পাখির কাছে ফুলের কাছে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

আল মাহমুদের “পাখির কাছে ফুলের কাছে” কবিতাটিতে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান যেমন নারকেল গাছ, চাঁদ, পাহাড়, দিঘি, ফুল এবং পাখির মাধ্যমে কবি তার মনের কথা প্রকাশ করেছেন। নিচে পাখির কাছে ফুলের কাছে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা করে দিলাম।

পাখির কাছে ফুলের কাছে কবিতার মূলভাব

এক রাতে কবি বাইরে বেরোলেন। আকাশে ডাবের মতো গোল চাঁদ উঠেছে। শহর শান্ত, যেন কেঁপে উঠছে। কবি মসজিদের মিনার, গির্জা আর পাহাড় দেখলেন। পাহাড় তাকে ডাকল, “আয় আয়।” লালদিঘির পাড়ে জোনাকিরা জমায়েত হয়েছে। দিঘির জল কলকল করে বলল, “এসো, আমরা না-ঘুমানোর দল। আজ ফুলের ঝোপে কবিতা হবে।” ফুল ও পাখিরা হেসে উঠল, “কবিতা হবে!” কবি তখন তার পকেট থেকে কবিতা লেখার কাগজ বের করলেন এবং পাখি ও ফুলের কাছে তার মনের কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং তার মনের ভাবনা পাখি ও ফুলের সাথে শেয়ার করলেন।

পাখির কাছে ফুলের কাছে কবিতার ব্যাখ্যা

লাইনব্যাখ্যা
নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল
ডাবের মতো চাঁদ উঠেছে ঠান্ডা ও গোলগাল।
কবি দেখলেন, নারকেল গাছের মাথার ওপরে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। চাঁদটি দেখতে ঠিক যেন একটি ডাবের মতো—গোলগাল এবং ঠান্ডা। এই চিত্রকল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।
ছিটকিনিটা আস্তে খুলে পেরিয়ে গেলাম ঘর
ঝিমধরা এই মস্ত শহর কাঁপছিলো থরথর।
কবি ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। শহরটি তখন খুবই শান্ত, যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে। এই লাইনে শহরের নিস্তব্ধতা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে এক ধরনের আবেগময় অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে।
মিনারটাকে দেখছি যেন দাঁড়িয়ে আছেন কেউ,
পাথরঘাটার গির্জেটা কি লাল পাথরের ঢেউ?
কবি মসজিদের মিনার দেখে মনে করলেন, যেন কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। পাথরঘাটার গির্জাটি লাল পাথরের ঢেউয়ের মতো মনে হলো। এখানে স্থাপত্যের সৌন্দর্য এবং প্রকৃতির সাথে তার মিল ফুটে উঠেছে।
দরগাতলা পার হয়ে যেই মোড় ফিরেছি বাঁয়
কোত্থেকে এক উটকো পাহাড় ডাক দিলো আয় আয়।
কবি দরগাতলা পার হয়ে বাঁ দিকে মোড় নিলেন। হঠাৎ একটি পাহাড় তাকে ডাক দিল, “আয় আয়।” এই লাইনে প্রকৃতির সাথে কবির মমত্ববোধ এবং আবেগ প্রকাশ পেয়েছে।
পাহাড়টাকে হাত বুলিয়ে লালদিঘির ঐ পাড়
এগিয়ে দেখি জোনাকিদের বসেছে দরবার।
কবি পাহাড়টিকে হাত বুলিয়ে দিলেন এবং লালদিঘির পাড়ে গেলেন। সেখানে জোনাকিরা জমায়েত হয়ে বসে আছে, যেন তারা একটি রাজসভা করেছে। এখানে প্রকৃতির প্রাণবন্ততা ফুটে উঠেছে।
আমায় দেখে কলকলিয়ে দিঘির কালো জল
বললো, এসো, আমরা সবাই না-ঘুমানোর দল।
দিঘির জল কলকল শব্দ করে কবিকে ডাকল, “এসো, আমরা সবাই না-ঘুমানোর দল।” এখানে প্রকৃতি কবির সাথে কথা বলে এবং তাকে আনন্দের আমন্ত্রণ জানায়।
পকেট থেকে খোলো তোমার পদ্য লেখার ভাঁজ
রক্তজবার ঝোঁপের কাছে কাব্য হবে আজ।
দিঘির জল কবিকে বলল, “তোমার পকেট থেকে কবিতা লেখার কাগজ বের করো। আজ রক্তজবা ফুলের ঝোপের কাছে কবিতা হবে।” এখানে প্রকৃতি কবিকে কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা দেয়।
দিঘির কথায় উঠল হেসে ফুল পাখিরা সব
কাব্য হবে, কাব্য হবে -জুড়লো কলরব।
দিঘির কথায় ফুল এবং পাখিরা হেসে উঠল। তারা বলল, “কবিতা হবে, কবিতা হবে!” সবাই মিলে আনন্দে কলরব করতে লাগল। এখানে প্রকৃতির সাথে কবির একাত্মতা এবং আনন্দ প্রকাশ পেয়েছে।
কী আর করি পকেট থেকে খুলে ছড়ার বই
পাখির কাছে, ফুলের কাছে মনের কথা কই।
কবি তার পকেট থেকে কবিতা লেখার বই খুললেন এবং পাখি ও ফুলের কাছে তার মনের কথা বলতে শুরু করলেন। এখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং কবির মনের ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে।

Related Posts

Leave a Comment