আহসান হাবীবের “মেলা” কবিতাটিতে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান (ফুল, পাখি, আকাশ, সাগর) শিশু-কিশোরদের মধ্যে আনন্দ এবং ভালোবাসার সঞ্চার করে। নিচে মেলা কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেওয়া হল।
মেলা কবিতার মূলভাব
আহসান হাবীবের “মেলা” কবিতাটি প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে গভীর বন্ধনকে তুলে ধরে। কবি ফুল, পাখি, আকাশ ও সাগরের মেলার মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনা করেন। কিন্তু এর চেয়েও বড় মেলা হলো মানুষের মেলা, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের। তারা প্রকৃতি থেকে ভালোবাসা, উদারতা ও সুর শেখে এবং তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয়। কবি এই মেলাকে একটি খেলার সাথে তুলনা করেন, যেখানে সবাই মিলে একটি সুন্দর বাগান গড়ে তোলে। এই বাগানে বিভিন্ন ফুল ও পাখি থাকে, যাদের গান আলাদা হলেও সুর এক। এভাবে কবি বিশ্বব্যাপী সম্প্রীতি ও একতার বার্তা দেন। কবিতাটির মূল কথা হলো—প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে, এবং সবাই মিলে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারে।
মেলা কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“ফুলের মেলা পাখির মেলা আকাশ জুড়ে তারার মেলা” | কবি বলছেন, প্রকৃতিতে নানা রকমের মেলা চলছে। বাগানে ফুল ফুটে আছে, গাছে গাছে পাখিরা ডাকছে, আর রাতের আকাশে অসংখ্য তারা জ্বলজ্বল করছে। এগুলো সবই প্রকৃতির মেলা, যা আমাদের চোখে সৌন্দর্য আর মনে আনন্দ দেয়। |
“রোজ সকালে রঙের মেলা সাত সাগরে ঢেউয়ের মেলা” | প্রতিদিন সকালে সূর্যের আলোয় আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে, যেন এক রঙের মেলা। আর সাগরের ঢেউগুলোও যেন খেলায় মেতে ওঠে, সেগুলোও এক ধরনের মেলা। |
“আর এক মেলা জগৎ জুড়ে ভাইরা মিলে বোনরা মিলে” | প্রকৃতির মেলার পাশাপাশি আরও একটি মেলা আছে, তা হলো মানুষের মেলা। এই মেলাটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। এখানে ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে একসাথে আনন্দ করে। |
“রং কুড়িয়ে বেড়ায় তারা নীল আকাশের অপার নীলে” | শিশু-কিশোররা প্রকৃতির সৌন্দর্য থেকে আনন্দ কুড়িয়ে নেয়। তারা আকাশের নীল রঙের মতো উদার ও মুক্ত মনে জীবনযাপন করে। প্রকৃতির রঙ ও সৌন্দর্য তাদের মনে খুশি আনে। |
“ফুলের বুকে সুবাস যতো বুকে-মুখে নেয় মেখে তাই” | ফুলের সুগন্ধ যেমন মিষ্টি ও পবিত্র, তেমনি শিশু-কিশোররা ফুলের মতো পবিত্র ও সুন্দর হয়। তারা ফুলের সুবাস থেকে ভালোবাসা ও পবিত্রতা শেখে। |
“পাখির কলকণ্ঠ থেকে সুর তুলে নেয় তারা সবাই” | পাখির গান যেমন মিষ্টি ও সুরেলা, তেমনি শিশু-কিশোররা পাখির গান থেকে সুর ও আনন্দ শেখে। তারা প্রকৃতির সুরকে নিজেদের জীবনে মেলায়। |
“রাতের পথে পাড়ি যখন তারার অবাক দীপ জ্বেলে নেয়” | রাতের আকাশে তারা জ্বলে, যেন তারা আলোর দীপ জ্বালিয়ে আমাদের পথ দেখায়। শিশু-কিশোররা এই তারার আলো থেকে আশা ও স্বপ্ন শেখে। |
“রোজ সকালের আকাশপথে আলোর পাখি দেয় ছেড়ে দেয়” | প্রতিদিন সকালে সূর্য উঠে আকাশ আলো করে। এই আলো যেন একটি পাখি, যা শিশু-কিশোরদের নতুন দিনের আশা ও শক্তি দেয়। |
“সাত সাগরের বুক থেকে নেয় ঢেউ তুলে নেয় ভালোবাসার” | সাগরের ঢেউ যেমন অনন্ত ও গতিশীল, তেমনি শিশু-কিশোররা সাগর থেকে ভালোবাসা ও উদারতা শেখে। তারা এই ভালোবাসাকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয়। |
“জগৎ জুড়ে যায় ছড়িয়ে যায় ছড়িয়ে আলো আশার” | শিশু-কিশোররা তাদের আনন্দ, ভালোবাসা ও আশাকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়। তারা বিশ্বকে আলো ও আশায় ভরিয়ে তোলে। |
“ভালোবাসার এই যে মেলা এই যে মেলা ভাই-এর বোনের” | এই মেলা হলো ভালোবাসার মেলা, যেখানে ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে একসাথে আনন্দ করে। |
“এই যে হাসি এই যে খুশি এই যে প্রীতি লক্ষ মনের” | এই মেলায় সবাই হাসি-খুশিতে মেতে ওঠে। এখানে লক্ষ মানুষের মনে প্রীতি ও ভালোবাসা থাকে। |
“কচি সবুজ ভাই-বোনদের আপনি গড়া এই যে মেলা” | কবি বলছেন, এই মেলা হলো কচি সবুজ ভাই-বোনদের মেলা, যারা নতুন ও তরুণ। তারা এই মেলাকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলে। |
“এই মেলাতে নিত্য চলে আপনার মনে একটি খেলা” | এই মেলায় প্রতিদিন একটি খেলা চলে, যা মানুষের মনে আনন্দ ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে। |
“সারা বেলাই সেই এক খেলা গড়বে নতুন একটি বাগান” | এই খেলার মাধ্যমে শিশু-কিশোররা একটি নতুন বাগান গড়ে তোলে, যেখানে অনেক ফুল ও পাখি থাকবে। এটি একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর প্রতীক। |
“অনেক ফুল আর অনেক পাখি সব পাখিদের আলাদা গান” | এই বাগানে বিভিন্ন ফুল ও পাখি থাকবে, যাদের গান আলাদা আলাদা। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতীক। |
“তার মাঝেই একটি সুরে সবারই সুর যায় মিলিয়ে” | সব পাখির গান আলাদা হলেও তারা একই সুরে মিলে যায়। তেমনি পৃথিবীর সব মানুষ আলাদা হলেও তাদের হৃদয়ে একই স্বপ্ন থাকে—ভালোবাসা ও শান্তির স্বপ্ন। |
“এক দুনিয়া এক মানুষের স্বপ্ন তারা যায় বিলিয়ে” | কবি বলছেন, পৃথিবীর সব মানুষ একই স্বপ্ন দেখে—একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ন। তারা এই স্বপ্নকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। |