হারুন হাবীবের ‘পিতৃপুরুষের গল্প’ গল্পটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত। গল্পের মূল চরিত্র অন্তু এবং তার মামা কাজলের মধ্য দিয়ে লেখক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিচে পিতৃপুরুষের গল্প মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেয়া হল।
পিতৃপুরুষের গল্প মূলভাব
হারুন হাবীবের ‘পিতৃপুরুষের গল্প’ গল্পটি অন্তু নামের একটি ছোট ছেলে এবং তার কাজল মামার মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ—কে ফুটিয়ে তোলে। কাজল মামা, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, অন্তুকে ঢাকা শহরে ঘুরিয়ে নিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির শহিদ মিনারে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ভাষা আন্দোলনের গল্প শোনান, কিভাবে ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকদের উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে বাঙালিরা রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং অনেক তরুণ-তরুণী প্রাণ দিয়েছিলেন। এই আন্দোলনই পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল, যেখানে বাঙালিরা পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। গল্পটি আমাদের ইতিহাসের ত্যাগ, সংগ্রাম ও বীরত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং নতুন প্রজন্মকে তাদের পিতৃপুরুষদের গল্প জানার ও শ্রদ্ধা জানানোর গুরুত্ব শেখায়।
পিতৃপুরুষের গল্পের বিষয়বস্তু
পিতৃপুরুষের গল্পের মূল চরিত্র হলো অন্তু এবং তার কাজল মামা। অন্তু একজন ছোট ছেলে, আর কাজল মামা তার মামা, যিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। গল্পটি শুরু হয় অন্তুর অপেক্ষা দিয়ে। সে তার মামার জন্য অপেক্ষা করছে, কারণ মামা তাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তুর মা তাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে মামাকে চিঠি লিখে ঢাকায় আসতে বলো, কারণ মামা গ্রামে থাকতে পছন্দ করেন এবং ঢাকায় খুব একটা আসেন না।
কাজল মামা শেষ পর্যন্ত ঢাকায় আসেন এবং অন্তুকে নিয়ে শহর ঘুরতে বের হন। তারা একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শহিদ মিনার এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখেন। এই সময় কাজল মামা অন্তুকে বাংলাদেশের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান।
ভাষা আন্দোলনের গল্প:
কাজল মামা অন্তুকে বলেন যে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন। পাকিস্তানি শাসকরা চেয়েছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বানাতে, কিন্তু বাঙালিরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। এই প্রতিবাদে অনেক ছাত্র-যুবক প্রাণ হারান। তাদের স্মৃতিতে শহিদ মিনার তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধের গল্প:
কাজল মামা আরও বলেন যে ভাষা আন্দোলনই পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালিরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করে। কাজল মামা নিজেও সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি অন্তুকে বলেন যে মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি যুদ্ধই ছিল না, এটি ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সংগ্রাম।
গল্পের শেষ অংশ:
শহিদ মিনারে গিয়ে কাজল মামা এবং অন্তু এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান। কাজল মামা অন্তুকে বলেন যে এই শহিদেরা আমাদের পিতৃপুরুষ, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন। গল্পটি শেষ হয় অন্তুর আগ্রহে, যে সে আরও গল্প শুনতে চায় এবং কাজল মামা তাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি আরও গল্প শোনাবেন।