আবুবকর সিদ্দিকের ‘লখার একুশে’ গল্পটি ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত। গল্পটি একটি অসহায়, গরিব ও বোবা শিশু লখার জীবন সংগ্রাম এবং দেশপ্রেমের চিত্র তুলে ধরে। নিচে লখার একুশে গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
Table of Contents
লখার একুশে গল্পের মূলভাব
গল্পটি একটি গরিব ও অসহায় বোবা ছেলে লখার জীবন নিয়ে। লখার বাবা নেই, আর তার মা ভিক্ষা করে সংসার চালায়। লখার জীবন খুবই কষ্টের— সে ফুটপাতে শোয়, ঠান্ডা-গরম সহ্য করে, ক্ষুধার্ত থাকে, আর দিন কাটায় গুলি খেলে, কাগজ কুড়িয়ে এবং মারামারি করে। কিন্তু লখার মধ্যে একটি জেদ ও সাহস আছে। সে খুবই দুষ্টু আর বুদ্ধিমান।
লখা রাতের অন্ধকারে একা একা রেললাইন পার হয়, বনজঙ্গলে ঢোকে, কাঁটায় পা ফুটে, গায়ে আঁচড় লাগে, কিন্তু থামে না। সে একটি গাছে উঠে সেখানে থোকা থোকা রক্তলাল ফুল পাড়ে। তারপর সকালে শহিদ মিনারে যাওয়া মিছিলে যোগ দেয়। সবাই গায়ে গরম কাপড় পরে আছে, কিন্তু লখার গায়ে কিছুই নেই। তার হাতে শুধু সেই রক্তলাল ফুলের গুচ্ছ। সে বোবা, তাই গান গাইতে পারে না, শুধু ‘আঁ আঁ’ শব্দ করে। কিন্তু তার চোখে-মুখে ভাষা আন্দোলনের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ফুটে ওঠে।
লখার একুশে গল্পের বিষয়বস্তু
লখা একটি গরিব ও অসহায় বোবা ছেলে। তার বাবা নেই, এবং তার মা ভিক্ষা করে সংসার চালায়। লখার জীবন খুবই কষ্টের। সে ফুটপাতে শোয়। এই কঠিন জীবনযাপনের কারণে লখার শরীরে প্রায়ই জ্বর ও কাশি হয়। লখা দিন কাটায় গুলি খেলে, ছেঁড়া কাগজ কুড়িয়ে এবং খাবারের দোকানের এঁটো পাতায় চেটে। রাতে মায়ের পাশে শুয়ে সে ক্ষুধার কষ্ট ভুলে যায়।
রাতের অন্ধকারে লখা মায়ের পাশ থেকে উঠে পড়ে। মা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। লখা চুপি চুপি পা ফেলে ধোঁয়া-ধোঁয়া কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে যায়। সে রেললাইনের দিকে এগিয়ে যায়, যেখানে দুটি রেললাইন মরা সাপের মতো শুয়ে আছে। লখা ইটের টুকরো দিয়ে রেললাইনে ঠুকঠুক শব্দ করে এবং কান পেতে শোনে। সে মনে মনে গানের সুর শুনতে পায়, যা তাকে অনুপ্রাণিত করে।
লখা রেললাইন পার হয়ে একটি নিচু খাদ অতিক্রম করে। সেখানে গড়িয়ে পড়লে তার হাত-পা ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু লখা খুব সাবধানে খাদ পার হয়। তারপর সে একটি অন্ধকার বনজঙ্গলে প্রবেশ করে। সেখানে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক এবং গাছের ছায়া তাকে ভয় দেখায়। হঠাৎ তার পায়ে বাবলা গাছের কাঁটা বিঁধে যায়, যার কারণে সে প্রচণ্ড ব্যথা পায়। কিন্তু লখা কাঁদতে কাঁদতে আবার পথ চলা শুরু করে, কারণ তার সময় খুব কম।
লখা একটি গাছের কাছে পৌঁছায়, যার ডালে ডালে রক্তলাল ফুল ফুটে আছে। দিনের বেলায় রেললাইন থেকে দাঁড়িয়ে সে এই ফুলগুলোকে অবাক হয়ে দেখত। এখন সে চায় সেই ফুলগুলো পেড়ে নিতে। লখা গাছে চড়তে শুরু করে, এবং গাছের কাঁটায় তার গা-হাত-পা ছিঁড়ে যায়, রক্ত বের হয়। কিন্তু লখা থামে না। সে গাছের মগডালে পৌঁছে সেখানে থোকা থোকা রক্তলাল ফুল পাড়ে। তারপর সেগুলো নিয়ে মাটিতে নেমে আসে।
সকালে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরি শুরু হয়। শত শত মানুষ হাতে ফুল নিয়ে শহিদ মিনারের দিকে এগিয়ে যায়। লখাও এই মিছিলে যোগ দেয়। সবাই গায়ে গরম কাপড় পরে আছে, কিন্তু লখার গায়ে কিছুই নেই। তার হাতে শুধু সেই রক্তলাল ফুলের গুচ্ছ। লখা বোবা, তাই সে গান গাইতে পারে না, শুধু ‘আঁ আঁ’ শব্দ করে। কিন্তু তার চোখে-মুখে ভাষা আন্দোলনের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ফুটে ওঠে।