মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “তৈলচিত্রের ভূত” গল্পটি একটি রহস্যময় ও মনস্তাত্ত্বিক কাহিনি, যা শুরুতে অতিপ্রাকৃতের আভাস দিয়ে শুরু হয় এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। নিচে তৈলচিত্রের ভূত মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
তৈলচিত্রের ভূত মূলভাব
গল্পের প্রধান চরিত্র নগেন। নগেন তার মামার মৃত্যুর পর তার তৈলচিত্রের সামনে প্রণাম করতে গিয়ে যখন অন্ধকারে ছবিটি স্পর্শ করে, তখন তাকে একটি শক্তিশালী ধাক্কা দেওয়া হয়, যেন কেউ তাকে সরিয়ে দিচ্ছে। এই ঘটনাটি বারবার ঘটতে থাকে, বিশেষ করে যখন সে অন্ধকারে ছবিটি স্পর্শ করে। নগেন ভাবে যে তার মামার আত্মা তাকে শাস্তি দিচ্ছে, কারণ সে জীবিতকালে মামার প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দেখায়নি। নগেন এই ঘটনায় এতটাই ভীত হয়ে পড়ে যে সে পরাশর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। গল্পের শেষে পরাশর ডাক্তার আবিষ্কার করেন যে তৈলচিত্রের পেছনে একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। নগেনের মামার তৈলচিত্রটি একটি রুপার ফ্রেমে বাঁধানো ছিল, এবং এই ফ্রেমের সাথে দুটি ইলেকট্রিক বাল্ব সংযুক্ত করা হয়েছিল। এই বাল্বগুলি রাত্রে জ্বলত এবং যখন নগেন অন্ধকারে ছবিটি স্পর্শ করত, তখন বিদ্যুতের শক অনুভব করত। এই শকই তাকে ধাক্কা দেওয়ার অনুভূতি দিত।
তৈলচিত্রের ভূত বিষয়বস্তু
গল্পের প্রধান চরিত্র নগেন, একজন কলেজ পড়ুয়া যুবক, যার মামা সম্প্রতি মারা গেছেন। নগেনের মামা একজন বড়লোক কিন্তু কৃপণ ব্যক্তি ছিলেন। মামার মৃত্যুর পর নগেন জানতে পারে যে মামা তাকে টাকা দিয়ে গেছেন, যা তার মনে অনুতাপ ও লজ্জার সৃষ্টি করে। কারণ, নগেন জীবিতকালে মামার প্রতি ভান করে ভক্তি ও শ্রদ্ধা দেখিয়েছিল, কিন্তু আসলে সে মামাকে ভালোবাসত না।
নগেনের মনে হয় যে মামার আত্মা তাকে শাস্তি দিচ্ছে। এক রাতে, নগেন মামার তৈলচিত্রের সামনে প্রণাম করতে গিয়ে ছবিটি স্পর্শ করলে একটি শক্তিশালী ধাক্কা অনুভব করে এবং মেঝেতে পড়ে যায়। এই ঘটনাটি বারবার ঘটতে থাকে, বিশেষ করে যখন সে অন্ধকারে ছবিটি স্পর্শ করে। নগেন ভাবে যে মামার আত্মা তাকে শাস্তি দিচ্ছে কারণ সে জীবিতকালে মামার প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা দেখায়নি।
নগেন এই ঘটনায় এতটাই ভীত হয়ে পড়ে যে সে পরাশর ডাক্তার-এর শরণাপন্ন হয়। পরাশর ডাক্তার প্রথমে নগেনের কথায় বিশ্বাস করতে চান না, কিন্তু পরে তিনি নিজে লাইব্রেরিতে গিয়ে ছবিটি পরীক্ষা করেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে ছবিটির ফ্রেমে দুটি ইলেকট্রিক বাল্ব সংযুক্ত রয়েছে, যা রাত্রে জ্বলে এবং বিদ্যুতের শক সৃষ্টি করে। এই শকই নগেনকে ধাক্কা দেওয়ার অনুভূতি দিত।
পরাশর ডাক্তার নগেনকে এই ব্যাখ্যা দেন এবং তাকে বুঝান যে ভূত বলে কিছু নেই। নগেনের ভয় ও সংশয় দূর হয়ে যায়, এবং সে বুঝতে পারে যে তার মামার আত্মা তাকে শাস্তি দিচ্ছে না। গল্পটি শেষ হয় নগেনের ভয় কাটিয়ে ওঠার মাধ্যমে।