উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন মূলভাব ও বিষয়বস্তু

উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন মূলভাব ও বিষয়বস্তু

কাজী নজরুল ইসলামের উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন প্রবন্ধের এই অংশটি সামাজিক-রাজনৈতিক, বিপ্লবী দর্শন ও মানবতাবাদের স্বাক্ষর বহন করে। নিচে উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন মূলভাব

কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর “উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন” প্রবন্ধে সমাজের অবহেলিত শ্রেণির শক্তি জাগরণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের বেশিরভাগ কাজ করে যারা – কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ – তাদেরই সমাজ “ছোটলোক” বলে অবজ্ঞা করে আসছে। এই মানুষগুলো সরল মনের হলেও সমাজের অত্যাচারে নিজেদের ছোট ভাবে। নজরুল জোর দিয়ে বলেন, সব মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি এবং সমান অধিকারের দাবিদার। তিনি গান্ধীজির উদাহরণ দিয়ে দেখান, কীভাবে নিম্নশ্রেণির মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে তাদের শক্তি জাগিয়ে তোলা যায়। জাতিভেদ, ধর্মভেদ ভুলে মানুষকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেন তিনি। নজরুলের মতে, এই উপেক্ষিত মানুষরাই দেশের আসল শক্তি, তাদের জাগরণ ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। তিনি শেষ করেন এক জাগরণের ডাক দিয়ে – “কিসের দুঃখ, কিসের লজ্জা, কিসের ভয়?” – এই প্রশ্নের মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা করতে চান।

উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন বিষয়বস্তু

(সহজ ভাষায় রূপান্তর)

ভূমিকা:
আমাদের দেশের একটি বড় শক্তি সব সময় উপেক্ষিত হয়ে আসছে—সেই শক্তি হলো গরিব, সাধারণ মানুষ, যাদেরকে সমাজ “ছোটলোক” বলে অবজ্ঞা করে। এই মানুষগুলোর উপরই দেশের প্রায় সব কাজ নির্ভর করে, কিন্তু তাদের আমরা কখনো মূল্য দিইনি। আজ দেশকে জাগ্রত করতে হলে প্রথমে এই উপেক্ষিত মানুষগুলোর শক্তিকে জাগাতে হবে।

সমাজের বিভেদ:
আমরা সমাজে দুই ধরনের মানুষ দেখি—একদল ভদ্রলোক, আরেকদল যাদেরকে “ছোটলোক” বলা হয়। ভদ্রলোকেরা নিজেদের বড় মনে করেন, কিন্তু আসলে এই “ছোটলোক”-দের হৃদয় অনেক বেশি পরিষ্কার, সরল। তারা এত নিচু হয়ে গেছে কারণ সমাজ তাকে চিরদিন ঠেলে দিয়েছে। তারা নিজেরাও ভুলে গেছে যে তারাও মানুষ, স্রষ্টার সৃষ্টি, ভদ্রলোকদের মতো তারাও সমান অধিকার পাওয়ার যোগ্য।

শোষণের চিত্র:
যখন কেউ এই অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে, ভদ্রলোকের দল তাকে আরও চেপে ধরে। এই জুলুমের কারণে দেশের আসল শক্তি—এই সাধারণ মানুষ—পিষ্ট হয়ে গেছে। তাদের অবহেলা করেই দেশ আজ পিছিয়ে আছে। দেশ মানে তো সব মানুষ মিলে, কিন্তু আমরা যদি সবাইকে সমানভাবে না দেখি, তাহলে দেশ কখনো উন্নতি করবে না।

গান্ধীর উদাহরণ:
মহাত্মা গান্ধী কীভাবে এই “ছোটলোক”-দের শক্তি জাগিয়েছিলেন? তিনি তাদের সঙ্গে মিশেছেন, তাদের দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন, তাদের মতো করেই জীবনযাপন করেছেন। তিনি জাত-পাত ভুলে তাদের “ভাই” বলে ডেকেছেন। তাই তো গোটা ভারত তাঁর পিছনে চলতে প্রস্তুত ছিল। যদি তুমিও এভাবে তাদের ডাকো, তাদের শক্তিকে জাগিয়ে তোলো, তাহলে তারা একদিনেই এমন কাজ করে দেবে যা তুমি শত বছরেও পারোনি।

জাতিভেদের অসারতা:
তুমি কেন মনে করো যে জন্ম দিয়েই তুমি বড়? যদি তুমি একজন “ছোটলোক”-এর ঘরে জন্মাতে, তাহলে এই অবহেলা কেমন লাগত? ভেবে দেখো—তোমার আর তাদের আত্মা তো একই ঈশ্বরের দেওয়া। ধর্ম বা বর্ণ দিয়ে মানুষকে ছোট করা যায় না।

জাগরণের ডাক:
এসো, আজ আমরা এই উপেক্ষিত ভাইদের হাত ধরি। তাদের সঙ্গে এক হয়ে দাঁড়াই। তাদের দুঃখে ভাগীদার হই। তাদের মাঝে লুকিয়ে থাকা শক্তিকে জাগিয়ে তুলি। তারা যদি জেগে ওঠে, তাহলে এই দেশে এক নতুন যুগ আসবে। তাদের জন্যই তো এই দেশ। তাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নতি অসম্ভব।

শেষ কথাঃ
“কিসের দুঃখ? কিসের লজ্জা? কিসের ভয়?”—এই ডাক দিয়েই শুরু হোক নতুন যুগের পথচলা। উপেক্ষিতরা আজ জেগে উঠুক, তাদের শক্তিতে দেশ আলোকিত হোক!

আরও পড়ুনঃ শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব মূলভাব ও বিষয়বস্তু

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top