হাসেম খানের “ছবির রং” লেখাটি প্রকৃতি, শিল্প এবং সংস্কৃতিতে রঙের ভূমিকা নিয়ে একটি সুন্দর আলোচনা। লেখাটি পাঠককে রঙের জগতে নিয়ে যায় এবং প্রকৃতি ও শিল্পের মাধ্যমে রঙের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। নিচে ছবির রং মূলভাব ও বিষয়বস্তু – হাসেম খান দেয়া হল।
ছবির রং মূলভাব
বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জীবন নানা রঙে ভরা। লাল, নীল, হলুদ—এই মৌলিক রং মিশে নতুন নতুন রং তৈরি করে, যেমন সবুজ, কমলা, বেগুনি। প্রকৃতিতেও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে রঙের খেলা চলে।
গ্রীষ্মে গাছপালা শুকিয়ে যায়, কিন্তু লাল-সবুজ-হলুদের বাহারি ফল আসে।
বর্ষায় বৃষ্টি পড়ে, চারপাশ সবুজে ভরে যায়, কদম ফুল ফোটে।
শরতে নীল আকাশে সাদা মেঘ, কাশফুলের দোলা।
হেমন্তে ধানক্ষেতে সোনালি রঙের ঢেউ খেলে।
শীতে সরিষার ক্ষেত হলুদ, শিমুল-পলাশের লাল ছড়িয়ে পড়ে।
বসন্তে ফুল, পাখি, প্রজাপতি আর মানুষের পোশাকে রঙের উচ্ছ্বাস।
এই বৈচিত্র্য বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতিতেও দেখা যায়—নকশিকাঁথা, শখের হাঁড়ি, হাতপাখায় রঙের ছোঁয়া থাকে। বাংলার শিশুরা উজ্জ্বল রঙে ছবি আঁকে, আর আমাদের শিল্পীদের রঙের ব্যবহার বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত!
ছবির রং গল্পের বিষয়বস্তু
একটি সাদা কাগজ সামনে রেখে ভাবো, তুমি কি আঁকবে? কলম বা পেনসিল দিয়েও আঁকা যায়, কিন্তু যদি রং থাকে, তাহলে তো আরও সুন্দর হয়! লাল, নীল, হলুদ, সবুজ—এই সব রং মিশিয়ে কাগজে এক দারুণ ছবি আঁকা যায়।
কিন্তু জানো কি? সব রঙের একটা মূল উৎস আছে। তিনটি রং—লাল, নীল আর হলুদ—এই তিনটিকে বলে মৌলিক রং। এগুলো থেকে আরও অনেক রং তৈরি করা যায়। যেমন, নীল আর হলুদ মিশিয়ে সবুজ হয়, লাল আর নীল মিশিয়ে হয় বেগুনি, লাল আর হলুদ মিশিয়ে হয় কমলা। এইভাবে রং একটার সঙ্গে আরেকটা মিশে নতুন রং তৈরি করে।
এখন ভাবো, প্রকৃতিতেও ঠিক এমন রঙের খেলা চলে!
গ্রীষ্মকাল: চারদিকে রোদ আর গরম। গাছের সবুজ রং যেন মলিন হয়ে যায়, মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যায়। কিন্তু তখনই আম, জাম, লিচু, তরমুজের মতো রঙিন ফল আসে—লাল, হলুদ, সবুজ! আর হঠাৎ কালো মেঘ জমে, বজ্রপাত হয়, তারপর ঝুম বৃষ্টি!
বর্ষাকাল: আকাশ থেকে ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়ে, মাঠ-নদী পানিতে ভরে যায়। গাছেরা নতুন সবুজ রং ফিরে পায়। বর্ষার কদম ফুল হয় সাদা আর কমলা, যা বর্ষার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।
শরৎকাল: আকাশ ঝকঝকে নীল, আর সেখানে তুলার মতো সাদা মেঘ ভাসে। নদীর ধারে কাশফুল ফোটে, যা বাতাসে দোল খায়—সাদা আর সবুজের মিশেলে এক দারুণ দৃশ্য তৈরি হয়!
হেমন্তকাল: ধানক্ষেতে হলুদের ছোঁয়া লাগে, মাঠজুড়ে সোনালি রঙের ঢেউ খেলে। কৃষকরা ফসল কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
শীতকাল: শীতের কুয়াশায় চারপাশে ধোঁয়াটে ভাব থাকে। গাছের পাতা ঝরে যায়, কিন্তু তখনই নানা রঙের ফুল ফোটে—শিমুলের লাল, সরিষার ক্ষেতের হলুদ! মানুষও নানা রঙের শীতের পোশাক পরে। অতিথি পাখির পালকেও থাকে বাহারি রঙ।
বসন্তকাল: এটি রঙের ঋতু! কৃষ্ণচূড়া, পলাশের লাল-কমলা ফুলে চারপাশ ঝলমলে হয়ে ওঠে। পাখিরা রঙিন পালকে সাজে, প্রজাপতির দল উড়ে বেড়ায়। মানুষও বাসন্তী রঙের পোশাক পরে আনন্দ করে।
বাংলাদেশের প্রকৃতি এত সুন্দর, এত রঙিন বলেই, এখানকার মানুষও রঙের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। নকশিকাঁথা, পুতুল, শখের হাঁড়ি—সব জায়গায় উজ্জ্বল রং ব্যবহার হয়। বাংলার শিশুরাও ছবি আঁকতে ভালোবাসে, আর তাদের ছবিতে থাকে উজ্জ্বল, গাঢ় রং, যা সহজেই আলাদা করা যায়। আমাদের শিল্পীরাও সাহসীভাবে রং ব্যবহার করে, তাই বাংলার চিত্রশিল্প আজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়!