অতিথির স্মৃতি গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি আমাদের শেখায় যে, ভালোবাসা এবং বন্ধন শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, পশুপাখির সাথেও আমরা গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। নিচে অতিথির স্মৃতি গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

অতিথির স্মৃতি গল্পের মূলভাব

গল্পের লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে দেওঘরে আসেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। তিনি একটি বড় বাড়িতে থাকেন, যেখানে প্রতিদিন সকালে পাখিদের কলরব এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। একদিন একটি বুড়ো কুকুর তার পিছু নেয়, এবং লেখক তাকে ‘অতিথি’ বলে ডাকেন। ধীরে ধীরে কুকুরটি তার জীবনের অংশ হয়ে ওঠে, এবং তাদের মধ্যে গভীর বন্ধন গড়ে ওঠে। লেখক তাকে খেতে দেন এবং তার সাথে সময় কাটান। কিন্তু মালির স্ত্রী, যাকে ‘মালি-বৌ’ বলা হয়, তার স্বার্থপরতা এবং নিষ্ঠুরতার কারণে কুকুরটিকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। নায়ক এই অন্যায় দেখেও কিছু করতে পারেন না, যা তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। একদিন লেখক অসুস্থ হয়ে পড়লে কুকুরটি তার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়, যেন তার খোঁজ নিতে চায়। শেষে লেখক দেওঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় কুকুরটি স্টেশনে তার জন্য অপেক্ষা করে, যা বিচ্ছেদের বেদনা প্রকাশ করে।

অতিথির স্মৃতি গল্পের বিষয়বস্তু

গল্পের লেখক একজন অসুস্থ মানুষ, যিনি চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দেওঘরে এসেছেন। তিনি একটি বড় বাড়িতে থাকেন, যেখানে চারপাশে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং পাখিদের কলরব তাকে শান্তি দেয়। তবে তার জীবন একাকী এবং নিস্তব্ধ।

লেখক প্রতিদিন সকালে পাখিদের ডাক শুনতে শুনতে তাদের চিনে ফেলেন। তিনি দেখেন, দোয়েল পাখি সবার আগে ডাক দেয়, তারপর বুলবুলি, শ্যামা, শালিক এবং অন্যান্য পাখিরা আসে। হলদে রঙের একজোড়া বেনে বৌ পাখিও নিয়মিত আসে, কিন্তু একদিন তারা আসে না। নায়ক তাদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন, কিন্তু কয়েকদিন পর তারা ফিরে এলে তিনি খুশি হন।

একদিন লেখক দেখেন, একটি বুড়ো কুকুর তার পিছু নিয়েছে। তিনি কুকুরটিকে ডেকে বলেন, “আয়, তুই আমার অতিথি।” কুকুরটি তার সাথে বাড়ি পর্যন্ত আসে, কিন্তু ভিতরে ঢোকার সাহস পায় না। নায়ক তাকে খেতে দেন, এবং ধীরে ধীরে কুকুরটি তার জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। লেখক তাকে ‘অতিথি’ বলে ডাকেন।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন মালির স্ত্রী (মালি-বৌ) কুকুরটিকে খাবার দিতে অস্বীকার করে। মালি-বৌ স্বার্থপর এবং নিষ্ঠুর। সে কুকুরটিকে তাড়িয়ে দেয় এবং খাবার নিয়ে চলে যায়। লেখক এই অন্যায় দেখেও কিছু করতে পারেন না, যা তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে।

লেখক কুকুরটিকে খুব ভালোবাসেন। একদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে কুকুরটি তার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়, যেন তার খোঁজ নিতে চায়। নায়ক বুঝতে পারেন, কুকুরটিও তাকে ভালোবাসে। কিন্তু মালি-বৌয়ের কারণে কুকুরটিকে নিয়মিত খাবার দেওয়া সম্ভব হয় না।

শেষে লেখক দেওঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আসে। তিনি ট্রেনে চড়ে বসেন, এবং দেখেন কুকুরটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে, যেন তাকে বিদায় জানাতে চায়। লেখকের মনে হয়, কুকুরটি হয়তো ফিরে গিয়ে দেখবে বাড়ির গেট বন্ধ, এবং সে আর ভিতরে ঢুকতে পারবে না। এই বিচ্ছেদের বেদনা নায়ককে কষ্ট দেয়।

Related Posts

Leave a Comment