হুমায়ুন আজাদের “শব্দ থেকে কবিতা” লেখাটি কবিতা এবং কবিতার সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি সুন্দর ও গভীর আলোচনা উপস্থাপন করে। লেখাটিতে কবিতা কী, কবিতা লেখার উপাদান, এবং কবি হওয়ার জন্য কী প্রয়োজন—এসব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। নিচে শব্দ থেকে কবিতার মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
শব্দ থেকে কবিতার মূলভাব
“শব্দ থেকে কবিতা” লেখাটিতে কবিতাকে শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা একটি শিল্প হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কবিতা লেখার জন্য শব্দের রং, সুর, এবং সুগন্ধকে চেনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, কবিতা লেখার জন্য নতুন ভাবনা, ছন্দ, এবং স্বপ্নের গুরুত্বকে লেখাটিতে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। লেখাটিতে একটি উদাহরণ হিসেবে “দোকানি” নামে একটি কবিতার অংশ দেওয়া হয়েছে, যা কবিতার মাধ্যমে কীভাবে নতুন ও চমকপ্রদ ভাবনা প্রকাশ করা যায় তা দেখায়। এই কবিতায় চাঁদের আলো, পাখির গান, চাঁপার গন্ধ, এবং গোলাপ ফুলের রূপের মতো অসাধারণ জিনিস বিক্রির কথা বলা হয়েছে, যা কবিতার মাধ্যমে স্বপ্নের জগৎ তৈরি করে। লেখাটির শেষ অংশে ছোট বয়সে কবিতা পড়া, চারপাশের ছবি দেখা, এবং শব্দ ও ছন্দ জমানোর গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। লেখক বলেছেন, বড় হলে এই শব্দ, ছন্দ, ছবি, সুর, এবং রং কবিতা লেখার জন্য কাজে লাগে।
শব্দ থেকে কবিতা রচনার বিষয়বস্তু
কবিতা কী?
কবিতা হলো এমন একটি লেখা যা পড়লে মন আনন্দে ভরে ওঠে, গান গাইতে ইচ্ছে করে, বা চোখে রঙিন স্বপ্ন ভেসে আসে। কবিতা সাধারণত ছোট ছোট লাইনে লেখা হয়, এবং প্রতিটি লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয়। কবিতা পড়লে মনে দাগ কাটে, বারবার মনে হয়, এবং মনে গেঁথে থাকে।
কবিতা কী দিয়ে তৈরি?
কবিতা তৈরি হয় শব্দ দিয়ে। কবিরা বিভিন্ন শব্দকে সাজিয়ে, মিলিয়ে, এবং ছন্দে বেঁধে কবিতা লেখেন। যেমন:
- “পাখি”, “নদী”, “ফুল”, “মা”—এগুলো সব শব্দ।
- কবিতায় এই শব্দগুলোর পাশাপাশি রঙ, সুর, এবং সুগন্ধও থাকে।
- কিছু শব্দে রং থাকে (লাল, নীল, সবুজ), কিছু শব্দে সুর থাকে (বাঁশির সুর, হাসির সুর), এবং কিছু শব্দে গন্ধ থাকে (গোলাপের গন্ধ, চাঁপার ঘ্রাণ)।
কবি কে?
কবি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি শব্দকে ভালোবাসেন এবং শব্দ দিয়ে কবিতা লেখেন। কবিরা শব্দকে আদর করে, সাজিয়ে গুছিয়ে রাখেন, এবং সেই শব্দ দিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। কবিরা গোলাপের মতো সুন্দর কথা বলেন, চাঁদের মতো স্বপ্ন দেখেন।
- কবি হতে হলে শব্দকে ভালোবাসতে হবে, শব্দের রং, সুর, এবং গন্ধ চিনতে হবে।
- কবির মনে স্বপ্ন থাকতে হবে, কারণ স্বপ্ন থেকেই নতুন ভাবনা আসে।
কবিতা লেখার উপাদান
কবিতা লেখার জন্য তিনটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ:
শব্দ: কবিতার মূল উপাদান হলো শব্দ। শব্দের রং, সুর, এবং গন্ধ চিনতে হবে।
ছন্দ: কবিতায় ছন্দ থাকতে হবে। ছন্দ হলো শব্দের একটি সুন্দর গতি, যা কবিতাকে গান বা নাচের মতো করে তোলে।
স্বপ্ন: কবিতায় নতুন কিছু বলতে হবে। যা আগে কেউ বলে নি, তা বলতে হবে। কবির মনে স্বপ্ন থাকলে নতুন ভাবনা আসে।
কবিতা লেখার উদাহরণ
লেখাটিতে একটি কবিতার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, যার নাম “দোকানি”। এই কবিতায় একজন দোকানির কথা বলা হয়েছে, যে সাধারণ জিনিস (দুধ, চকোলেট, পান) বিক্রি করে না। সে বিক্রি করে চাঁদের আলো, পাখির গান, চাঁপার গন্ধ, এবং গোলাপ ফুলের রূপ। এই কবিতাটি খুব চমকপ্রদ, কারণ এতে এমন জিনিস বিক্রির কথা বলা হয়েছে যা বাস্তবে পাওয়া যায় না, কিন্তু স্বপ্নে পাওয়া যায়।
ছোট বয়সে কবিতা লেখা
ছোট বয়সে কবিতা লেখার চেয়ে কবিতা পড়া এবং চারপাশের জগৎকে দেখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
- ছোট বয়সে চারপাশের ছবি, শব্দ, রং, এবং সুর মনে জমা করতে হবে।
- বড় হলে এই শব্দ, ছন্দ, ছবি, সুর, এবং রং কবিতা লেখার সময় কাজে লাগবে।
- কবিতা লেখার জন্য নতুন ভাবনা, ছন্দ, এবং স্বপ্নের প্রয়োজন হয়।