‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের চিন্তা ও দর্শনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি শুধু তারুণ্যের গান নয়, বরং জীবন, স্বপ্ন ও সংগ্রামের গান। নিচে যৌবনের গান প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
যৌবনের গান প্রবন্ধের মূলভাব
কাজী নজরুল ইসলামের ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধটি যৌবন ও তারুণ্যের শক্তিকে উদযাপন করে। নজরুল যৌবনকে শুধু বয়সের সীমায় আবদ্ধ না করে এটিকে জীবন-শক্তি ও মানসিকতার প্রতীক হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, যৌবন হলো আলোর দেবতা, যা অন্ধকারকে ভেঙে নতুন পথের সন্ধান দেয়। তার মতে, যৌবন শুধু শারীরিক সক্ষমতা নয়, এটি মানসিক দৃঢ়তা, স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা এবং অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস। নজরুল বার্ধক্যকে পুরাতন ও জীর্ণ সংস্কারের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন, যা নতুনকে ভয় পায়। অন্যদিকে, যৌবন হলো সাহস, উদ্যম এবং নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়া। তিনি তরুণদের পুরাতনকে ভেঙে নতুন সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। নজরুলের মতে, যৌবন কোনো নির্দিষ্ট বয়স, জাতি বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি সার্বজনীন শক্তি। তিনি বিশ্বাস করেন, যৌবনই পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে এবং নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে।
যৌবনের গান প্রবন্ধের বিষয়বস্তু
কাজী নজরুল ইসলামের ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধটি মূলত যৌবন, তারুণ্য এবং জীবন-শক্তির প্রতি এক গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ। এই রচনায় নজরুল যৌবনের শক্তি, সাহস, উদ্দামতা এবং সৃষ্টিশীলতার প্রশংসা করেছেন। তিনি যৌবনকে শুধু বয়সের সীমায় আবদ্ধ করেননি, বরং এটিকে একটি মানসিকতা ও জীবনদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তার মতে, যৌবন হলো প্রাণের উচ্ছ্বাস, স্বপ্নের পূজা এবং নতুনকে আবিষ্কারের অদম্য স্পৃহা।
নজরুল এই প্রবন্ধে বলেছেন যে, তিনি তাদের দলে রয়েছেন যারা শুধু চিন্তা বা ধ্যানে মগ্ন থাকেন না, বরং কাজের মাধ্যমে মানুষের সেবা করেন। তিনি নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, যিনি বনের পাখির মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে গান গাইতে ভালোবাসেন। তার গান শুনে কারো ভালো লাগুক বা না লাগুক, তিনি গাইতে থাকেন। এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি গান গাইতে থাকেন, কারণ তার গান তার মনের আনন্দের প্রকাশ।
নজরুল যৌবনকে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, যৌবন হলো আলোর দেবতা, যা অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে এবং নতুন পথের সন্ধান দেয়। যৌবন শুধু শারীরিক সক্ষমতা নয়, এটি মানসিক দৃঢ়তা, স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা এবং অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস। তিনি বিশ্বাস করেন যে, যৌবন কোনো নির্দিষ্ট বয়স, জাতি বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি সার্বজনীন শক্তি, যা সকল দেশ, কাল ও সমাজের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান।
নজরুল বার্ধক্য ও যৌবনের মধ্যে একটি স্পষ্ট বৈপরীত্য এঁকেছেন। তিনি বলেছেন, বার্ধক্য হলো পুরাতনকে আঁকড়ে ধরা, নতুনকে ভয় পাওয়া এবং জীবন-শক্তির অভাব। অন্যদিকে, যৌবন হলো সাহস, উদ্যম এবং নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়া। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তাদের উচিত পুরাতন ও জীর্ণ সংস্কারকে ভেঙে নতুন সমাজ গড়ে তোলা। তিনি তরুণদের সাহসী হতে, স্বপ্ন দেখতে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করতে উৎসাহিত করেছেন।
নজরুলের মতে, যৌবনই হলো সেই শক্তি, যা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে এবং নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে। তিনি যৌবনকে বিশ্বমানবতার প্রতীক হিসেবে দেখেন, যা বিভেদ ও সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করে ঐক্য ও প্রগতির পথে এগিয়ে যায়।