে আছে।
মানুষ মুহাম্মদ সাঃ গল্পের বিষয়বস্তু
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যু মানবজাতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি ছিলেন শুধু একজন নবী নন, বরং ন্যায়, সত্য ও মানবিকতার এক অনন্য আদর্শ। যখন তিনি ইহলোক ত্যাগ করলেন, তখন মদিনার জনগণ শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। কেউ কাঁদছিল, কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না। ওমর (রা.) এতটাই মর্মাহত হয়েছিলেন যে, তিনি তরবারি হাতে নিয়ে ঘোষণা করলেন— “যে বলবে নবীজি মারা গেছেন, আমি তার মাথা কেটে ফেলব!” তিনি এই কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে পারছিলেন না।
তখন আবুবকর (রা.) সবার সামনে এগিয়ে এলেন এবং অত্যন্ত শান্ত ও দৃঢ় কণ্ঠে কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন— “মুহাম্মদ (সা.) একজন রাসুল মাত্র, তার আগেও অনেক নবী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।” এই আয়াত শুনে ওমর (রা.)-সহ সকলের মনে নবীজির মৃত্যু সম্পর্কে প্রকৃত উপলব্ধি জন্ম নিল। সবাই ধাতস্থ হলো এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করল।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন এক মহামানব। তার চরিত্র ছিল সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, দয়া ও ন্যায়পরায়ণতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি শত্রুদের প্রতিও ক্ষমাশীল ছিলেন। তায়েফে যখন তাকে পাথর ছুড়ে আহত করা হলো, তখনও তিনি তাদের অভিশাপ দেননি; বরং বলেছিলেন— “হে আল্লাহ, এদের হেদায়েত দাও, কারণ তারা জানে না।” বিজয়ের পর যখন তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন প্রতিশোধ না নিয়ে ঘোষণা করেন— “আজ তোমরা সবাই মুক্ত। আমি তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেব না।”
তার জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাধারণ। তিনি সাধারণ পোশাক পরিধান করতেন, নিজ হাতে কাজ করতেন এবং দাস-দাসীদের সঙ্গেও সদয় আচরণ করতেন। অহংকার তার মধ্যে ছিল না। তিনি ক্ষমা ও বিনয়ের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করতেন।
জীবনের শেষ সময়ে তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আয়েশা (রা.)-এর কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে গোটা মানবজাতি যেন এক মহান আদর্শকে হারাল। লেখক এই কাহিনীর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) শুধু মুসলমানদের জন্য নন, বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ।