সুফিয়া কামালের ‘সাম্য’ কবিতাটি প্রকৃতপক্ষে মানুষের একত্রিত প্রচেষ্টা এবং সম্মিলিত কর্মের শক্তিকে শ্রদ্ধা জানায়। এটি একত্রিত হওয়ার, একে অপরকে সাহায্য করার এবং সমাজের সবার জন্য একসাথে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। নিচে সাম্য কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন দেওয়া হল।
সাম্য কবিতার মূলভাব
পৃথিবীতে যেকোনো বড়ো কাজ একা করা সম্ভব নয়। অনেক মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, সাহসে এবং সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু দেশ উন্নতি করেছে। সুফিয়া কামাল এখানে বলতে চেয়েছেন, যে পৃথিবীতে অনেক মহৎ কাজের পেছনে ছিল মানুষের একত্রিত চেষ্টা, যেখানে সবাই একে অপরের সাথে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া, মানুষের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, বা শ্রেণীভেদ না রেখে সকলের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সৌহার্দ্র পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। একসাথে কাজ করেই মানুষ বড়ো অর্জন করতে পারে। এর মাধ্যমে কবি মানুষের ঐক্য এবং মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ, কবিতাটি আমাদের শেখায় যে, যদি সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করে, তাহলে অনেক বড়ো কাজ সম্ভব হতে পারে, এবং পৃথিবী আরও সুন্দর ও উন্নত হতে পারে।
সাম্য কবিতার ব্যাখ্যা
লাইন | ব্যাখ্যা |
---|---|
শতেকের সাথে শতেক হস্ত মিলায়ে একত্রিত” | এই লাইনে কবি বলছেন যে, অনেক মানুষের একত্রিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতাই বড়ো কাজকে সম্ভব করে তোলে। এক একক মানুষের চেষ্টা কোনো কিছু অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। একত্রে শত শত, হাজার হাজার মানুষ যদি একসাথে কাজ করে, তবেই তারা একটি বড়ো লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। |
“সব দেশে সব কালে কালে সবে হয়েছে সমুন্নত” | এখানে কবি বলেন যে, পৃথিবীর সকল দেশ, যুগ এবং কালের মানুষের ঐক্য ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পৃথিবী উন্নতি লাভ করেছে। বিশ্বের ইতিহাসে অনেক দেশ বা জাতি সম্মিলিত কাজের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে কবি বলতে চেয়েছেন যে, মানুষের একতার শক্তিই সমাজের উন্নতির মূল চাবিকাঠি। |
“বিপুলা পৃথিবী, প্রসারিত পথ, যাত্রীরা সেই পথে” | এই লাইনে পৃথিবীর বিশালতা এবং মানবজাতির চলার পথের প্রসারিত রূপের কথা বলা হচ্ছে। পৃথিবী বড়, কিন্তু মানুষ তার সীমানায় প্রতিনিয়ত চলতে থাকে, কাজ করতে থাকে। প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব লক্ষ্য থাকে, এবং তারা সেই পথে চলতে থাকে—একটি বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের জন্য। |
“চলে কর্মের আহ্বানে কোন অনন্ত কাল হতে” | এখানে বলা হচ্ছে, মানবসভ্যতার যাত্রা একদিনে শুরু হয়নি। মানুষের কাজ, তার সংগ্রাম, এবং সমাজের উন্নতির জন্য সংগ্রহীত প্রচেষ্টা যুগ যুগ ধরে চলছে। অর্থাৎ, মানুষের কর্মের পথ দীর্ঘ, এবং তা হাজার হাজার বছর ধরে চলছে। |
“মানব জীবন! শ্রেষ্ঠ, কঠোর কর্মে সে মহীয়ান” | এটি মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে। মানুষ তার কঠোর পরিশ্রম এবং সংগ্রামের মাধ্যমে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। তার কাজের মধ্যে যদি উদ্দেশ্য থাকে, তবে সে মহীয়ান হতে পারে, অর্থাৎ পৃথিবীতে বড়ো কাজ করতে সক্ষম হতে পারে। |
“সংগ্রামে আর সাহসে প্রজ্ঞা আলোকে দীপ্তিমান” | এখানে বলা হচ্ছে, মানুষের সংগ্রাম এবং সাহসই তাকে প্রজ্ঞার আলোয় দীপ্ত করে তোলে। সংগ্রাম, সাহস, এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ নিজের জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করে, যা তাকে আরও আলোকিত এবং শক্তিশালী করে। |
“পায়ের তলার মাটিতে, আকাশে, সমুখে, সিন্ধু জলে” | এই লাইনে বলা হচ্ছে যে, মানুষের বিজয় সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীর মাটিতে, আকাশে, সমুদ্রের জলে—মানবজাতি তার বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করেছে। এটি একটি প্রতীক, যা বোঝায় যে, মানুষের বিজয় শুধুমাত্র সীমিত ভূখণ্ডে নয়, বরং পুরো পৃথিবীজুড়ে। |
“বিজয় কেতন উড়ায়ে মানুষ চলিয়াছে দলে দলে” | এই লাইনে কবি শেষ করেছেন বিজয়ের এক মহত্ত্বপূর্ণ চিত্র দিয়ে। বিজয় কেতন, বা বিজয়ের পতাকা, পৃথিবীজুড়ে উড়ছে, এবং মানুষ একত্রিত হয়ে, দলবদ্ধভাবে, একে অপরকে সাহায্য করে, নিজেদের লক্ষ্য পূরণের পথে চলেছে। |