কাবুলিওয়ালা গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “কাবুলিওয়ালা” গল্পটি একটি হৃদয়স্পর্শী গল্প, যা একটি ছোট মেয়ে মিনি এবং একজন কাবুলিওয়ালা (আফগান ফল বিক্রেতা) রহমতের মধ্যে গড়ে ওঠে। নিচে কাবুলিওয়ালা গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

কাবুলিওয়ালা গল্পের মূলভাব

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “কাবুলিওয়ালা” গল্পটি একটি ছোট মেয়ে মিনি এবং একজন আফগান ফল বিক্রেতা রহমতের বন্ধুত্বের গল্প। মিনি খুব কথা প্রিয় এবং সারাদিন নানা প্রশ্ন করে। একদিন সে রাস্তায় রহমতকে দেখে ডাক দেয়, এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রহমত মিনিকে বাদাম, কিসমিস দেয়, আর মিনি তার সাথে গল্প করে। রহমতের নিজের দেশ আফগানিস্তানে একটি ছোট মেয়ে আছে, যাকে সে খুব মিস করে। মিনির মধ্যে সে তার নিজের মেয়ের ছবি দেখে। একদিন রহমতের একটি ঝগড়া হয়, এবং সে জেলে চলে যায়। অনেক বছর পর রহমত জেল থেকে ফিরে এসে দেখে মিনি বড় হয়ে গেছে এবং তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। রহমত মিনিকে দেখতে চায়, কিন্তু মিনি এখন আর সেই ছোট মেয়েটি নেই। রহমত মিনির বাবার কাছে তার নিজের মেয়ের হাতের ছাপ দেখায়, যা সে সবসময় বুকে রাখে।

কাবুলিওয়ালা গল্পের বিষয়বস্তু

পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে মিনি। মিনি খুব কথা প্রিয়, সারাদিন নানা প্রশ্ন করে আর কথা বলে। একদিন মিনি জানালা দিয়ে দেখে একজন কাবুলিওয়ালা (আফগানিস্তান থেকে আসা একজন ফল বিক্রেতা) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। মিনি তাকে ডাকতে শুরু করে, “কাবুলিওয়ালা, ও কাবুলিওয়ালা!” কাবুলিওয়ালার নাম রহমত। সে মিনির ডাকে সাড়া দেয় এবং তার দিকে এগিয়ে আসে।

মিনি প্রথমে রহমতকে দেখে ভয় পায়, কারণ সে মনে করে রহমতের ঝুলিতে হয়তো ছোট ছোট বাচ্চা থাকে! কিন্তু ধীরে ধীরে মিনি এবং রহমতের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রহমত মিনিকে বাদাম, কিসমিস দেয়, আর মিনি তার সাথে গল্প করে। তাদের মধ্যে মজার কথোপকথন হয়। রহমত জিজ্ঞাসা করে, “তুমি শ্বশুরবাড়ি যাবে?” মিনি জবাব দেয়, “তুমি যাবে?” রহমত হাসতে হাসতে বলে, “আমি শ্বশুরকে মারব!” এতে মিনি খুব হাসে।

রহমতের নিজের দেশ আফগানিস্তানে তারও একটি ছোট মেয়ে আছে। সে তার মেয়েকে খুব মিস করে। মিনির মধ্যে সে তার নিজের মেয়ের ছবি দেখে। রহমত কলকাতায় ফল বিক্রি করে টাকা জমায়, যাতে সে তার মেয়ের কাছে ফিরে যেতে পারে।

কিন্তু একদিন রহমতের জীবনে বড় একটি বিপর্যয় আসে। এক ব্যক্তির সাথে তার ঝগড়া হয়, এবং রহমত তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এর ফলে রহমতকে জেলে যেতে হয়। অনেক বছর পর রহমত জেল থেকে মুক্তি পায়।

রহমত জেলে থাকার সময় মিনি ধীরে ধীরে বড় হয়ে যায়। যখন রহমত জেল থেকে ফিরে আসে, তখন মিনির বিয়ে ঠিক হয়। রহমত মিনিকে দেখতে চায়, কিন্তু মিনি এখন আর সেই ছোট মেয়েটি নেই। সে এখন বড় হয়েছে, বিয়ের পোশাক পরেছে।

রহমত মিনিকে দেখে বুঝতে পারে যে তার নিজের মেয়েও এখন বড় হয়ে গেছে। সে খুব কষ্ট পায়, কারণ সে তার মেয়েকে অনেক বছর ধরে দেখেনি। রহমত মিনির জন্য কিছু বাদাম ও কিসমিস এনেছিল। কিন্তু সে এখন বুঝতে পারে যে, মিনি আর সেই ছোট মেয়েটি নেই।

রহমত মিনির বাবাকে একটি ছোট কাগজ দেখায়, যেখানে তার নিজের মেয়ের হাতের ছাপ আছে। সে এই ছাপটি সবসময় নিজের বুকে রাখে। মিনির বাবা রহমতের কষ্ট বুঝতে পারেন এবং তাকে কিছু টাকা দেন, যাতে সে তার নিজের মেয়ের কাছে ফিরে যেতে পারে।

Related Posts

Leave a Comment