সৈয়দ মুজতবা আলীর “নীলনদ আর পিরামিডের দেশ” ভ্রমণকাহিনীতে মিশরের মরুভূমি, কায়রোর রাতের জীবন, নীলনদের রূপ এবং পিরামিডের কথা তুলে ধরা হয়েছে। নিচে নীলনদ আর পিরামিডের দেশ মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।
নীলনদ আর পিরামিডের দেশ মূলভাব
সৈয়দ মুজতবা আলীর “নীলনদ আর পিরামিডের দেশ” ভ্রমণকাহিনীতে মিশরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তিনি মিশরের মরুভূমির বিশালতা এবং রাতের চাঁদের আলোয় এর রহস্যময় রূপ বর্ণনা করেছেন। নীলনদের শান্ত ও নিস্তব্ধ দৃশ্য তাঁকে মুগ্ধ করেছে, যা মিশরের জীবনরেখা হিসেবে কাজ করে। কায়রো শহরের রাতের জীবনও তাঁর লেখায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, যেখানে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে এবং নাইটক্লাবে মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়। তিনি মিশরীয় খাবারের স্বাদ নিয়েছেন, কিন্তু তাঁর মনে পড়েছে বাংলাদেশের ঝোল-ভাতের কথা। পিরামিডের বিশালতা এবং ইতিহাস নিয়ে তিনি বিস্তারিত লিখেছেন, যেখানে পিরামিড তৈরি করতে ২৩ লক্ষ পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রাচীন মিশরের ফারাওরা তাদের দেহ মমি বানিয়ে পিরামিডের ভিতরে রাখতেন, যাতে পরলোকে অনন্ত জীবন পেতে পারেন। মিশরের মসজিদগুলোর সৌন্দর্য এবং কারুকার্য তাঁকে মুগ্ধ করেছে, যা পৃথিবীবিখ্যাত। তিনি মিশরের বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন।
নীলনদ আর পিরামিডের দেশ বিষয়বস্তু
সৈয়দ মুজতবা আলীর “নীলনদ আর পিরামিডের দেশ” একটি সুন্দর ও প্রাণবন্ত ভ্রমণকাহিনী, যেখানে তিনি মিশরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে খুব সহজ ও হাস্যরসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। বইটির শুরুতে তিনি মিশরের মরুভূমি এবং নীলনদের প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। মরুভূমির বিশালতা এবং রাতের চাঁদের আলোয় এর রহস্যময় রূপ তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তিনি উটের কাফেলা (ক্যারাভান) এবং মরুভূমির মধ্যে গাড়ি চলার সময়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যেখানে তিনি উটের সবুজ চোখ দেখে ভেবেছিলেন, এগুলো ভূতের চোখ!
কায়রো শহরের রাতের জীবনও তাঁর লেখায় খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। কায়রো রাতেও জেগে থাকে, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, সিনেমা হল, নাইটক্লাব—সব কিছুতে মানুষের ভিড়। তিনি শহরের রাস্তায় বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের মিশ্রণ দেখেছেন, যেমন নিগ্রো, সুদানবাসী এবং আরবরা। মিশরীয় খাবারের স্বাদ নিয়েও তিনি লিখেছেন, কিন্তু তাঁর মনে পড়েছে বাংলাদেশের ঝোল-ভাতের কথা!
পিরামিড মিশরের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা। মুজতবা আলী পিরামিডের বিশালতা এবং ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। পিরামিড এত বড় যে, এর উচ্চতা (প্রায় ৫০০ ফুট) চোখে দেখেও বোঝা কঠিন। তিনি বলেছেন, পিরামিড তৈরি করতে ২৩ লক্ষ পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল, যার প্রতিটি পাথরই বিশাল আকারের। প্রাচীন মিশরের ফারাও (সম্রাট)রা বিশ্বাস করতেন যে মৃত্যুর পর তাদের দেহ সংরক্ষিত থাকলে তারা পরলোকে অনন্ত জীবন পাবেন। তাই তারা নিজেদের দেহকে মমি বানিয়ে পিরামিডের ভিতরে রাখতেন।
মিশরের মানুষের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতিকেও মুজতবা আলী খুব কাছ থেকে দেখেছেন। মিশরে নিগ্রো, সুদানবাসী, আরবসহ বিভিন্ন জাতির মানুষ বাস করে। তিনি তাদের চেহারা, পোশাক এবং আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন। মিশরের মসজিদগুলো খুব সুন্দর এবং কারুকার্যময়। তিনি বলেছেন, পৃথিবীর অনেক মানুষ শুধু এই মসজিদগুলো দেখতেই মিশরে আসেন।