শ্রাবণে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন

সুকুমার রায়ের ‘শ্রাবণে’ প্রকৃতির বর্ষার রূপ এবং তার গভীর প্রভাব অত্যন্ত চিত্রময় ভাষায় ফুটে উঠেছে। বর্ষার এই উচ্ছল, প্রাণময়, এবং উদ্দাম দৃশ্য যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। নিচে শ্রাবণে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন দেওয়া হল।

শ্রাবণে কবিতার মূলভাব

গ্রীষ্মকালে প্রকৃতি রুক্ষ আর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন বর্ষা আসে, আকাশে মেঘ জমে, আর শুরু হয় টিপটিপ বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি ধীরে ধীরে ঝমঝম শব্দে চারদিক ভিজিয়ে দেয়। গাছপালা যেন প্রাণ ফিরে পায়, নদী-নালা জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে। বর্ষার জল শুধু প্রকৃতিকে নয়, মানুষকেও সজীব করে। এই কবিতায় বর্ষার জলে প্রকৃতির সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে-মুছে যায়। গ্রীষ্মের রোদের দাহ আর তাপের স্মৃতি মুছে প্রকৃতি এক নতুন রূপ ধারণ করে। ঠিক যেমন মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্টের পরে আনন্দ আসে, বর্ষা তেমনই এক নতুন শুরুর প্রতীক। ‘শ্রাবণে’ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য আর মানবজীবনের পরিবর্তনের গল্প একসাথে মিলে যায়।

শ্রাবণে কবিতার ব্যাখ্যা

লাইনব্যাখ্যা
জল বারে জল ঝরে সারাদিন সারারাত –
অফুরান নামতায় বাদলের ধারাপাত।
এখানে কবি বর্ষাকালের বৃষ্টির অবিরাম ধারাকে তুলে ধরেছেন। সারাদিন আর সারারাত ধরে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ে চলেছে। এই বৃষ্টির ধারা যেন কোনো দিন শেষ হবে না। প্রকৃতি যেন বর্ষার জলে ভিজে তৃপ্তির আনন্দে মগ্ন।
আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার,
পৃথিবীর ছাত পিটে ঝমাঝম্ বারিধার।
বর্ষার সময় আকাশে মেঘ জমে, আর সেই মেঘে আকাশের মুখ ঢাকা পড়ে যায়। চারপাশ যেন ধোঁয়াময়, অস্পষ্ট হয়ে যায়। সেই সময় বৃষ্টি ঝমঝম শব্দে পৃথিবীর উপর পড়তে থাকে, যেন বৃষ্টি মাটির উপর ছন্দ তুলছে।
স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায়,
নদীনালা ঘোলাজল ভরে উঠে ভরসায়।
বর্ষার বৃষ্টিতে গাছপালা যেন আনন্দে স্নান করে। তারা নতুন করে প্রাণ পায়। নদী-নালাগুলোর শুকিয়ে যাওয়া জলও বর্ষার জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে। এই বৃষ্টিতে প্রকৃতি নিজের হারানো শক্তি ফিরে পায়।
উৎসব ঘনঘোর উন্মাদ শ্রাবণের
শেষ নাই শেষ নাই বরষার প্লাবনের।
বর্ষা যেন এক ঘনঘোর উন্মাদ উৎসব। এই শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির এমন প্রবাহ চলে যে তার কোনো শেষ নেই। প্রকৃতির এই উচ্ছ্বাস থামতে চায় না।
জলেজলে জলময় দশদিক টলমল
অবিরাম একই গান, ঢালো জল, ঢালো জল।
বর্ষাকালে চারপাশে শুধু জল আর জল। সবকিছু কেমন টলমল করছে। এই বর্ষার দিনে বৃষ্টি যেন একটানা একই গান গেয়ে চলেছে—”ঢালো জল, ঢালো জল।” প্রকৃতি এই সুরে মেতে উঠেছে।
ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের,
ধুয়ে যায় রৌদ্রের স্মৃতিটুকু বিশ্বের।
গ্রীষ্মের সময়ে সূর্যের প্রচণ্ড রোদে যে তাপ আর ক্লান্তি জমে ছিল, বর্ষার বৃষ্টিতে তা ধুয়ে-মুছে যায়। গ্রীষ্মের রোদের স্মৃতিও যেন বর্ষার জলে হারিয়ে যায়। প্রকৃতি আবার সতেজ আর শান্ত হয়ে ওঠে।
শুধু যেন বাজে কোথা নিঃঝুম ধুকধুক,
ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ।
বর্ষার এই গভীর সুরের মধ্যে কোথাও যেন এক মিষ্টি ব্যথার অনুভূতি আছে। পৃথিবীর সমস্ত আশা-ভয়, সুখ-দুঃখের অনুভূতি এই বর্ষার সুরে মিশে একসাথে বাজতে থাকে।

Related Posts

Leave a Comment