চিঠি বিলি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন

রোকনুজ্জামান খানের ‘চিঠি বিলি’ কবিতাটির মাধ্যমে আমাদের এক মজার কল্পনার জগতে নিয়ে গেছেন, যেখানে মাছ, ব্যাঙ, আর নৌকা মানুষের মতো কাজ করছে। নিচে চিঠি বিলি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন দেয়া হল।

চিঠি বিলি কবিতার মূলভাব

রোকনুজ্জামান খানের ছড়া ‘চিঠি বিলি’-তে এক আনন্দময় ও কল্পনাপ্রসূত জগৎ তুলে ধরা হয়েছে। ছড়াটি শুরু হয় একটি ব্যাঙকে ঘিরে, যে ছাতা মাথায় চিঠি বিলি করতে বেরিয়েছে। বাইরে বৃষ্টি টাপুস টুপুস করে পড়ছে। নদী পার হতে গিয়ে ব্যাঙ চিংড়ি মাছের বাচ্চার চালানো একটি নৌকায় ওঠে। নৌকার মাঝি হিসেবে চিংড়ি মাছের বাচ্চাকে বেশ দক্ষ দেখা যায়। চিঠির মধ্যে নানা মজার তথ্য প্রকাশ পায়। খলসে মাছ লিখেছে, সন্ধ্যার রোদে তার চোখ ঝলসে গেছে। অন্যদিকে, কাতলা মাছ চিঠিতে জানায় যে এ বছর পুরো দেশে প্রচুর বৃষ্টি হবে। এসব তথ্য শুনে ব্যাঙ নিজের জন্য একটি ছাতা কিনে নেয়, কারণ চিংড়ি মাঝির খেয়া নৌকার ওপর তার আর কোনো ভরসা নেই।

চিঠি বিলি কবিতার ব্যাখ্যা

লাইনব্যাখ্যা
ছাতা মাথায় ব্যাঙ চলেছে চিঠি বিলি করতে,
টাপুস টুপুস ঝরছে দেয়া ছুটছে খেয়া ধরতে।
ব্যাঙটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে—চিঠি বিলি করতে বেরিয়েছে। কিন্তু বাইরে তো টাপুস-টুপুস বৃষ্টি পড়ছে। তাই বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ভয়ে সে ছাতা মাথায় দিয়েছে। আবার চিঠি বিলি করার জন্য তাকে নদী পার হতে হবে, তাই সে দ্রুত খেয়া ধরার জন্য ছুটছে।
খেয়ানায়ের মাঝি হলো চিংড়ি মাছের বাচ্চা,
দু চোখ বুজে হাল ধরে সে জবর মাঝি সাচ্চা।
ব্যাঙটি যখন নদী পার হতে নৌকায় উঠল, তখন দেখা গেল নৌকার মাঝি হলো একটি ছোট চিংড়ি মাছ। তবে চিংড়ি মাছের বাচ্চা হলেও সে খুব সাহসী এবং দক্ষ। চোখ বন্ধ করেও সে খুব ভালোভাবে নৌকা চালাতে পারে। এটি দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ছোট হলেও সে কাজের ক্ষেত্রে দারুণ পারদর্শী।
তার চিঠিও এসেছে আজ লিখছে বিলের খলসে,
সাঁঝের বেলার রোদে নাকি চোখ গেছে তার ঝলসে।
চিংড়ি মাঝির কাছেও একটি চিঠি এসেছে, যা লিখেছে বিলের খলসে মাছ। চিঠিতে খলসে মাছ জানিয়েছে, সন্ধ্যার রোদে তার চোখ ঝলসে গেছে। এটি একটি মজার কল্পনা, যেখানে মাছের জীবনের ছোটখাটো সমস্যাগুলোও মানুষের মতো গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
নদীর ওপার গিয়ে ব্যাঙা শুধায় সবায়: ভাইরে,
ভেটকি মাছের নাতনি নাকি গেছে দেশের বাইরে?
নদীর ওপারে গিয়ে ব্যাঙটি সবাইকে জিজ্ঞেস করে, “ভেটকি মাছের নাতনি নাকি বিদেশে গেছে?” এই লাইনটি শিশুসুলভ কৌতূহল আর কল্পনার মজার দিকটি তুলে ধরেছে। জলজ প্রাণীদের মধ্যেও যে এমন খবর আদান-প্রদান হতে পারে, সেটি খুবই আনন্দদায়ক।
তার যে চিঠি এসেছে আজ লিখছে বিলের কাতলা,
এবার সারা দেশটি জুড়ে নামবে দারুণ বাদলা।
এবার ব্যাঙের নিজের জন্যও একটি চিঠি এসেছে, যা লিখেছে বিলের কাতলা মাছ। চিঠিতে বলা হয়েছে, খুব শিগগিরই সারা দেশে প্রবল বৃষ্টি হবে। এটি প্রকৃতির একটি মজার চিত্র তুলে ধরে, যেখানে প্রাণীরাও আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানায়।
তাই তো নিলাম ছাতা কিনে আসুক এবার বর্ষা,
চিংড়ি মাঝির খেয়া না আর ছাতাই আমার ভরসা।
চিঠি পড়ে ব্যাঙ বুঝতে পারে যে বৃষ্টি আসতে চলেছে। তাই নিজের সুরক্ষার জন্য সে একটি ছাতা কিনে নেয়। কারণ খেয়া নৌকায় ভরসা করে সে আর ঝুঁকি নিতে চায় না। এখানে ছাতার গুরুত্ব এবং আত্মনির্ভরশীলতার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

Related Posts

Leave a Comment