মমতাজউদদীন আহমদের “সুখী মানুষ” নাটকটি নাটকটি আমাদের শেখায় যে, সুখের জন্য বাহ্যিক সম্পদের প্রয়োজন নেই। সুখ হলো মনের শান্তি এবং তৃপ্তি। নিচে সুখী মানুষ গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
সুখী মানুষ গল্পের মূলভাব
নাটকের মূল চরিত্র মোড়ল, একজন অত্যাচারী এবং লোভী ব্যক্তি। সে গ্রামের মানুষের ওপর জুলুম করে, তাদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে নিজে ধনী হয়েছে। একদিন মোড়ল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। কবিরাজ ডাকা হয়, কিন্তু কবিরাজ বলে যে মোড়লের রোগ শুধু ওষুধে সেরে উঠবে না। মোড়লকে বাঁচাতে হলে একজন সুখী মানুষ খুঁজে বের করতে হবে এবং তার পরনের জামা মোড়লের গায়ে পরাতে হবে। শুধু তখনই মোড়ল সুস্থ হবে।
মোড়লের চাকর রহমত আলী এবং আত্মীয় হাসু মিয়া সুখী মানুষ খুঁজতে বের হয়। তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে অনেক মানুষের সাথে কথা বলে, কিন্তু কেউই নিজেকে সুখী বলে দাবি করে না। ধনী, গরিব, যুবক, বৃদ্ধ—সবাই কোনো না কোনো কারণে অসুখী। শেষে তারা এক কাঠুরের সাথে দেখা করে, যে বনে কাঠ কেটে জীবনযাপন করে। কাঠুরে বলে, “আমি সুখী মানুষ। আমার কোনো দুঃখ নেই।” কিন্তু যখন তার জামা চাওয়া হয়, তখন সে বলে, “আমার কোনো জামাই নেই। আমি তো সবসময় খালি গায়ে থাকি।” এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, সুখ আসলে বাহ্যিক সম্পদ বা জামা-কাপড়ে নেই। সুখ হলো মনের অবস্থা।
সুখী মানুষ নাটকের বিষয়বস্তু
প্রথম দৃশ্য: মোড়লের অসুখ এবং কবিরাজের পরামর্শ
নাটকের শুরুতে আমরা দেখি, গ্রামের মোড়ল (একজন ধনী এবং অত্যাচারী ব্যক্তি) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে, এবং তার আত্মীয় হাসু মিয়া ও বিশ্বস্ত চাকর রহমত আলী তার পাশে বসে আছে। কবিরাজ ডাকা হয়, এবং সে মোড়লের নাড়ি পরীক্ষা করে বলে যে, মোড়লের রোগ শুধু ওষুধে সেরে উঠবে না। কবিরাজ একটি অদ্ভুত পরামর্শ দেয়: মোড়লকে বাঁচাতে হলে একজন সুখী মানুষ খুঁজে বের করতে হবে এবং তার পরনের জামা মোড়লের গায়ে পরাতে হবে। শুধু তখনই মোড়ল সুস্থ হবে।
এই পরামর্শ শুনে হাসু মিয়া এবং রহমত আলী সুখী মানুষ খুঁজতে বের হয়। মোড়লও তাদের প্রতিশ্রুতি দেয় যে, যদি তাকে বাঁচানো যায়, তাহলে সে আর কখনো অত্যাচার করবে না এবং লোভ করবে না।
দ্বিতীয় দৃশ্য: সুখী মানুষ খোঁজার সংগ্রাম
হাসু মিয়া এবং রহমত আলী গ্রামে গ্রামে ঘুরে সুখী মানুষ খুঁজতে থাকে। তারা বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কেউই নিজেকে সুখী বলে দাবি করে না।
- ধনী ব্যক্তি: সে বলে, “আমার আরও সম্পদ দরকার। আমি সুখী নই।”
- গরিব ব্যক্তি: সে বলে, “আমার যদি কিছু টাকা থাকত, তাহলে আমি সুখী হতাম।”
- যুবক: সে বলে, “আমার যদি ভালো চাকরি থাকত, তাহলে আমি সুখী হতাম।”
- বৃদ্ধ: সে বলে, “আমার যদি যৌবন ফিরে পেতাম, তাহলে আমি সুখী হতাম।”
এভাবে তারা অনেক মানুষের সাথে কথা বলে, কিন্তু সবাই কোনো না কোনো কারণে অসুখী। শেষে তারা এক কাঠুরের সাথে দেখা করে, যে বনে কাঠ কেটে জীবনযাপন করে। কাঠুরে বলে, “আমি সুখী মানুষ। আমার কোনো দুঃখ নেই। আমি সারাদিন কাজ করি, যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই, এবং রাতে শান্তিতে ঘুমাই।”
হাসু মিয়া এবং রহমত আলী খুশি হয়ে কাঠুরের জামা চায়। কিন্তু কাঠুরে বলে, “আমার কোনো জামাই নেই। আমি তো সবসময় খালি গায়ে থাকি।”