জীবনানন্দ দাশের “সেইদিন এই মাঠ” কবিতাটিতে কবি বলছেন, মানুষ চলে গেলেও প্রকৃতি তার সৌন্দর্য নিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। নিচে সেইদিন এই মাঠ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেয়া হল।
সেইদিন এই মাঠ কবিতার মূলভাব
জীবনানন্দ দাশের “সেইদিন এই মাঠ” কবিতায় কবি বলছেন, মানুষ একদিন চলে যাবে, কিন্তু প্রকৃতি তার রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। নদী, নক্ষত্র, চালতাফুলের গন্ধ, শিশিরের জলে ভেজা ফুল, লক্ষ্মীপেঁচার মমতাময় গান—এ সবই প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্য ও জীবনীশক্তির প্রতীক। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু প্রকৃতি চিরন্তন; মানুষের স্বপ্ন এবং সৌন্দর্য কখনই শেষ হয় না, তা চিরকাল বেঁচে থাকে। কবি এশিরিয়া ও ব্যাবিলনের মতো প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ধ্বংসস্তূপের কথা উল্লেখ করে বলছেন, সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও প্রকৃতি তার সৌন্দর্য ও প্রাণবন্ততা নিয়ে অনন্তকাল ধরে টিকে থাকে। এই কবিতার মাধ্যমে জীবনানন্দ দাশ মানব জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব এবং স্বপ্নের অমরত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সেই দিন এই মাঠ কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি-“ | কবি বলছেন, একদিন এই মাঠ হয়তো স্তব্ধ হয়ে যাবে, অর্থাৎ সবকিছু থেমে যাবে। কিন্তু প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে চলতে থাকবে। মানুষের জীবন শেষ হয়ে গেলেও প্রকৃতি তার গতিপথে অটল থাকবে। |
“এই নদী নক্ষত্রের তলে সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন-“ | নদী এবং নক্ষত্রের নিচে, অর্থাৎ প্রকৃতির মাঝে, মানুষ তার স্বপ্ন দেখতে থাকবে। প্রকৃতি মানুষের স্বপ্ন দেখার জায়গা হয়ে থাকবে, এমনকি মানুষ চলে গেলেও। |
“সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে।” | মানুষের স্বপ্ন, বিশেষ করে সোনার মতো মূল্যবান স্বপ্ন, পৃথিবীতে কখনই শেষ হয় না। মানুষের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা চিরকাল বেঁচে থাকে। |
“আমি চলে যাব বলে চালতাফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে নরম গন্ধের ঢেউয়ে?” | কবি বলছেন, তিনি চলে গেলেও প্রকৃতির সৌন্দর্য থেমে থাকবে না। চালতাফুল শিশিরের জলে ভিজবে, তার নরম গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য মানুষের অনুপস্থিতিতেও চলতে থাকবে। |
লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?” | লক্ষ্মীপেঁচা তার সঙ্গীর জন্য গান গাইবে। প্রকৃতির এই সুর এবং সৌন্দর্য মানুষের চলে যাওয়ার পরেও অব্যাহত থাকবে। |
“সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!” | এই লাইনে কবি আবারও বলছেন যে মানুষের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা কখনই শেষ হয় না। তা চিরকাল বেঁচে থাকে। |
“চারিদিকে শান্ত বাতি ভিজে গন্ধ মৃদু কলরব;” | চারিদিকে শান্ত পরিবেশ, গন্ধে ভরা বাতাস এবং মৃদু শব্দ। প্রকৃতির এই শান্তি এবং সৌন্দর্য মানুষের জীবনকে ঘিরে থাকে। |
“খেয়ানৌকোগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে;” | খেয়ানৌকাগুলো চরের কাছে এসে লাগে। এটি প্রকৃতির নিয়মিত ঘটনা, যা মানুষের জীবন শেষ হয়ে গেলেও চলতে থাকে। |
“পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;” | পৃথিবীর এই সব গল্প, অর্থাৎ প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মানুষের স্বপ্ন, চিরকাল বেঁচে থাকবে। |
“এশিরিয়া ধুলো আজ বেবিলন ছাই হয়ে আছে।” | এশিরিয়া এবং ব্যাবিলনের মতো প্রাচীন সভ্যতাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, কিন্তু প্রকৃতি তার সৌন্দর্য নিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকে। সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও প্রকৃতি চিরন্তন। |