হায়াৎ মামুদের “সাহিত্যের রূপ ও রীতি” লেখাটিতে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ও তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে সাহিত্যের রূপ ও রীতি মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
সাহিত্যের রূপ ও রীতি মূলভাব
হায়াৎ মামুদের “সাহিত্যের রূপ ও রীতি” লেখাটি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার গঠন ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে। কবিতা ছন্দে লেখা হয় এবং এর দুটি প্রধান রূপ হলো মহাকাব্য ও গীতিকবিতা। নাটক মঞ্চে অভিনয়ের জন্য লেখা হয় এবং এটি ট্র্যাজেডি, কমেডি ও প্রহসন—এই তিন ধরনের হতে পারে। ছোটগল্প সংক্ষিপ্ত ও গভীর অভিব্যক্তিপূর্ণ হয়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা মুহূর্তকে কেন্দ্র করে গল্প তৈরি হয়। উপন্যাস গদ্যে লেখা দীর্ঘ কাহিনি, যেখানে প্লট ও চরিত্রের মাধ্যমে কাহিনি এগিয়ে চলে। প্রবন্ধ গদ্যে লেখা এমন রচনা, যা পাঠককে কোনো বিষয়ে জানায় বা ভাবনা দেয়। সাহিত্যের প্রতিটি শাখার নিজস্ব রূপ ও রীতি আছে, যা সাহিত্যকে বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ করে। এই লেখাটি সাহিত্যকে বুঝতে এবং বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।
সাহিত্যের রূপ ও রীতি বিষয়বস্তু
সাহিত্যের রূপ ও রীতি কী?
সাহিত্য বলতে আমরা সাধারণত গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি বুঝি। কিন্তু সাহিত্যের প্রতিটি শাখার নিজস্ব রূপ (গঠন) এবং রীতি (নির্মাণশৈলী) আছে। যেমন, কবিতা ছন্দে লেখা হয়, আর উপন্যাস গদ্যে লেখা হয়। এই লেখাটিতে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা যেমন কবিতা, নাটক, ছোটগল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধের রূপ ও রীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১. কবিতা
কবিতা হলো ছন্দে লেখা সাহিত্য। কবিতার দুটি প্রধান ধরন আছে:
- মহাকাব্য: এটি দীর্ঘ কাহিনি-কবিতা, যেমন মাইকেল মধুসূদন দত্তের “মেঘনাদবধ কাব্য”। মহাকাব্যে যুদ্ধ, বীরত্ব বা বড় ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়।
- গীতিকবিতা: এটি ছোট ও আবেগপ্রবণ কবিতা, যেমন বাংলা সাহিত্যের বৈষ্ণব পদাবলি। গীতিকবিতায় কবির অনুভূতি ও ভাবনা প্রকাশ পায়।
২. নাটক
নাটক হলো এমন সাহিত্য যা মঞ্চে অভিনয় করার জন্য লেখা হয়। নাটকের লক্ষ্য দর্শকদের মনের ভাবনা ও অনুভূতিকে প্রভাবিত করা। নাটক সাধারণত পাঁচটি অংশে বিভক্ত:
- শুরু (প্রারম্ভ)
- কাহিনির অগ্রগতি (প্রবাহ)
- চরম মুহূর্ত (উৎকর্ষ)
- সমাধান (গ্রন্থিমোচন)
- শেষ (উপসংহার)
নাটক তিন ধরনের হতে পারে:
- ট্র্যাজেডি: দুঃখদায়ক বা বিয়োগান্ত নাটক, যেমন শেক্সপিয়রের “হ্যামলেট”।
- কমেডি: হাস্যরসাত্মক বা মিলনান্ত নাটক।
- প্রহসন: হাস্যরসের সঙ্গে ব্যঙ্গাত্মক নাটক।
বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্র নাটকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
৩. ছোটগল্প
ছোটগল্প হলো সংক্ষিপ্ত আকারের গল্প। এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা মুহূর্তকে কেন্দ্র করে লেখা হয়। ছোটগল্পে বিস্তারিত বর্ণনার চেয়ে সংক্ষিপ্ত ও গভীর অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পগুলো বাংলা সাহিত্যে অনন্য। ছোটগল্পের শেষে পাঠক মনে করে, “শেষ হয়ে হইল না শেষ”, অর্থাৎ গল্প শেষ হলেও তার প্রভাব থেকে যায়।
৪. উপন্যাস
উপন্যাস হলো গদ্যে লেখা দীর্ঘ কাহিনি। উপন্যাসে একটি মূল কাহিনি বা প্লট থাকে, যা বিভিন্ন চরিত্র ও ঘটনার মাধ্যমে এগিয়ে চলে। বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। উপন্যাস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:
- ঐতিহাসিক উপন্যাস (যেমন বঙ্কিমচন্দ্রের “দুর্গেশনন্দিনী”)
- সামাজিক উপন্যাস (যেমন শরৎচন্দ্রের “দেবদাস”)
- মনোবিশ্লেষণধর্মী উপন্যাস।
৫. প্রবন্ধ
প্রবন্ধ হলো গদ্যে লেখা এমন রচনা যার উদ্দেশ্য পাঠককে কোনো বিষয়ে জানানো বা ভাবনা দেওয়া। প্রবন্ধ দুই ধরনের হতে পারে:
- তন্ময় প্রবন্ধ: বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে লেখা, যেমন বিজ্ঞান বা ইতিহাস সম্পর্কে প্রবন্ধ।
- মন্ময় প্রবন্ধ: লেখকের ব্যক্তিগত ভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ পায়, যেমন রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ।
প্রবন্ধের লক্ষ্য শুধু তথ্য দেওয়া নয়, বরং সাহিত্যিক সৌন্দর্য ও ভাবনার গভীরতা তৈরি করা।