নিরীহ বাঙালি প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

নিরীহ বাঙালি প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

“নিরীহ বাঙালি” প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাঙালি সমাজের ভালো এবং মন্দ দিকগুলোকে হাস্যরসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিচে নিরীহ বাঙালি প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

নিরীহ বাঙালি প্রবন্ধের মূলভাব

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের “নিরীহ বাঙালি” প্রবন্ধটি বাঙালি সমাজের একটি হাস্যরসাত্মক চিত্র। তিনি বাঙালির কোমলতা, নিরীহ স্বভাব এবং সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন, কিন্তু একই সাথে তাদের আলস্য, ভীরুতা এবং পরিশ্রম এড়িয়ে চলার প্রবণতাকেও ব্যঙ্গ করেছেন। বাঙালিরা খুব সুস্বাদু এবং সরস খাবার পছন্দ করে, যেমন পুঁইশাক, সজিনা, মিষ্টি ইত্যাদি, যা তাদের স্বভাবকে আরও নরম করে তোলে। তারা হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরতে পছন্দ করে, যেমন ধুতি-চাদর বা সূক্ষ্ম শাড়ি। ব্যবসায়-বাণিজ্যে তারা কঠোর পরিশ্রমের বদলে নকল জিনিস বিক্রি করে সহজ পথ বেছে নেয়। শিক্ষাক্ষেত্রে তারা কৃষিকাজ বা শিল্পের চেয়ে মুখস্থ বিদ্যা এবং পরীক্ষা পাস করাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। বাঙালিরা খুব আলসে এবং সহজ কাজ পছন্দ করে, যেমন উপাধি লাভ করা বা অন্যের কষ্টে শোক সভায় যোগ দেওয়া। তারা কবিতায় খুব দক্ষ, কিন্তু তাদের কবিতায় বীরত্বের চেয়ে করুণ রস বেশি থাকে। রোকেয়া বাঙালি নারীদের কোমলতা এবং লজ্জাশীলতার প্রশংসা করেছেন, কিন্তু সমাজে তাদের অবস্থান এবং লিঙ্গবৈষম্যের দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

নিরীহ বাঙালি প্রবন্ধের বিষয়বস্তু

১. বাঙালির কোমলতা ও নিরীহ স্বভাব:

রোকেয়া বলেছেন, বাঙালিরা খুব কোমল, নরম এবং নিরীহ প্রকৃতির। তাদের নাম যেমন মিষ্টি শোনায়, তেমনি তাদের আচরণও সহজ-সরল। তিনি বাঙালিকে ফুল, চাঁদ, মধু, নদীর জল ইত্যাদি কোমল ও সুন্দর জিনিসের সাথে তুলনা করেছেন। বাঙালিরা যেন প্রকৃতির সব সৌন্দর্য এবং কোমলতা নিয়ে গড়া।


২. বাঙালির খাদ্যাভ্যাস:

বাঙালিরা খুব সুস্বাদু এবং সরস খাবার পছন্দ করে। তাদের খাবারের তালিকায় আছে পুঁইশাক, সজিনা, পুঁটি মাছের ঝোল, ঘি, দুধ, মিষ্টি ইত্যাদি। এই খাবারগুলো যেমন সুস্বাদু, তেমনি শরীরের জন্য নরম এবং কোমল। রোকেয়া বলেছেন, বাঙালিরা এত নরম খাবার খায় যে তাদের স্বভাবও নরম হয়ে গেছে। তারা ভীরু এবং পরিশ্রম এড়িয়ে চলে।


৩. বাঙালির পোশাক-পরিচ্ছদ:

বাঙালিরা খুব হালকা এবং আরামদায়ক পোশাক পরতে পছন্দ করে। পুরুষরা ধুতি-চাদর পরে, যা খুব হালকা এবং বাতাস চলাচলের জন্য উপযোগী। নারীরা সূক্ষ্ম ও মসৃণ শাড়ি পরেন, যা তাদের লজ্জাশীলতা এবং কোমলতা প্রকাশ করে। রোকেয়া বলেছেন, বাঙালিরা পশ্চিমা পোশাক পরতে চাইলেও তা তাদের স্বভাবের সাথে মেলে না।


৪. বাঙালির ব্যবসায়-বাণিজ্য:

বাঙালিরা ব্যবসায়-বাণিজ্যে খুব কম পরিশ্রম করে। তারা কঠোর পরিশ্রমের বদলে সহজ পথ বেছে নেয়। যেমন, তারা দোকানে নকল জিনিস বিক্রি করে, যেমন নকল গয়না, নকল ওষুধ ইত্যাদি। রোকেয়া বলেছেন, বাঙালিরা আসল জিনিসের চেয়ে নকল জিনিস বানাতে বেশি পারদর্শী। তারা কৃষিকাজ বা শিল্পের মতো কঠোর কাজের চেয়ে মুখস্থ বিদ্যা বা পরীক্ষা পাস করে অর্থ উপার্জন করতে পছন্দ করে।


৫. বাঙালির শিক্ষা ও কৃষি:

বাঙালিরা কৃষিকাজের চেয়ে পড়াশোনা করে পরীক্ষা পাস করাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা মনে করে, মাঠে গিয়ে ধান চাষ করার চেয়ে বই পড়ে ডিগ্রি অর্জন করা সহজ। রোকেয়া বলেছেন, বাঙালিরা কঠোর পরিশ্রম এড়িয়ে সহজ পথ বেছে নেয়। তারা টাকার জন্য শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি লুট করতেও পিছপা হয় না।


৬. বাঙালির আলস্য ও কবিত্ব:

বাঙালিরা খুব আলসে এবং পরিশ্রম এড়িয়ে চলে। তারা সহজ কাজ পছন্দ করে, যেমন উপাধি লাভ করা বা অন্যের কষ্টে শোক সভায় যোগ দেওয়া। রোকেয়া বলেছেন, বাঙালিরা কবিতায় খুব দক্ষ, কিন্তু তাদের কবিতায় বীরত্বের চেয়ে করুণ রস বেশি থাকে। তারা ছোট ছোট বিষয় নিয়েও কবিতা লিখে, যেমন পুরানো চটি জুতা বা ভাঙা ঝুড়ি।


৭. বাঙালি নারী:

রোকেয়া বাঙালি নারীদের নিয়েও কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বাঙালি নারীরা খুব কোমল এবং লজ্জাশীল। তারা রান্না করার মতো কঠোর কাজ এড়িয়ে চলেন এবং সাজসজ্জায় বেশি সময় দেন। তিনি এটাও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সমাজে নারীদের অবস্থান এবং লিঙ্গবৈষম্য এখনও রয়ে গেছে।


৮. উপসংহার:

রোকেয়া বলেছেন, বাঙালিরা খুব সুন্দর, কোমল এবং মিষ্টি স্বভাবের। কিন্তু তাদের মধ্যে আলস্য, ভীরুতা এবং পরিশ্রম এড়িয়ে চলার প্রবণতা বেশি। তিনি বাঙালি সমাজের এই দুর্বলতাগুলোকে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, যাতে মানুষ নিজেদের ভুলগুলো বুঝতে পারে এবং

আরও পড়ুনঃ সাহিত্যের রূপ ও রীতি মূলভাব ও বিষয়বস্তু

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *