জসীমউদ্দীনের ‘আমার বাড়ি’ কবিতাটি গ্রামবাংলার সহজ-সরল জীবনের চিত্র তুলে ধরেছে। কবিতায় কল্পনার বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে, তাকে গ্রামের বাড়িতে এনে অতিথি আপ্যায়নের সুন্দর দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নিচে আমার বাড়ি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেওয়া হল।
আমার বাড়ি কবিতার মূলভাব
কবি তাঁর প্রিয়জনকে (ভোমর বা মৌমাছি বলে ডাকছেন) তাঁর বাড়িতে আসতে বলছেন। তিনি বলছেন, “আমার বাড়িতে এসো, আমি তোমাকে চিড়ে, খই, কলা আর দই দিয়ে আপ্যায়ন করবো। আমার বাড়ির পাশে আম-কাঁঠালের বন, সেখানে তুমি শান্তিতে শুয়ে থাকবে। আমি তোমাকে চাঁদের আলোয় সাজাবো, আর তারা ফুলের মালা পরিয়ে দেব।” তারপর তিনি বলছেন, “সকালে গাভীর দুধ দোহনের শব্দে তুমি ঘুম থেকে উঠবে, আর সারাদিন আমরা একসাথে খেলবো। আমার বাড়ির ডালিম গাছে ফুল ফুটেছে, আর দিঘির জলে হাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে। এই পথ ধরে এসো, আর মৌরি ফুলের গন্ধ উপভোগ করো।”
আমার বাড়ি কবিতার ব্যাখ্যা
লাইন | ব্যাখ্যা |
---|---|
আমার বাড়ি যাইও ভোমর, বসতে দেব পিঁড়ে, জলপান যে করতে দেব শালি ধানের চিঁড়ে। | কবি তার প্রিয় বন্ধুকে মৌমাছির (ভোমর) মতো কল্পনা করে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। অতিথিকে বসার জন্য পিঁড়ে (মাটিতে বসার মাদুর) দেওয়া হবে এবং জলপান বা খাবারের জন্য শালি ধানের চিঁড়ে পরিবেশন করবেন। এটি গ্রামীণ আতিথেয়তার একটি সরল ও আন্তরিক চিত্র। |
শালি ধানের চিঁড়ে দেব, বিন্নি ধানের খই, বাড়ির গাছের কবরী কলা, গামছা-বাঁধা দই। | এখানে কবি বলছেন যে, অতিথিকে শালি ধানের চিঁড়ে, বিন্নি ধানের খই (এক ধরনের ভাজা চাল), বাড়ির গাছের কবরী কলা (একটি বিশেষ ধরনের কলা), এবং গামছায় বাঁধা দই দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। এটি গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি চিত্র, যা অতিথির প্রতি আন্তরিক ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। |
আম-কাঁঠালের বনের ধারে শুয়ো আঁচল পাতি, গাছের শাখা দুলিয়ে বাতাস করব সারা রাতি। | কবি তার অতিথিকে আম-কাঁঠালের বনের পাশে বিশ্রামের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সেখানে অতিথির জন্য শাড়ির আঁচল বিছিয়ে দেওয়া হবে শোয়ার জন্য। কবি আরও বলেন, গাছের শাখা দুলিয়ে বাতাসে আরাম দেওয়া হবে। এটি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক মনোরম চিত্র। |
চাঁদমুখে তোর চাঁদের চুমো মাখিয়ে দেব সুখে, তারা ফুলের মালা গাঁথি, জড়িয়ে দেব বুকে। | অতিথির মুখকে চাঁদের মতো সুন্দর মনে করে কবি বলেন, তিনি অতিথির মুখে চাঁদের চুম্বন মাখিয়ে দেবেন। তার পর, তারা ফুল দিয়ে মালা গেঁথে সেই মালা অতিথির গলায় পরিয়ে দেবেন। এটি অতিথিকে বিশেষ ভালোবাসা ও সম্মান জানানোর প্রতীক। |
গাই দোহনের শব্দ শুনি জেগো সকাল বেলা, সারাটা দিন তোমায় লয়ে করব আমি খেলা। | কবি বলেন, সকালে গরু দোহনের শব্দে অতিথিকে ঘুম থেকে জাগানো হবে। এরপর সারাটা দিন অতিথির সঙ্গে সময় কাটানো হবে, আনন্দ আর খেলায় মেতে ওঠা হবে। এটি অতিথির প্রতি আন্তরিকতা ও উচ্ছ্বাসের প্রকাশ। |
আমার বাড়ি ডালিম গাছে ডালিম ফুলের হাসি, কাজলা দিঘির কাজল জলে হাঁসগুলি যায় ভাসি। | কবি তার বাড়ির ডালিম গাছের ফুলকে হাসির মতো সুন্দর বলে বর্ণনা করছেন। কাজলা দিঘির কালো জলে হাঁসেরা সাঁতার কাটে, যা একটি শান্তিপূর্ণ এবং সুন্দর দৃশ্য। এটি গ্রামীণ জীবনের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছে। |
আমার বাড়ি যাইও ভোমর, এই বরাবর পথ, মৌরি ফুলের গন্ধ শুঁকে থামিও তব রথ। | কবি আবারও ভোমরকে (অতিথিকে) তার বাড়িতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন এবং বলছেন যে, মৌরি ফুলের মিষ্টি গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে যেন তারা তাদের পথচলা না থামায়। এটি অতিথিকে সঠিক পথ নির্দেশনা এবং বাড়ির প্রতি টান দেখানোর প্রতীক। |