প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটি সাহিত্য ও শিল্পের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য এবং তার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন। এই অংশে তিনি শিল্প ও সাহিত্যে ‘খেলা’ বা আনন্দের উপাদানকে গুরুত্ব দিয়েছেন। নিচে সাহিত্য খেলা প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
সাহিত্য খেলা প্রবন্ধের মূলভাব
প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, শিল্পীরা তাদের কাজকে ‘খেলা’ হিসেবে দেখেন। যেমন, বিখ্যাত ভাস্কর রোদ্যাঁ পাথর কেটে দেবদেবীর মূর্তি বানান, কিন্তু তিনি যখন কাদা মাটি দিয়ে ছোট ছোট পুতুল বানান, সেটা তার জন্য খেলার মতো। শিল্পীরা তাদের কাজে আনন্দ পান, এবং এই আনন্দই তাদের কাজের মূল উদ্দেশ্য। সাহিত্য রচনাও এক ধরনের খেলা। লেখক যখন গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ লেখেন, তখন তিনি শুধু পাঠককে আনন্দ দিতে চান না, বরং নিজেও আনন্দ পান। লেখালেখি তার জন্য একটি খেলা, যেখানে তিনি নিজের মনের ভাবনা ও কল্পনা প্রকাশ করেন।
প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষা দেওয়া নয়, বরং আনন্দ দেওয়া। তিনি বলেছেন, সাহিত্য যদি শুধু শিক্ষা দিতে চায়, তাহলে তা স্কুলের পাঠ্যবই হয়ে যায়। কিন্তু সাহিত্য হলো একটি শিল্প, যার মাধ্যমে লেখক ও পাঠক উভয়েই আনন্দ পান। তিনি বলেছেন যে, সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে লেখক বা শিল্পীর স্বাধীনতা থাকা উচিত। তারা যেন শুধু আনন্দের জন্য কাজ করতে পারেন, কোনো বাহ্যিক চাপ বা উদ্দেশ্য ছাড়া। যেমন, একজন শিল্পী শিবের মূর্তি বানাতে পারেন, আবার বাঁদরের মূর্তিও বানাতে পারেন। এটাই তার স্বাধীনতা। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, পাঠকও সাহিত্য থেকে আনন্দ পাবেন। সাহিত্য যদি শুধু শিক্ষা দিতে চায়, তাহলে তা পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় হবে না। কিন্তু যদি তা আনন্দ দেয়, তাহলে পাঠক তা উপভোগ করবেন।
সাহিত্য খেলা প্রবন্ধের বিষয়বস্তু
১. শিল্পীর খেলা: আনন্দের জন্য সৃষ্টি
প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, শিল্পীরা তাদের কাজকে ‘খেলা’ হিসেবে দেখেন। যেমন, তিনি বিখ্যাত ভাস্কর রোদ্যাঁর উদাহরণ দিয়েছেন। রোদ্যাঁ পাথর কেটে দেবদেবীর মূর্তি বানান, যা খুব কঠিন ও শ্রমসাধ্য কাজ। কিন্তু তিনি যখন কাদা মাটি দিয়ে ছোট ছোট পুতুল বানান, সেটা তার জন্য খেলার মতো। এখানে কাজের মধ্যে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, শুধু আনন্দ আছে। শিল্পীরা তাদের কাজে আনন্দ পান, এবং এই আনন্দই তাদের কাজের মূল উদ্দেশ্য।
২. সাহিত্যেও খেলা: লেখকের আনন্দ
সাহিত্য রচনাও এক ধরনের খেলা। লেখক যখন গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ লেখেন, তখন তিনি শুধু পাঠককে আনন্দ দিতে চান না, বরং নিজেও আনন্দ পান। লেখালেখি তার জন্য একটি খেলা, যেখানে তিনি নিজের মনের ভাবনা ও কল্পনা প্রকাশ করেন। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, সাহিত্য রচনা লেখকের আত্মার পরিপূর্ণতা ও স্ফূর্তির প্রকাশ। এটি কোনো বাহ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয় না, বরং এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত কাজ।
৩. শিক্ষা নয়, আনন্দই মূল উদ্দেশ্য
প্রমথ চৌধুরী জোর দিয়ে বলেছেন যে, সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষা দেওয়া নয়, বরং আনন্দ দেওয়া। তিনি বলেছেন, সাহিত্য যদি শুধু শিক্ষা দিতে চায়, তাহলে তা স্কুলের পাঠ্যবই হয়ে যায়। কিন্তু সাহিত্য হলো একটি শিল্প, যার মাধ্যমে লেখক ও পাঠক উভয়েই আনন্দ পান। তিনি বলেছেন, সাহিত্য মানুষের মনকে জাগ্রত করে, কিন্তু তা কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষা বা নীতি চাপিয়ে দেয় না।
৪. সাহিত্য ও শিল্পের স্বাধীনতা
প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে লেখক বা শিল্পীর স্বাধীনতা থাকা উচিত। তারা যেন শুধু আনন্দের জন্য কাজ করতে পারেন, কোনো বাহ্যিক চাপ বা উদ্দেশ্য ছাড়া। যেমন, একজন শিল্পী শিবের মূর্তি বানাতে পারেন, আবার বাঁদরের মূর্তিও বানাতে পারেন। এটাই তার স্বাধীনতা। সাহিত্যেও লেখক যেকোনো বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন, কোনো বাধা ছাড়া।
৫. পাঠকের ভূমিকা: আনন্দ উপভোগ
প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, পাঠকও সাহিত্য থেকে আনন্দ পাবেন। সাহিত্য যদি শুধু শিক্ষা দিতে চায়, তাহলে তা পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় হবে না। কিন্তু যদি তা আনন্দ দেয়, তাহলে পাঠক তা উপভোগ করবেন। তিনি বলেছেন, সাহিত্যের মাধ্যমে লেখক ও পাঠকের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি হয়, যেখানে উভয়েই আনন্দ পান।
৬. শিক্ষা ও সাহিত্যের পার্থক্য
প্রমথ চৌধুরী শিক্ষা ও সাহিত্যের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য টেনেছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে জ্ঞান দেওয়া, কিন্তু সাহিত্যের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আনন্দ দেওয়া। তিনি বলেছেন, সাহিত্য কখনো স্কুলমাস্টারির কাজ করে না। সাহিত্য হলো আত্মার প্রকাশ, যা মানুষের মনকে জাগ্রত করে এবং আনন্দ দেয়।
৭. সাহিত্য ও শিল্পের সত্যিকার সৌন্দর্য
প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, সাহিত্য ও শিল্পের সত্যিকার সৌন্দর্য হলো এর স্বাধীনতা ও আনন্দের উপাদান। সাহিত্য ও শিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের ভাবনা ও কল্পনা প্রকাশ করি, এবং তা অন্য মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিই। এটাই সাহিত্য ও শিল্পের সত্যিকার সার্থকতা।