রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নতুন দেশ’ কবিতা একটি দারুণ কল্পনা এবং অজানা, অপরিচিত জায়গার প্রতি আকর্ষণ প্রকাশ করে। নিচে নতুন দেশ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেয়া হলো।
নতুন দেশ কবিতার মূলভাব
একটি ছোট্ট শিশু নদীর ঘাটে গিয়ে দেখে যে সেখানে একটি নৌকা বাঁধা আছে। যখন সে নদীতে নাইতে যায়, তখন দেখে যে নৌকাটি জলের ঢেউয়ে দুলছে। একদিন সে আবার নদীর ঘাটে গিয়ে দেখে যে নৌকাটি মাঝনদীতে ভাঁটার টানে দূরে চলে যাচ্ছে। শিশুটি ভাবে, নৌকাটি হয়তো কোনো নতুন দেশে যাচ্ছে। তার মনে প্রশ্ন জাগে, সেই দেশ কেমন হবে? সেখানকার মানুষ কেমন হবে?
সে কল্পনা যে দূর সাগরের পারে নারিকেলের বন আছে, পাহাড়ের চূড়া নীল আকাশে মিশে আছে, এবং বরফের পাহাড় ডিঙিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। সে কল্পনা করে যে নতুন বনে নতুন ফুল ও ফল আছে, এবং সেখানে নতুন নতুন পশু দলে দলে ঘুরে বেড়ায়। শিশুটি ভাবে, রাতের শেষে নৌকাটি হয়তো নতুন দেশে পৌঁছবে। তার মনে প্রশ্ন জাগে, তার বাবা কেন আপিসে যায়? কেন সে নতুন দেশে যায় না? শিশুটি নতুন দেশের সৌন্দর্য ও আনন্দের স্বপ্ন দেখে এবং তার মনে অজানার প্রতি এক গভীর কৌতূহল জাগে।
নতুন দেশ কবিতার ব্যাখ্যা
লাইন | ব্যাখ্যা |
---|---|
“নদীর ঘাটের কাছে নৌকো বাঁধা আছে, নাইতে যখন যাই, দেখি সে জলের ঢেউয়ে নাচে।” | এই লাইনগুলোতে কবি নদীর ঘাটের কাছে বাঁধা নৌকোর কথা বলছেন। যখনই শিশুটি সেখানে যায়, নৌকোটা জলতলে ঢেউয়ের সঙ্গে নাচতে দেখে আনন্দিত হয়। এখানে কবি প্রকৃতির সজীবতা ও তার গতিশীলতা অনুভব করছেন। |
“আজ গিয়ে সেইখানে দেখি দূরের পানে মাঝনদীতে নৌকো, কোথায় চলে ভাঁটার টানে।” | এই লাইনগুলোতে শিশু দেখে, নৌকোটা মাঝ নদীতে চলে গেছে এবং তার চলার পথ সম্পর্কে সে জানেন না। ভাঁটার টানে নৌকোটা দূরের দিকে চলে যাচ্ছে, যা তাঁর কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এখানে কবি অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করছেন। |
“জানি না কোন দেশে পৌঁছবে শেষে, সেখানে কেমন মানুষ থাকে কেমন বেশে।” | শিশুর মন অজানার প্রতি আগ্রহী, তিনি জানেন না নৌকোটি কোন দেশে পৌঁছাবে, সেখানে কেমন মানুষ থাকবে এবং তারা কেমন থাকবে। এই লাইনটি আমাদের জীবনের অজানা দিকের প্রতি আগ্রহ এবং অন্বেষণকে ফুটিয়ে তোলে। |
“থাকি ঘরের কোণে, সাধ জাগে মোর মনে, অমনি করে যাই ভেসে, ভাই, নতুন নগর বনে।” | এই অংশে কবি ব্যক্ত করছেন যে, শিশু ঘরের মধ্যে থাকলেও তার মন নতুন স্থান, নতুন পরিবেশের প্রতি আকর্ষিত হয়। তার ইচ্ছা জাগে নতুন নগর, নতুন দেশ দেখার। এটি পরিবর্তন ও নতুনত্বের প্রতি আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। |
“দুর সাগরের পারে, জলের ধারে ধারে, নারিকেলের বনগুলি সব দাঁড়িয়ে সারে সারে।” | এখানে শিশু একটি সুন্দর ও স্বপ্নময় দৃশ্যের বর্ণনা দিচ্ছেন, যেখানে সাগরের ধারে নারিকেলের বন দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে এমন একটি পৃথিবীর কল্পনা করে যেখানে শান্তিপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর। |
“পাহাড়-চূড়া সাজে নীল আকাশের মাঝে, বরফ ভেঙে ডিঙিয়ে যাওয়া কেউ তা পারে না-যে।” | এই লাইনগুলিতে শিশু পাহাড়ের চূড়া, নীল আকাশের মাঝে সাজানো দৃশ্যের কথা বলে। বরফ ভেঙে, পাহাড়ে চড়ে যাওয়ার চিন্তা প্রকাশ করে, যা একরকম অসম্ভব বা কঠিন কিন্তু ঐতিহাসিক ও স্বপ্নময়। |
“কোন সে বনের তলে নতুন ফুলে ফলে নতুন নতুন পশু কত বেড়ায় দলে দলে।” | এখানে শিশু নতুন বনের কথা বলে, যেখানে নতুন ফুল ফোটে, ফল ধরে এবং নতুন পশুর দল ভ্রমণ করে। সে এমন এক নতুন পৃথিবী বা বাস্তবতার চিত্র কল্পনা করছেন যেখানে সবকিছু নতুন ও অজানা। |
“কত রাতের শেষে নৌকো যে যায় ভেসে। বাবা কেন আপিসে যায়, যায় না নতুন দেশে?” | এই অংশে শিশু তাঁর নিজের আগ্রহ এবং কৌতূহল ব্যক্ত করে, যেখানে সে প্রশ্ন করে কেন তার বাবা নতুন দেশে না গিয়ে আপিসে যান। এটি একটি প্রতীকী প্রশ্ন, যা জীবনযাত্রা ও দৈনন্দিন জীবনের সাথে খোঁজের তুলনা করে। |